লবন_একটি_বিস্ময়_দ্রব্য।

#লবন_একটি_বিস্ময়_দ্রব্য
 


নিজে ভুগেছি। তার থেকে শিক্ষা নিয়েছি। শিক্ষা প্রয়োগ করে ফল পেয়েছি হাতে হাতে। আমার আশে পাশে অনেকেই আছেন যারা আমার মতো সমস্যায় ভুগছেন। তাই তাদের সাথে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য আমার এই লেখার প্রয়াস। তবে যারা আমার মতো সমস্যায় ভুগছেন না, তাদেরকেও এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অনুরোধ রাখছি। এই লেখার সমস্ত রকম সমালোচনা হৃদ্যতার সঙ্গে গ্রহন করা হবে।

সমস্যা হলো লবন খাওয়ার অভ্যাস। আমাদের অনেকের অভ্যাস আছে যে খাবারের সময় লবন না হলে কিছুতেই প্রথম গ্রাসটি উঠবে না। তাই তো আমাদের কোন ভোজনানুষ্ঠানে পাতে প্রথমেই লবন দেওয়ার প্রথা রয়েছে। তাছাড়া মসলা হিসাবে হেঁসেলে লবনের জায়গা সবার আগে। কারণ লবন ছাড়া সব রন্ধনই বিস্বাদ। সুতরাং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে লবনের প্রভাব খুব প্রকট। আরও উদাহরণ দিলে লবনের প্রভাব বোঝা যাবে।

বাড়িতে তরমুজ খাচ্ছেন, তাতে একটু নুন মাখিয়ে তবেই খাওয়ার মেজাজ আসছে। আবার ট্রেনে যাচ্ছেন। পেয়ারাওলার কাছ থেকে পেয়ারা কেটে নুন মাখিয়ে আয়েস করে খাচ্ছেন। সকালে লেবুর জলের সঙ্গে একটু নুন না মাখালে আর চলে না। পান্তাভাতে এক গণ্ডূষ নুন না হলে পান্তা খাওয়াই যাবে না। এই রকম অজস্র ঘটনা আছে, যেখানে নুনের যথেচ্ছ ব্যবহার আমরা করে থাকি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে লবন বা নুন কি আমাদের শরীরের পক্ষে উপকারী? এর উত্তর হলো অবশ্যই নুন আমাদের শরীরে যথেষ্ট উপকারী। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত সেই উপকারের সীমারেখা আছে। সেই নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়ালে তখন নুন হয়ে যায় প্রানঘাতী ধীরে ক্রিয়াশীল গরল বা বিষ। বিষয়টি খোলসা করে বোঝানোর চেষ্টা করছি।

আমরা যে নুন খাই তার রাসায়নিক নাম হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড যাতে সোডিয়াম এবং ক্লোরিণ নামক দুটি মৌলিক পদার্থ থাকে। এই নুন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড যখন জলীয় দ্রবন হয় তখন এই যৌগটি ভেঙে সোডিয়াম আয়ন যা ধনাত্বক বা পজিটিভ এনার্জীতে এবং ক্লোরিণ আয়ন যা ঋনাত্বক বা নেগেটিভ এনার্জীতে রুপান্তরিত হয়।

এবার আসা যাক আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে। আমাদের শরীরে মাইটোকন্ড্রিয়া নামক স্থানে খাদ্য ভেঙে গিয়ে পজিটিভ এনার্জী এবং নেগেটিভ এনার্জীতে পরিনত হয়। পজিটিভ এনার্জী শরীরের কাজে ব্যয় হয় আর নেগেটিভ এনার্জী শরীরে সঞ্চিত থাকে। নেগেটিভ এনার্জী খুব খারাপ। এই এনার্জীর উপলব্ধি একমাত্র মস্তিষ্ক ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। এই এনার্জী মানুষের শরীরে এবং মননে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে। তাই একে নির্মুল করতে নুনের সোডিয়াম আয়ন বা পজিটিভ এনার্জী আসে এবং নেগেটিভ এনার্জীকে নিস্তড়িত করে। এইভাবে শরীরের রাসায়নিক বিক্রিয়াতে নুন অংশ গ্রহন করে এক বিশেষ ভুমিকা পালন করে।

শরীরে এনার্জী ম্যানেজমেন্ট ছাড়াও আরও বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ কাজ লবন করে থাকে। যেমন পেশীর সঙ্কোচন প্রসারনে বিশেষ করে হৃদপেশীর সংকোচন প্রসারণে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের সংবেদ আদান প্রদানে সাহায্য করে। পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরীতে সাহায্য করে খাদ্য হজমে সাহায্য করে।

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে নুনের গুরুত্ব শরীরে কতখানি রয়েছে। কিন্তু এই নুনের মাত্রা শরীরে কতটুকু হওয়া উচিত? ডাক্তার এবং গবেষকরা এর একটি নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার পরিমান হলো প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের জন্য দিনে মাত্র ২৩০০ মিলিগ্রাম। প্রসূতি হলে একটু বাড়িয়ে প্রতিদিন মাত্র ২৫০০ মিলিগ্রাম। গবেষনা করে দেখা গেছে যে প্রাত্যহিক আহারে আমরা যা লবন খাই, তা ২৩০০ মিলিগ্রামের অনেক বেশী। তাই খাবার সময় টেবিলে লবন রাখা একেবারেই উচিত নয়।

শরীরে প্রয়োজনীয় মাত্রার কম লবন খেলে কি হবে? প্রয়োজনীয় মাত্রার কম লবন খেলে শরীরে তার প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্বক। প্রয়োজনীয় লবনের অভাবে প্রথমে মস্তিষ্ক কাজ করতে পারবে না। পেশী শক্ত হয়ে সংকোচন প্রসারনশীলতা হারাবে। রক্তের ঘনত্ব বাড়বে। শেষে হার্ট ব্লক বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে মানুষ মারা যাবে।

আবার প্রয়োজনীয় মাত্রার বেশী লবন খেলে কি প্রতিক্রিয়া হবে? প্রয়োজনীয় মাত্রার বেশী লবন খেলে তার ফলও বেশ উদ্বেগজনক। সোডিয়াম জল ধরে রাখে বেশী। বেশী লবন খেলে শরীরে জল সঞ্চয়ের মাত্রা বাড়বে। ফলে রক্তের ঘনত্ব কমলেও তার পরিমান বাড়বে। এতে হার্ট এবং কিডনীর উপর চাপ বাড়বে এবং সঙ্গে শরীরের সমস্ত ধমনীর উপর চাপ বাড়বে। ফলস্বরূপ হার্ট ফেলিওর, সেরব্রাল স্ট্রোক এবং কিডনী ফেলিওর হতে পারে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর সমাধান কি?
এর সমাধান খুব সহজ। প্রাত্যহিক রান্নায় যে পরিমান লবন ব্যবহার করে রান্না করা হয় সেই পরিমান লবনই যথেষ্ট। পাতে কিছুতেই এক্সট্রা লবন নেওয়া যাবে না। কোন খাবারে সে ফল জল বা পানীয় হোক কোন কিছুতেই লবন মেশানো যাবে না। এটাই বিশেষজ্ঞদের বিধান।

কপিরাইট @তারাপদ মাঝি
দেবনগর
১৬ই জানুয়ারী, ২০২৩


কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.