আমাদের_আগত_প্রজন্ম

#আমাদের_আগত_প্রজন্ম



গল্প কবিতা লিখে আর মন ভরছে না। কারা পড়বে এ সব। যাদের পেটে অন্ন আছে, বিলাসিতা করার অর্থ আছে, তারা সামান্য কয়েকজন পড়বে। বাকিরা পড়ে রয়েছে গভীর হতাশায়। নিহাত রেশানে এখন চাল মিলছে বলে জঠরাগুন নির্বাপিত রয়েছে। কিন্তু এরও একটা সীমারেখা আছে। একদিন এই সীমারেখা শেষ হবে। তখন কি হবে। কি করে চলবে হেঁসেল? দেশের যুব সমাজ আজ অ্যান্ড্রয়েডে আর ফ্রি ফায়ারে মগ্ন। তাদের কোন চিন্তা নেই। পিতামাতার কোন হুঁস নেই। তারা তাদের সন্তানের অস্বাভাবিক চাহিদাকে প্রয়োজনীয় চাহিদা ভেবে বা বাধ্য হয়ে দামী ফোন কিনে দিচ্ছেন। ফলস্বরুপ যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। আমাদের সময় শিক্ষকরা ক্লাসের শুরুতে বিবেকানন্দ বা গীতা পড়াতেন, রামকৃষ্ণ পড়াতেন। আমরা জীবনকে তখন কিভাবে পরিচালনা করতে হয় তাদের থেকে শিখেছি। এখন শিক্ষা ব্যবস্থাটা এমন বিবেকানন্দ বা রামকৃষ্ণ পড়ানোর কোন সুযোগ নেই। চরিত্র গঠনের কোন সুযোগ নেই। আগত প্রজন্ম যে কেমন হবে তা ভেবেই আঁতকে উঠছি।


এই তো সেদিন আমার স্কুলের পাশ দিয়ে আমি হেঁটে চলেছি। দেখি স্কুলের শিক্ষক দেবুবাবু হেঁটে চলেছেন এবং তার পিছনে একটি ছাত্র হাতে লুকিয়ে বিঁড়ি টানতে টানতে চলেছে। আমি বললাম-এই ভানু তুই বিঁড়ি টানছিস! সামনে তোর মাষ্টার যাচ্ছে না! সে উত্তরে আমায় বলে- ও দেবু মাষ্টার? ও শালাকে কে ভয় পায়? শালা আমায় অংকে ফেল করিয়ে দিয়েছিল। আমি বাকরোধ হয়ে গেলাম। কিন্তু ভানুর কোন হেল দোল নেই। সে দিব্বি স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলেছে। এই হল বর্তমান সমাজের পরিস্থিতি। না আমি একজনকে দেখে বিচার করছি না। খুব কাছে থেকে ট্রেনে, বাসে, হাটে, বাজারে প্রায় প্রত্যেকটি জায়গায় আমি যুব সমাজের মন ও মানসিতা বিচার করার চেষ্টা করেছি। তাদের মানসিকতা বেশ খানিকটা ভানুর কাছাকাছি। হ্যা ব্যাতিক্রম নেই যে তা নয়। কিন্ত তার পরিমান মেরেকেটে ৩০%। কিন্তু বাকি ৭০% ভানুরা ভালো ৩০% কে শাসন করলে সমাজের আর থাকবে কি।

৭০% এর প্রভাবের একটি উদাহরন দেই। আমাদের পাড়ায় পুজো হচ্ছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে চাই। আমরা কয়েকজন( যারা ৩০% এর মধ্যে পড়ি) বললাম যে একদিন আমদের পাড়ার ছেলেদের দ্বারা একটি নাটক করা হোক। আর একদিন গ্রামের মেয়েদের দিয়ে রবীন্দ্র নৃত্যানুষ্ঠান করা হোক। নাটক এবং রবীন্দ্র নৃত্য শেখানোর লোক আছে। হাতে দু, মাস সময়। ভালোভাবে অনুষ্ঠান করা যাবে। কিন্তু আমাদের প্রস্তাব ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে বাকিরা বললো- এ সব করলে মানুষ দেখবে না। দু’দিন অনুষ্ঠান হবে। প্রথম দিন হবে গাজন গান। এবং দ্বিতীয়দিন হবে ডান্স হাঙ্গামা। সভায় ৭০% এর সিদ্ধান্ত ফাইনাল হলো।

কিন্তু সময় কাউকে ক্ষমা করে না। আজ যারা অলসভাবে, অবহেলায় বা অজ্ঞানের আলোয় জীবন গড়ে তুলছে, তাদের একটা সময় দুঃসময় আসে। আসবেই। যখন পিতা মাতা স্ত্রীর দায়িত্ব এসে পড়ে, তখন সে দিশেহারা হয়ে যায়। তাদের দায়িত্ব মানে তাদের গ্রাসাচ্ছয়াদনের ভার, পোষাক পরিচ্ছদের ভার, চিকিৎসা পরিসেবার ভার ইত্যাদ ভার বহন করতে গিয়ে সে তখন জেরবার হয়ে যায়। তখন হয় সে পিতা মাতাকে পরিত্যাগ করে, অথবা পিতামাতাকে ছেড়ে অর্থের সন্ধানে সুদুর বিদেশ বিভুইয়ে দিন কাটাতে হয়। যারা ৩০% এর মধ্যে পড়ে, তাদের যে এমন অবস্থা হবে না, এ কথা আমি বলছি না। তবে তারা এখানে একটি লড়াই দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেকে লড়াই করে টিকে যায়। বাকিরা ৭০% এর পদাঙ্ক অনুসরন করে।

বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ, আমার এই লেখার পক্ষে এবং অবশ্যই বিপক্ষে কোন মতামত থাকলে জানাতে অনুরোধ করি। সমস্ত রকম সমালোচনা সমভাবে আদরনীয়।

কপিরাইট@তারাপদ মাঝি
দেবনগর
১৩ই জানুয়ায়ারী, ২০২৩




কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.