উনিশ কুড়ির সুখদুখ(A)
উনিশ কুড়ির সুখদুখ(A)
**********************
#শ্রীতারাপদ মাঝি#
পর্ব-১-আবেগের খেলা
-এই অর্নব, আমার
কিন্তু বড্ড ভয় করছে। তোর মনে যদি এরূপ বাসনা ছিল, তাহলে কোন একটা প্রোটেকশান আনতে
পারতিস। তোরা ছেলেরা না জানি একটা কি? শোয়ার জন্য মেয়েদের পায়ে পর্যন্ত ধরতে
পারিস, কিন্তু সাহস করে কোন মেডিসিন সপ থেকে একসেট কন্ডোম আনতে পারিস না!
-অর্নব মাথা
ঝাঁকিয়ে বললে- ওসব ভ্যানতারা রাখতো।
জন্মেছিস যখন, তখন লাইফটাকে এনজয় কর। ফালতু ঢপ দিয়ে লাইফটাকে স্পয়েল করিস না।
তুইতো এনজয় করে
খালাস।কিন্তু আমার কথা একবার ভেবেছিস?প্রোটেকশন ছাড়া এনজয় হয় না। তুই যদি এটা না
বুঝিস, তাহলে আমি তোকে এনজয়ে হেল্প করতে পারবো না।
-তুই বোঝ
পারমিতা। আমি এসব মাথায় নিয়ে তোর কাছে আসিনি।আসলে তোর বাড়িটা এরকম খালি পাবো ভাবতে
পারিনি। তাছাড়া আমরা তো একসময় বিয়ে করবো।তাহলে এনজয় করতে অসুবিধা কোথায়?যদি ভাবিস
কোন কিছু হয়ে যাবে তবে যাবে।তখন না হয় তোকে বিয়ে করে নেব।
-পারমিতা চোখ
পাকিয়ে, মুখ টিপে হেসে বলে-অদ্ভুত যুক্তি তোর বাবা!কেন, নিজেকে একটু সামলে নিতে
পারিস না?এতে তোরও মঙ্গল আমারও মঙ্গল। পারমিতার কথা বলার ঢঙে ছিল প্রশ্রয়ের
প্রচ্ছন্ন আভাষ। অর্নব সেটা বুঝতে পারে।
-অর্নব আর দেরী
করলো না। তৎক্ষনাৎ পারমিতাকে জাপটে ধরে। তাকে অনর্গল আদর করতে থাকে। একসময়
পারমিতাকে উলঙ্গ করে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভালোলাগার আবেশে পারমিতা বাধা দেওয়ার
ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে অর্নব দানব হয়ে পারমিতা নামক শহরের প্রত্যেক অলিগলিতে
বিচরণ করতে থাকে।পারমিতা প্রত্যেকটা গলির দরজা অনায়াসে খুলে দেয়। একসময় পারমিতার
খাটে দু’টি শরীর তালগোল পাকিয়ে মংসপিন্ডবৎ পড়ে থাকে।
একসময় দু’জনের
চেতনা ফেরে। বিছানায় উঠে বসে তারা। পারমিতা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। অর্নব বড়
বেকায়দায় পড়ে যায়। বুঝতে পারে না পারমিতার কান্নার কারন।
-পারমিতাকে অর্নব
জিজ্ঞাসা করে- কাঁদছিস কেন?
-তুই একটা অসভ্য।
কোন প্রোটেকসান না নিয়ে এসব করলি। আমার কিছু হয়ে গেলে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবো?
-ও চিন্তা তুই
করিস না। আমি আমার মালটা তোর শরীরে ফেলি নি। এই দেখ- বলে সে বিছানার বেডসিটে সাদা
মতো কিছু বস্তুকে দেখায়।
-বিস্ময়ে হতবাক
হয়ে যায় পারমিতা। জিজ্ঞাসা করে ওগুলো কি?
-বীর্য। যাকে
বায়োলজিতে বলে স্পার্ম।
-ওগুলো কোথায়
ছিল?
-তুই একটা ঢেড়শ।
কিচ্ছু জানিস না দেখছি। আমার শরীরে থাকে স্পার্ম বা বীর্য।আর তোর শরীরে থাকে এগ বা
ডিম্বানু।এই দু’টোর মিলন হলে তবে হয় বাচ্চা। কিন্তু আমার মালটা বেডসিটে ফেলে
দিয়েছি। ফলে তোর পেটে আর বাচ্চা আসার কোন সম্ভাবনা নাই। তুই নিশ্চিন্তে থাকিস।
-তুই তো বেশ পাকা
দেখছি অর্নব। এর আগে আর ক’জনের সঙ্গে শুয়েছিস বলতো?
-ধ্যাৎ বাজে কথা
ছাড়তো? তোর সবসময় সন্দেহজনক কথাবার্তা। তারপর পারমিতার গলা জড়িয়ে ধরে বলে- আর
একবার আয় না!
-পারমিতা বলে-তুই
পারিস মাইরি!দূর হ ভাদুরে কুত্তা! ওরকম করলে তোর সঙ্গে আর বন্ধুত্ব রাখবো না।
পারমিতা কপট রাগ দেখায়।
-অর্নব পারমিতার
গলা জড়িয়ে ধরে। আদুরে গলায় ফিস ফিস করে বলে-প্লিজ পারু, ওয়ানস এগেন।
-ফলে পারমিতা
আবার নিজেকে অর্নবের কাছে সঁপে দেয়। অর্নব পারমিতাকে চাটনির মতো চেঁটে চেঁটে খেতে
শুরু করে। দু’জনেই যৌবনমদে মত্ত হয়ে খেলায় মেতে উঠে।
পর্ব-২-বোঝাপড়া
কলেজ ক্যাম্পাসে
অর্নবকে দেখেই পারমিতা বলে- অর্নব, কলেজ ছুটির পর গেটের কাছে অপেক্ষা করিস। কথা
আছে। বলে পারমিতা বাংলা ক্লাসটা করতে চলে যায়।
বিকেল ঠিক তিনটে।
পারমিতা কলেজ থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে অর্নবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তারপর তারকাছে
গিয়ে বললো- ফ’লো মি এবং তারপর দ্রুত হাঁটতে লাগলো।থামলো একেবারে প্লাটফর্মে
গিয়ে।একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে বসলো।বোধহয় একটু আগে ডাউন ট্রেনখানা চলে গেছে। তাই
প্লাটফর্মটা একেবারে ফাঁকা। এরকম নিরিবিলি জায়গা পারমিতা খুঁজছিল।
-পারমিতা
বললো-সেদিন এতকরে বললাম, শুনলি না। প্রোটেকশান না নিয়ে ওসব করলি। এবার আমি কি করি
বলতো!তুই একটা কিছু ব্যবস্থা কর।
-কেন, কি হয়েছে?
অর্নব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে।
-আরে এমাসে আমার
এখনও পিরিয়ড হলো না। যে ডেটে পিরিয়ড হয়, তার সময় পেরিয়ে গেছে।আমি কিন্তু ভালো
বুঝছি না।
-ইয়ার্কি মারিস
না পারু। তুই তো দেখলি আমার মালটা দু’বারই বাইরে খালাস করেছি। এর পরে পিরিয়ড
আটকানোর কোন প্রশ্নই আসে না।
-ওরকম বলিস না
অর্নব। ওসব আমি ঠিক বুঝি না।তবে আমার মনে হয় কোন একটা গন্ডগোল হয়েছে।আমি আর দেরি
করতে চাই না। আমার ইউরিনটা কাল কালেক্ট করে দেব। কোন একটা ক্লিনিক থেকে
প্রেগনেন্সি টেষ্ট করিয়ে আন। তারপর একটা ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
-তুই ক্ষেপেছিস
নাকি পারু। যে কোন ক্লিনিকে গেলেই আমাকে কেউই চিনতে ভুল করবে না। তারা বাবাকে বলে
দিলে আমার পিঠের ছাল আস্ত রাখবে না। আছাড়া কতবড় বাড়ির ছেলে আমি। আমার একটু মান
সম্মান নাই!
-যখন ওসব করলি,
তখন বাবার কথা, মান সম্মানের কথা মনে ছিল না? এখন আমাকে ফাঁসিয়ে সাধু সাজা হচ্ছে?
ইতর কোথাকার! জানোয়ার! লম্পট!
-আমি তোকে
ফাঁসাইনি। বরং তুই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিস।তোকে পরিস্কার দেখিয়েছি যে আমার
মালটা বাইরে ফেলেছি। অন্য কারও সঙ্গে ফষ্টি নষ্টি করে এখন আমাকে ফাঁসাতে
চাইছিস।তুই একটা নষ্ট মেয়ে। আমাকে ফাঁসানোর জন্য তুই একটা জাল পাততে চাইছিস।
সুতরাং তোর সঙ্গে আর মেলামেশা নয়। এইখানে তোর সঙ্গে আমার ভালোবাসার ইতি।এই বলে
অর্নব পারমিতার পাশ থেকে উঠে গেল।
পারমিতার ইচ্ছা
করছিল এই স্টেশনের উপর অর্নবের পাছায় একটা কষে লাথি মারে।ওর অসভ্যতার শিক্ষা এই
প্লাটফর্মে সকলের সম্মুখে হয়ে যাক। কিন্তু সে তা করতে পারলো না। মুখে আঁচল চাপা
দিয়ে কাঁদতে থাকলো।তারপর আপ ট্রেনটা আসতেই ট্রেনে উঠে বাড়ির দিকে পা বাড়াল।
পর্ব-৩-ঠেকে শেখা
আজ দু’মাস পেরিয়ে
গেল।এখনও পিরিয়ড হলো না পারমিতার। ভয়ে সে সবসময় কাঁটা হয়ে থাকে। মাকে এসব কথা
জানাতে পারে না।কি করবে ভেবে উঠতে পারে না।বাধ্য হয়ে সে তাদের ক্লাসের বন্ধু
পলাশের সাহায্য নেবে ভাবলো।
পলাশ মাইতি। ভারি
শান্ত সৌম্য ছেলে। গ্রামে বাড়ি। কলেজের কাছাকাছি একটা মেসে থাকে।গ্রামের ছেলে বলে
অনেকসময় পারমিতা তাকে বিভিন্নভাবে খেঁপিয়েছে।কিন্তু পরে পারমিতা বুঝেছে যে পলাশ
খুব ভালো বন্ধু ও বেশ বিশ্বস্ত।পারমিতার এই বিপদের দিনে পলাশ তাকে হেল্প করতে
পারে।
সোমবার ক্লাসের
ফাঁকে কলেজের বুড়ো দেবদারু গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে তার অবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে
বলে- আমায় একটু হেল্প করবি পলাশ?
-কি রকম হেল্প
তুই চাইচিস বল?
-তুই কোন
ক্লিনিকে গিয়ে আমার ইউরিনটার প্রেগনেন্সি টেষ্ট করিয়ে আন। তারপর অবস্থা বুঝে
ব্যবস্থা নেব।
-নো প্রবলেম। তুই
ইউরিনটা কা নিয়ে আয়। আমি একটা ক্লিনিকের সঙ্গে কথা বলে দেখি।
পর্ব-৪-দেখে শেখা
ইউরিন টেষ্টে
দেখা গেল- প্রেগনেন্সি টেষ্ট পজিটিভ হয়েছে। এবার আবরশান না করলে কেস জনডিস হয়ে
যাবে।পারমিতা এক্ষেত্রেও পলাশের সাহায্য চাইলো।পলাশ বাধ্য হয়ে একটি লেডিজ মেসে
পারমিতার থাকার ব্যবস্থা করলো।কলেজ থেকে ট্যুরে যাবে বলে আগে থেকেই বাড়িতে গল্প
বানানো ছিল। থাকলো শুধু অ্যাবরশান ডেটে বাড়ি থেকে এসে সোজা নার্সিং হোমের
ক্লিনিকে। অ্যাবরশান হয়ে গেলে লেডিজ হোষ্টেলে শিফট করবে। সেখানে তিনদিন রেষ্ট।
তারপর নিশ্চিন্তে বাড়ি।
কিন্তু
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যে অন্য খেলার প্ল্যান করে রেখেছেন। তার ভিতরে ঢোকার ক্ষমতা যে
মানুষের নেই। তাই যেদিন অ্যাবরশান করাতে বের হবে, সেইদিন শুরু হলো ভগবানের খেলা।
সকালের দিকে
পারমিতার বাঁদিকের তলপেটে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো। পারমিতা আনন্দিত হয়। ভাবে
পিরিয়ডটা বোধ হয় এবার শুরু হয়ে যাবে। তাহলে প্রেগনেন্সি টেষ্ট পজিটিভ হলো কি করে? তাহলে
কি পলাশ মিথ্যে কথা বলেছে? না ক্লিনিক মিথ্যে রিপোর্ট দিলো? কিছু বুঝতে পারছে না
পারমিতা। এমন সময় সারা তলপেট জুড়ে শুরু হলো অসহ্য যন্ত্রনা। যন্ত্রনায় বিছানায়
কাতরাতে লাগলো সে।
একসময় পারমিতা
যন্ত্রনায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। মায়ের ফোন পেয়ে পারমিতার বাবা অফিস থেকে ফিরে এলো।
তাকে তাড়াতাড়ি একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে ডাক্তাররা যন্ত্রনার কারণ
জানতে আল্ট্রা সোনোগ্রাফি করালেন। তখনই ধরা পড়লো যে পারমিতার একটোপিক প্রেগনেন্সি
হয়েছে। অর্থাৎ ডিম্বানু ও শুক্রানুর মিলনে যে জাইগোট তৈরী হয়, তাহা স্বাভাবিকভাবে
জরায়ুতে বর্ধিত হয়ে নির্দিষ্ট দিনে বেবির ভুমিষ্ট হওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু জাইগোট
যদি কোন কারনে ফেলোপিয়ান টিউবে আটকে যায়, তাহলে সেখানে জাইগোট বর্ধিত হতে থাকে এবং
ফেলোপিয়ান টিউবের উপর চাপ পড়ে। পেসেন্ট তখন অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব করে। একসময়
ফেলোপিয়ান টিউব ফেটে গিয়ে পেসেন্টের মৃত্যুও ঘটাতে পারে। এই ধরনের অস্বাভাবিক
প্রেগনেন্সকে একটোপিক প্রেগনেন্স বলে।
অত্যন্ত দুঃখের
সঙ্গে নার্সিংহোমের ডাক্তাররা পারমিতার বাবামাকে একটোপিক প্রেগনেন্সি সম্পর্কে
বুঝিয়ে বললেন। তারপর ডাক্তারবাবু যে মর্মান্তিক কথাগুলো বললেন তা হলো যে ফেলোপিয়ান
টিউবে জাইগোট আছে, তাকে অপারেশান করে জাইগোটটি নষ্ট করে ফেলতে হবে।সেই সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট ফেলোপিয়ান টিউবটিও চিরদিনের জন্য তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। বাকি বেঁচে
থাকে একটি ফেলোপিয়ান টিউব। কিন্তু আগামী দশবছরের মধ্যে কোন বাচ্চা নেওয়া যাবে না।
তাতে অপারেশন করা টিউব ফেটে পেসেন্টের মৃত্য পর্যন্ত ঘটাতে পারে।অথচ এই মুহূর্তে
ফেলোপিয়ান টিউব অপারেশন না করলে পারমিতাকে বাঁচানো যাবে না।সুতরাং পারমিতাকে
অপারেশান করে অর্ধবন্ধ্যায় পরিনত করা হলো।
উনিশ-কুড়ি বছরের
একটি রঙিন প্রজাপতি সবরঙ হারিয়ে এমন কি ডানা ভেঙে নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে
ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করছে।
-------সমাপ্ত
--------
[বিঃদ্রঃ-এই
গল্পটির কাহিনী ও চরিত্র সবই কাল্পনিক। কাহারও জীবনের ঘটনার সঙ্গে মিলে গেলে সেটা
সম্পূর্ন কাকতালীয়।]
বেলপুকুর
৬ই সেপ্টেম্বর
২০০৯
Leave a Comment