মাছের টান

 (১)
মাছের টান
তারাপদ মাঝি

আমি তখন বোধহয় এলেভেন-এ পড়ি।খুব মনে পড়ে মে মাসের দিকে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম।সময়টা হবে ১৯৮৫ সালের জুন বা জুলাই মাস। মা আমায় বললেন-“চল বায়া তোর মাউসিদানু ঘুরি আইসি। অনেক দিন তোর বড় মাউসিকে দেখিনি।তুই আবার পড়াশুনায় মন দুবু। আর সময় পাবু নি। ওই সময় ঘুরিয়া আইসি চল”।
মাসির বাড়ির কথা শুনে আমার মন আনন্দে ভরে উঠলো।আনন্দের অনেকগুলো কারন আছে।প্রথমত আমাদের অভাবের সংসার। জমি জায়গা নেই। বাবা একা দিনমজুরি করেন। তিনি আমাদের পাঁচজনের পেট চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এই নিয়ে প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে অনবরত ঝগড়া লেগেই আছে। বাধ্য হয়ে মা সিন্ধান্ত নিলেন যে কয়েকদিন মাসির বাড়ি ঘুরে আসবেন। এতে বাবা খানিকটা দু-চারদিনের খোরাকি সাশ্রয় করতে পারবেন। গরীব মানুষের দুদিনের খোরাকি সাশ্রয় যে কতবড় উপকার হয়, তা গরীব মানুষ ছাড়া কারও বোঝার উপায় নাই।
দ্বিতীয়ত আমার বড় মাসির একমাত্র ছেলে অবন্তি দাদার সান্নিধ্য লাভ।তিনি অত্যন্ত ভালোবাসেন আমায়।আমি অবন্তিদার সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছি। আবার কখনও লথিয়ান দ্বীপের নদীতে মাছ ধরতে গেছি।দুর থেকে কুমীরকে ঢিল ছুড়ে মেরে আনন্দ আস্বাদন করেছি।কখনো দন দিয়ে নদীতে মাছ ধরেছি। সেই রোমাঞ্চের টানে আমার মাসির বাড়ি যেতে খুব ভালোবাসতাম। তাই মা যাওয়ার প্রস্তাব দিতে আমি আর না করলাম না।
মাসির বাড়ি পৌছাতেই অবন্তিদা আমার গলা জড়িয়ে ধরলেন। বললেন-“ভাই আসসু(এসেছিস)? খুব ভালো হইচে। কাল আমানে(আমরা) লথিয়ান নদীতে মাছ ধরতে যাবা। দন ফেলিকি মাছ ধরবা”। আমার মনও আনন্দে নেচে উঠলো। বেশ আনন্দ পাওয়া যাবে।আমরা সন্ধ্যের দিকে মাসির বাড়ি পৌছেছিলাম।
(২)
তখনতো এলেকট্রিক গ্রামে পৌছায় নি। কেরোসিনের আলোয় বাড়ি আলোকিত করা হতো। গ্রামে সন্ধ্যের দিকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে অজস্র জোনাকি পোকা গ্রামে গ্রামে তার বুকের আলো বিলিয়ে আলোকিত করে রেখেছে।
পরের দিন আমি,অবন্তিদা আর পাড়ার গুরুপদ নামে একটি ছেলে নদীতে মাছ ধরতে চললাম। আমাদের সঙ্গে আছে তিনখানা দন, মাছের টোপ কেঁচো আর মাছ রাখার খালি।সঙ্গে নিলাম মুড়ি আর নারকোল। আমরা সকাল ন’টার সময় নদীর পাড়ে উঠলাম এটাকে ঠিক নদীর মোহনা বলা যায়। কারণ আমরা যেখানে গেছি সে স্থান থেকে বঙ্গোপসাগর মাত্র দু-তিন কিলোমিটার দূরে।যতদূর চোখ যায় শুধু জল আর জল। মাঝে মাঝে গুটি কতক নৌকা মাছ ধরার জন্য যাতায়াত করছে। তাদের কোনোটা পালতুলা আবার কোনোটা ইঞ্জিন নৌকা।খুব দুরে একচিলতে সবুজ আভা দেখা যায়,যকে সবাই লথিয়ান দ্বীপ বলে।নদীর কুলু রব, ঢেউয়ের নাচন,বুনো হাস,গাঙ শালিক আর সাদা বকের ঝাঁক মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়।
আমরা যেখানে পাড়ে উঠলাম সেই পাড় থেকে নদীর জল প্রায় পাঁচসাত ফুট দূরে। এখন তেমন কুমীরের ভয় নেই। মানুষের অত্যাচারেই হোক, বা পরিবেশগত কারণেরই হোক গত একবছর ধরে কুমীর এই নদীতে অবলুপ্ত হয়েছে। সুতরাং নিশ্চিন্তে মাছ ধরা যায়।
আমরা প্রত্যেকে যে যার দন নিলাম। দন জিনিষটা অতি সাধারন। দ’শ গ্রামের মতো একটি লোহার সিঙ্কারের সঙ্গে প্রায় পাঁচ ছ’শ ফুট দড়ির একপ্রান্তে বাঁধতে হয়। সিঙ্কার থেকে এক ফুট পর থেকে ছ’ইঞ্চি দূরত্বে মোট তিন থেকে পাঁচটি বঁশি তিন ইঞ্চি ঝুল রেখে বাঁধা হয়। দড়ির অপর প্রান্ত যে দন ফেলে তার হাতে থাকে বা কোন খুঁটিতে বাঁধা থাকে। এবার দনটির সিঙ্কারকে মাথার উপর কয়েক পাক ঘুরিয়ে নদীর জলে এক দেড়’শ ফুট দূরে ফেলে হয়। দনের বাকি দড়ি সঞ্চয়ে রাখা হয়। যদি কোন বড় মাছ দনে লাগে, তখন তাকে খেলিয়ে ক্লান্ত করে তোলার জন্য অবশিষ্ট দড়ি কাজে লাগে।দনের দড়ি তাই প্রায় ৬.০০ মিলিমিটার মোটা রাখা হয়।

(৩)
যাইহোক আমরা একখানা কেওড়া গাছের তলায় ডেরা বাঁধলাম। সমস্ত মালপত্র রেখে দনে টোপ পরাতে লাগলাম। তারপর তিনজনে দন নদীতে ফেললাম।আমি আর অবন্তিদা দু’জনে দনের প্রান্তটিকে খুঁটিতে আটকালাম। কিন্তু গুরুপদ তার দনটি নিজের কমরে বাঁধলো।
অবন্তিদা বললেন-“গুরুপদ, তুই দনের দড়িটা কমরে বাঁধুডু কেনি।সবদিন সমান যায় না। যদি কুন বড় মাছ লাগি যায়, তাহলে তুই বাঁচবু ভাবচু। তুই দড়িটা খুঁটিরে বাঁধি রাখ”।
গুরুপদ বললে-“না কাকা, আমার কমরে থাউ। কিছু অসুবিধা হবে নি। তাছাড়া এখন অষ্টমীর জোয়ার। বেশী জোয়ার হবে নি। মাছ লাগার সম্ভাবনা কম।আমাদের কপাল ভালা নাই হিলে বা মাছের কপাল খারাপ নাই হিলে আমাদের দনে মাছ পড়বে নি। তুমি এসব চিন্তা করড কেনি”?
আমরা জলযোগ করতে বসলাম।বেশ আয়েশ করে নারকোল কোরা আর মুড়ি নিয়ে খেতে বসলাম। বেশ খেতে লাগছে। সেই স্বাদ এখনও যেন মুখে লেগে রয়েছে।মুড়ি খাওয়া শেষ হলো। তারপর গল্পে গল্পে আরও ঘন্টা দুয়েক কেটে গেল। তবুও মাছের দেখা সাক্ষাৎ নাই। আমরা হতাস হলাম। জোয়ার শেষ হয়ে ভাটা হতে চললো। কিন্তু মাছ আর আসে না। এমনি দিনে আগে আমরা বেলে, শিমুল কাঁটা, ভেটকি, ভোলা, তপসে আর টেঙরা মাছ ধরে খালি ভর্তি করে আনতাম।আজ এসবের কিছুই এলো না!
গুরুপদ তখন বলতে শুরু করেছে-“ এখুন দিনকাল বদলিচে কাকু। নদীতে আর আগের মতন মাছ নাই।আর কিছুদিন পর মাছ আমানকের স্বপ্ন হবে। মানুষ বাঁচবে কি করি কে জানে”?
ঠিক এমন সময় গুরুপদর দনের দড়িতে টান পড়লো এবং দড়ি বিদ্যুৎ গতিতে নদীর জলে ডুবতে লাগলো। অবন্তিদা অভিজ্ঞ লোক। অনেক মৎস শিকারের অভিযানের অভিজ্ঞতা তার আছে। দড়ির গতি দেখে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে দনে বড় মাছ গেঁথেছে।তিনি লাফ দিয়ে দড়িটা ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মাছের এত দুরন্ত টান যে কিছুতেই দড়ি ধরে রাখতে পারছেন না।হাতে প্যাঁচ দিয়ে ধরলে হাতখানা কেটে যাবেই। এতক্ষনে দাদার হুস হলো যে দড়িটা গুরুপদর
(৪)
কমরে বাঁধা আছে। এ মাছের যা টান, তাতে গুরুপদ সমেত টেনে নিয়ে পালাবে। তখন গুরুপদর মৃত্যু অবধারিত।
দাদা আমাকে চিৎকার করে বললেন-“নারান, আগে গুরুপদর কমর থেকে দড়ি খুলি দে। নাইলে গুরুপদ মারা যাবে”।
আমি গুরুপদর কমরে দড়ি খুলতে গিয়ে দেখি সে তাড়াহুড়ো করে দড়ি খুলতে গিয়ে কমরে গিঁট লাগিয়ে বসেছে।সে দড়ি খোলাও যায় না আবার ছেড়াও যায় না। কারন দড়িটা লাইলনের দড়ি। হাতের কাছে দড়ি কেটে ফেলার মতো কোন অস্ত্র ছিল না যে দড়িটা কেটে ফেলা যায়।
এদিকে দাদা চিৎকার করে বলছেন-“নারান বড্ড বড় মাছের টান। আমি কিছুতেই দড়ি আটকিতে পা্রিডি না।তুই গুরুপদর দড়ি খুলি দিচুতো”?
“না দাদা, দড়ি খুলা যায় নি। দড়ি ওর কমরে গিঁট লাগিচে।কি করবা কুন বুঝতে পারি নি”।
সব্বনাশ, কি হবে তবে। দাদা তাঁতে দড়ি কামড়ে ধরে তা আটকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু মাছের টানে, দাদার দাঁতও ভেঙ্গে গেল। মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে। সেই অবস্থায় দাদা চিৎকার করতে লাগলেন-“কে আছো আমানকে বাঁচাও। আমরা বড্ড বিপদে পড়িচি”। আমিও একই ভাবে চিৎকার করতে লাগলাম।ভয়ে আমার শরীর কাঁপছে। আমাদের চিৎকার গগন বিদীর্ন হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। নদীতে অনেক নৌকা ছিল। তারা সবাই মাছ ধরতে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু আমাদের চিৎকার শুনে তারা আমাদের দিকে নৌকা নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। ততক্ষণে দড়ি শেষ হয়ে গেছে। দাদার হাতও কেটে গিয়ে রক্ত বেরচ্ছে। দাদার দাঁতের রক্ত আর হাতের রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যন্ত্রনায় জ্ঞান হাতিয়ে ফেললেন। আমি কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়লাম। গুরুপদ “আমায় বাঁচাও আমায় বাঁচাও” বলে চিৎকার করতে করতে লাগলো। এমন সময় মাছের দুরন্ত টানে গুরুপদকে নদীতে টেনে নিয়ে গেল এবং মাছের টানে জলে যা ডুবে গেল, আর কোন হদিস পাওয়া গেল না।

(৫)
ততক্ষণে কয়েকটা নৌকা আমাদের কাছে এসে গেল। আমি সমস্ত বিষয়টা তাদের বললাম। তাদের কয়েকজন দাদাকে শুশ্রুষা করতে লাগলেন। আর দুটি ইঞ্জিন নৌকা গুরুপদর সন্ধানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। ইতিমধ্যে দাদার জ্ঞান ফিরে এসেছে। দাদাও বললেন- “আমিও সঙ্গে যাবা”। আমি,দাদা একটি নৌকায় উঠলাম। দুটি নৌকার ঘন্টা খানিক খোঁজাখুজির পর তীর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গুরুপদর প্রানহীন দেহটা দেখতে পাওয়া গেল।মাছের টানে তার শরীরটা একবার ডুবছে আর ভাসছে। আমরা দুজনে আর থাকতে পারলাম না। উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলাম।
যে নৌকায় আমরা ছিলাম, তার মাঝি মনিন্দ্রনাথ বেরা অত্যন্ত অভিজ্ঞ লোক। মাছ ধরায় একদম ওস্তাদ। বঙ্গোপসাগরে অকূলে অনেক দুসাহসিক মৎসশিকার অভিযানের অভিজ্ঞতা তার আছে। তিনি বললেন-“তুমানে একদম কাঁদব নি। যা হবার হইচে। গুরুপদকে তো আর পাওয়া যাবে নি। কিন্তু কি মাছটা আছে, তাকে দেখতে হবে। একটু কায়দা করি ধরতে হবে।লাশটাকে টানলে মাছ আবার বুঝতে পারবে। তখন আবার টানবে। তাতে মুশকেল হবে।তার চাইতে কইডি শুন”। তার পর তিনি তার নৌকার একজন সাকরেদকে বললেন-“এয় পরা, তুই হাইলটা ধর। আমি জলে নাবিডি”।এই বলে তিনি আমাদের দনের মতো প্রায় দু’শ ফুট দড়ি,একটি ছুরি আর একখানা ফুট দশেক বাঁশ নিয়ে জলে ঝাঁপ দিলেন। তারপর দড়িটা কোমরে গুঁজে বাঁশের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ঢেউয়ে দুলতে দুলতে লাশের কাছে পৌঁছে গেলেন। আমরা দেখতে পেলাম প্রথমে তিনি লাসের কোমরের দড়িটা কেটে দিয়ে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে, সঙ্গে  নিয়ে যাওয়া দড়িটা কাটা দড়িটার সঙ্গে বেঁধে দিলেন।ঐ দড়ির অপর প্রান্তটি নৌকার বরাসের সঙ্গে বাঁধা।এবার তিনি আমাদের ডাকলেন। পরা অর্থাৎ পরমেশ্বরবাবু ধীরে ধীরে নৌকা নিয়ে মনিবাবুর কাছে গেলাম। তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে গুরুপদর লাশটা নৌকায় তুলে দিলেন।দেখলাম গুরুপদর কোমরে দড়িটা কেটে বসে গেছে। জল খেয়ে পেট একদম ফুলে গেছে। দম আটকে মরে যাওয়ার জন্য চোখদুটো কোটর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সে লাসের দিকে তাকানো যায় না। এমন সময় মনীবাবু নৌকায় উঠে এলেন। তিনি উঠেই লাসটাকে নৌকার এককোনায় সরিয়ে রাখলেন এবং দুটি পাটের চট দিয়ে শরীরটা ঢাকা দিলেন।
(৬)
এবার মনীবাবু বললেন-“দেখি তো ঘাতক কেডা”।তিনি মাছের দড়িটা ধরলেন। আর পরমেশ্বরবাবুকে বললেন-“পরা, তুই নৌকার ডবল সিলিন্ডার চালি দে। মাছ যুমা টায়বে,সুমা নৌকা ছুটা। দেখি শালা কত ছুটতে পারে”। শুরু হলো মাছে মানুষে লড়াই। এক এক সময় মনে হয়, ইঞ্জিনে নৌকা চলছে না। মাছ মনে হয় নৌকাটাকে ছুটিয়ে নিয়ে চলছে।প্রায় ঘন্টা খানিক পর মাছে মানুষে লড়াই শেষ হলো।মাছ বাবাজী ক্লান্ত হয়ে জলে ভেসে উঠলো। মাছের চেহারা দেখে আমাদের মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। মনীবাবু চিৎকার করে বললেন-“পরা দুটা আঁকড়ি লি আয়। পরমেশ্বরবাবু একলাফে নৌকার খোল থেকে দুটি আঁকড়ি বের করে আনলেন।দেখলাম প্রায় সাতফুট লম্বা আঁকশি মতো লোহার যন্ত্র। আঁকশির প্রান্তভাগ অত্যন্ত সূঁচালো। সহজে মাছের গায়ে গেঁথে যেতে পারে। তারপর দাদা আহত হাত নিয়েই ধরলেন দন আর মনীবাবু এবং পরমেশ্বরবাবু ধরলেন আঁকড়ি। একসঙ্গে দুজনে মাছের গায়ে গেঁথে দিলেন সেই বজ্র আঁকড়ি।মাছে মানুষে সে কি ধ্বস্তা ধ্বস্তি। অবশেষে মাছ নৌকায় উঠলো। নদীর একপ্রকার কাঁটা মাছ। প্রায় সাত ফুট লম্বা। ওজন কম বেশী এক কুইন্টাল।
মাছটি ধরার পর সব রহস্যের অবসান হলো। আমরা সাধারনত নদী তীর থেকে যে দোন ফেলি তাতে দড়িটা ৬.০০ মি.মি হলেও বঁশি বাঁধা হয় ১.০০ মি.মি সুতো দিয়ে এবং বঁশি হয় ১.০০ মি.মি এর যা ১.০০-১.৫০ ইঞ্চি লম্বা। কারণ তীরে বেশী বড় মাছ আসে না। খুব বেশী হলে ২-৩ কেজি ওজনের মাছ পাওয়া যেতে পারে এবং ঐ সাইজের মাছ ঐ বঁশিতে উঠে আসে। কিন্তু এর থেকে বড় মাছ কালে ভদ্রে আসতে পারে। কারণ নদীটার মোহনা বঙ্গোপসাগর। তখন বড় মাছ দোন থেকে বঁশি ছিড়ে নিয়ে পালায়। কিন্তু গুরুপদর ক্ষেত্রে তা হয় নি কেন এখন বুঝতে পারলাম। গুরুপদ ৬.০০ মি.মি দড়ির সঙ্গে ৬.০০ মি.মি সুতোয় ৪.০০ মি.মি বঁশি(প্রায় চার ইঞ্চি লম্বা) বেঁধেছে। আর তাতে টোপ দিয়েছে ৫০ গ্রাম ওজনের ব্যঙ। মাছ বাবাজী একসঙ্গে দুটো টোপ খেয়েছে। ফলে তার পক্ষে ছিড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। গুরুপদ মাছ ধরতে আসে নি। তার ছিল গল্প শোনার নেশা। দাদার কাছে সে গল্প শুনতে চায়। তাই মাছ ধরতে এসেছে মিছি মিছি। আর সেও জানতো অত বড় বঁশির মাছ নদীতে আসতে পারে না। তাই নিশ্চিন্তে কোমরে দড়ি বেঁধে বসেছিল। নিজের মূর্খামীর জন্য অকালে প্রানটা গেল।
(৭)
যাইহোক আমরা প্রায় বিকেলের দিকে তীরে পৌঁচলাম। ততক্ষনে খবরটা গ্রামে পৌঁছে গেছিল। নদীপাড়ে লোকে লোকারন্য। আমি আগে নৌকা থেকে নামলাম। আমাকে মা হাত ধরে যা টেনে নিয়ে চললেন আর ছাড়লেন না। তিনি শুধু নিজের কোলের সন্তানের কথা ভাবলেন। অপর মায়ের কোল যে খালি হলো, সে কথা ভাবতে চাইলেন না এবং সেই দিনই আমরা বাড়ি ফিরে এলাম।

Copy right@Tarapada Majhi
Debnagar
Namkhana
12.08.2017

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.