প্রতিফলন


#গল্প

#প্রতিফলন

#তারাপদ_মাঝি


আজ দিবাকরের মনটা বেশ আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। আর লাফাবে না কেন? আজ তার একদিনে করকরে তিন হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আগে সর্বোচ্চ লাভ ছিল আঠারো শো টাকা পর্যন্ত। কিন্তু আজ অতীতের সেই রেকর্ড ভেঙ্গে গেছে। 


আজ ছিল জামাই ষষ্ঠীর দিন। ভালো বিক্রি ভেবে বলে অনেক টাকার মুরগী তুলেছিল দিবাকর। দিবাকর তার মাংস দোকানে অনুষ্ঠান দিনের গুরুত্ব বুঝে তবেই মুরগী তোলে। যেমন ভাই ফোঁটা বা জামাই ষষ্ঠীতে মাংসের চাহিদা সর্বোচ্চ থাকে। তখন দিবাকর ক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশী মুরগী রাখে। প্রায় সময় ক্লিক করে যায়। ক্লিক না করলে অসুবিধা নেই। পরের দিনগুলিতে মুরগীগুলো বিক্রি হয়ে যায়। তখন  মুরগীকে খাওয়াতে গিয়ে লাভের মার্জিন কমে যায়। কিন্তু ব্যবসা করতে গেলে এটুকু রিক্স তো নিতেই হবে।


আজকের জামাই ষষ্ঠীর দিনে দিবাকর নিজের ক্ষমতার তুলনায় প্রায় দ্বিগুন পরিমান মুরগী কিনে রেখেছিল। আর ভগবানের দয়ায় বিক্রিও হয়েছে তেমনি। সকাল আটটা থেকে রাত দশটা অবধি মুরগী কেটেছে দিবাকর। সারাদিন খাওয়া বলতে সকালে কাজে আসার সময় বাড়ি থেকে একথালা পান্তা খেয়ে এসেছিল। ওই খাওয়া ছাড়া বাকি সময় শুধু একটা করে বিস্কুট ও এককাপ চা চার পাঁঁচবার খাওয়া হয়েছে। বিড়িটুকু পর্যন্ত শান্তিতে খেতে পায় নি। খদ্দেরের ভীড়ে নেশাটুকু পর্যন্ত ঠিকমতো করা যায় নি। তার জন্য অবশ্য দিবাকরের কোন দুঃখ নাই। মা লক্ষ্মীর আগমনহেতু দিবাকর সবকিছু মেনে নিয়েছে।


রাত দশটার সময় দোকান বন্ধ করে বাড়িতে ফিরলো। স্নান করে হিসাবে বসলো দিবাকর। দিবাকর হিসাব কষে দেখলো যে তার সমস্ত রকম খরচ খরচা বাদ দিয়ে একেবারে নিট তিন হাজার দু'শ পঞ্চাশ টাকা লাভ হয়েছে। দিবাকর তার টাকার ব্যাগটা তার বউ অনামিকাকে দিয়ে সামান্য কিছু খেয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পাড়ার মনসা পূজোয় গাজন দেখতে চললো রাত বারোটায়। পাড়ায় অনেক হাঁকাহাকি করে কিছুতেই আর কাউকে সঙ্গে পেল না। বাধ্য হয়ে দিবাকর একাই চললো গাজন দেখতে। 


দিবাকরের গাজন দেখতে যাওয়ার পথে একটি শশ্মান পড়ে। সেই শশ্মানের কাছে যেতে তার একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। কিন্তু দিবাকর মনে সাহস নিয়ে এগিয়ে চললো। এই সাঁইত্রিশ বছর বয়সে দিবাকরের ভয় পেলে চলে। এমন সময় দিবাকর দেখলো সামনে একটি বড় মোরগ দাঁড়িয়ে আছে। দিবাকর থমকে দাঁড়ালো। এত রাতে মোরগ! তাও কটাশের হাত থেকে রেহাই পেয়ে বেঁচে আছে! দিবাকর সাত পাঁচ না ভেবে মোরগটাকে ধরতে গেল। কিন্তু সে উড়ে সামনের দিকে পালালো। দিবাকর মোরগটাকে ধরার জন্য এগিয়ে যেতে দেখে আরও তিনটে মুরগী। জোৎস্না রাতে সবকিছু ষ্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে দিবাকর। দিবাকর এবার সবগুলিকে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু একি! এত মোরগ মুরগী এলো কোত্থেকে! এ যে দেখি প্রায় শ'খানেক মুরগী। 


দিবাকর দেখলো যে এবার মুরগীগুলো যেন সবাই মিলে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তারা সবাই মানুষের মতো কথা বলছে! তারা সবাই বলছে - আমাদের মেরে গরম জলে ছালের পালক ছড়িয়ে বিক্রি করতে তোমার প্রানে একটু কষ্ট হয় না! তুমি এত নিষ্ঠুর! তোমার শরীরে কি দয়া মায়া বলতে কিছু নেই! আমরা তাই প্রতিশোধ নিতে এসেছি।


সবার আগে একটি বড় মোরগ। এবার সবাই মিলে দিবাকরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। সবাই তাকে আঁচড়াতে আর ঠোকরাতে লাগলো। দিবাকরের এবার হুঁস উড়ে গেল। সে এবার প্রান বাঁচানোর জন্য বাড়ি ফেরার পথ ধরলো। কিন্তু ফিরতে পারলো না।রাস্তায় হুঁচুট খেয়ে পড়ে গেল। আর তখনই সব মুরগীগুলো দিবাকরকে তাদের পায়ের ধারালো নখ নিয়ে আঁচড়াতে আর ঠোঁট দিয়ে খোপরাতে লাগলো। দিবাকরের সর্বাঙ্গ রক্তে ভেসে যেতে লাগলো। সে বাঁচার জন্য ছটপট করতে লাগলো। এবার দিবাকর জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।


সকালে বউয়ের ডাকে দিবাকরের ঘুম ভেঙে যায়। দিবাকর দেখতে পায় যে সে বাড়িতে খাটের উপর শুয়ে আছে। গায়ে প্যান্ট শার্ট পরা। তখন সে সব কিছু মনে করার চেষ্টা করে। এবার  তার সব কিছু মনে পড়ে। শালা গাজন শুনতে যাবে বলে কাউকে না পেয়ে দিবাকর খেয়ে দেয়ে খাটে একটু জিরিয়ে নিতে চাইছিল।  সারাদিনের পরিশ্রমে খাট ছুঁতেই ঘুমের রাজ্যে চলে গিয়ে যা তা স্বপ্ন দেখেছে। দিবাকর দেখে তখন বেলা প্রায় আটটা হয়ে গেছে। এবার স্নান করে দু'টো পান্তা খেয়ে দোকানে বেরিয়ে গেল দিবাকর।


কপিরাইট@তারাপদ মাঝি

১৯শা মে ২০২২ খ্রীষ্টাব্দ

দেবনগর




কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.