স্মৃতিচারনা


#স্মৃতিচারনা
#ছুটির সকাল

     সকালে ঘুম ভেঙে যেতে জানালার দিকে চোখ গেল। খালি চোখে কিছু দেখতে পেলাম না। তাড়াতাড়ি চসমাটি পরে নিলাম। দেখলাম সকালের সোনা রোদ এসে পড়েছে মাঠে। শালিক পাখী, কাক, চড়ুই ,সাতভায়া আর ডাহুকের অবাধ বিচরন দেখে মনটা আনন্দে ভরে গেল। টানা কয়েকদিনের অফিস যাত্রায় আর ট্রেনের পেসেঞ্জারের ধাক্কায় শরীরের অবস্থা একেবারে কাহিল। প্রতিদিন সকালে ঊঠে আগে মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করে দেখি যে অফিসের কোন গুরুত্বপুর্ন মেসেজ এসেছে কিনা রাতের মধ্যে। তারপর ফেসবুক স্টেটাস দেখি। 

আজ আর কিছু ভালো লাগে না। ভাবছি আজ সারাদিন ল্যাপটপে বসে কাজ করবো। অফিসের কাজের চাপে অনেকদিন ল্যাপটপে কন কাজ করা হয় নি। এভাবে ল্যাপটপটা না চালালে একসময় ওটা খারাপ হতে বাধ্য। এ রকমভাবে একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার খারাপ হয়ে গেছে। ল্যাপটপটার উপর আমার মেজ মেয়ের লোভ আছে। ভাবছি এটাকে ওর দখলে ছেড়ে দেবো। বুড়ো হয়েছি। আর সম্পদকে নিজের দখলে না রাখাই ভালো। অনেকদিন ধরে সে একখানা অ্যান্ড্রয়েড চাইছে। অর্থাভাবে দিতে পারছি না। এই নিয়ে তার আক্ষেপের সীমা নাই। সেদিন তো আমায় শুনিয়ে দিলো- "জানো বাবা, সুস্মিতার বাবা দিনমজুরী করে। অথচ তিনি সুস্মিতাকে একখানা স্যামসাং মোবাইল কিনে দিয়েছে"। আমি বোকার মতো তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। পরে বললাম-" তুমি সন্তানের মা হলে বুঝবে কেন পিতামাতার অক্ষমতা জন্মে এবং তার জন্য তাদের কি দুঃখ হয়"।

আমার চোখ আবারও বাইরে গেল। দেখলাম মাঠে অনেক গরু চরে বেড়াচ্ছে। ধান উঠে যেতে মাঠ ফাঁকা হওয়ায় আর এবারের অকাল বৃষ্টিতে অনেক সব্জিবাগান নষ্ট হওয়ায় মাঠে গরু চরানোর সুবিধা হয়েছে।দেখলাম একটাও বলদ গরু নাই।সবই গাভী, বকনা আর বাছুর। আমার শৈশবে দেখেছি এমন দিনে মাঠে পাল পাল গরু চরতো। ধান কাটার পর পল মাড়াবার জন্য ঐ পাল ঠেকে গরু ধরে এনে পল মাড়ানো হতো। এখন পল মাড়াবার দিন চলে গেছে। ধান ঝাড়াবার মেসিন যেদিন থেকে এসেছে , সেদিন থেকে পল মাড়ানো উঠে গেছে।পাওয়ার ট্রেলার যেদিন থেকে এসেছে, সেদিন থেকে বলদ গরু পোষার দিন শেষ হয়েছে। আর কখনো 'মহেশ' এর মতো গল্পের জন্ম হবে না।

পাশ বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি। এমন সময় গৃহিনী এসে বললে-" আর শুয়ে শুয়ে কাব্যি করতে হবে না। ভাঁড়ার একেবারে বাড়ন্ত। মেয়েটা খেয়ে কোচিং এ যাবে। তাড়াতাড়ি বাজার করে আনো"। এই বলে আমার হাতে একখানা বাজারের লিষ্ট ধরিয়ে দিলে।লিষ্টে চোখ বুলাতে গিয়ে দেখি নারিকেল তেল, সরিষার তেল ইত্যাদির সঙ্গে দু'খানা শাড়ি, দু'খানা চুড়িদার আর একখানা ফেসওয়াস আছে। আমার মেজাজ গেল বিগড়ে। একে কাপড় চোপড় কেনার ব্যাপারে আমি আনাড়ি, তার উপর এখন মাসের শেষ। হাতে টাকা বাড়ন্ত।গৃহিনীর কাছে অভিযোগ করলে এখুনি কি না কি শুনিয়ে দেবে ভেবে, বাধ্য হয়ে ব্যাংকের জমানো টাকায় হাত দিতে হলো।

সুন্দর সকালের সৌন্দর্য্য ভুলে এখন থলে হাতে বাজারে দৌড়াচ্ছি।

তারাপদ মাঝি
দেবনগর
২৯/০৩/২০১৯

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.