পাগলের আবোল তাবোল
এক পাগলের আবোল তাবোল
আমার ছোটদি, তাকে নিয়ে পড়েছি যন্ত্রনায়।
এত ভালো মেয়েটি কি করে যে পালটে গেল বুঝি না।
পঞ্চায়েতের দাপুটে প্রধান সে।
ঠিকাদার,মেম্বার,মাতব্বর আর পার্টির স্যাঙাতদের সঙ্গে উঠবস।
সারাদিন জীবনখানা একেবারে আঁটোসাঁটো বাঁধা।
আমি বলি, ‘দিদি, প্রধানগিরি কর, কিন্তু সমঝে কর।
এত গম্ভীর আঁটোসাঁটো জীবন তরি চালিয়ে লাভ কি?
একটি মেয়ে,আর সাত রাজার ধন এক মানিক তোর,
বখাটে ঝি এর হাতে পড়ে তাদের শৈশবটা শেষ।
প্রধান গিরি গেলে দেখবি চোখে সরষে ফুল,
চারিদিকে দেখবি শুধু সমুদ্রের জল,নেই কোন কুল’।
আমার থেকে ছোট সে, কিন্তু আমার কথা কি শোনে?
চোখ বড় করে বলে, ‘আমার কাজ আমি করি তুমি থাকো দূরে’।
বসন্তের সকালে বইছে বাতাস, ছোটদি বসেছে উঠানে।
একজন এলো কি কাজের তরে কে জানে?
ধমকায়ে বলিল তারে, ‘ভোট তো দাও নি মোরে,
এখন কেন এসেছো কাজের তরে আমার দ্বারে’।
লোকটি গেলে পরে বলিলাম তারে, ‘এ রকম করিস না দিদি!
মানুষের পাশে মানুষ থাকে, প্রধান থাকবে আরও বেশী।
প্রধান হলে তার থাকিবে না দলবিচার,জাত ভেদাভেদ,
প্রধানই রাজা, সকল মানুষ প্রজা তার সন্তানসম।
তাদের পালিতে হবে সন্তানসম শেখ নাই তাহা।
বোঝাইনু তারে, ‘প্রধানের চেয়ার হলো মৌচাকসম।
গলিত ষ্ফটিকসম স্বচ্ছ মধুতে ভরা, স্বাদে অমৃতসম।
সে মধু লুটিতে কে না চায় এ ধরাধামে উন্মত্ত উল্লাসে’।
কিন্তু সে তো শুধু মধু নয়, গরল ও অমৃতের মিশ্রন শুধু।
গরলের ভাঁজে ভাঁজে লুক্কায়িত অমৃত সূক্ষ অবতারে,
তাহারে লভিতে হবে গরলের পর্দা সরায়ে।
স্বার্থের গরল ভাঁজে নিস্বার্থ অমৃত লুক্কায়িত রয়েছে যে।
নিস্বার্থ লভিতে হলে স্বার্থত্যাগ জীবনের ধ্রুবতারা হোক।
পার্টির গরল ফাঁদে মানব শৃঙ্খল বিরাজিছে,
মানব সমাজ বাঁচাতে পার্টির গরল ফাঁস টুটিতে হবে।
আক্রোশিয়া বলে মোরে, ‘দাদা, কে্ন জ্ঞান দিস।
প্রধান হলো পার্টির গোলাম, পার্টিকে তাই সেলাম’।
কটু ভাষে শুধায় আমায়, কথায় তার নাই সোহাগ-
‘পার্টি চাইলে প্রধান হবো, না চাইলে ক্ষতি,
সংসারে যে পয়সা দেই, সে তো পার্টির কেরামতি।
পার্টি চাইলে টাকা হবে, হবে বড় একখানা বাড়ি,
তুমি তো আমার ভালো চাও না, তাই তোমার সঙ্গে আড়ি’।
আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলি, ‘এ সব নয়রে ঠিক,
চেয়ার গেলে তখন বুঝবি কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক।
হারুন চাচা, মধু মল্লিক আমার গ্রামের মানুষ সবাই,
বিরোধীদলের লোক বলে কি তাদের সম্মান নাই’!
ছোটদিকে অনেক বোঝালাম, কিন্তু সে বুঝলো না।
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, পার্টিতে পার্টিতে ভেদাভেদ
সবই স্বার্থ রক্ষার জন্য মানুষের বানানো সমস্যা।
কি লাভ হয় পরিচিত মানুষকে দেখে গোমরা মুখ করে চলে যাওয়া?
কি লাভ পার্টিতে পার্টিতে বিভাজন রেখা টেনে?
কি লাভ দুটো পয়সা অবৈধ উপায়ে রোজগার করে?
কি লাভ সকলে বিচ্ছিন্নভাবে থেকে?
ও খারাপ বলে আমাকেও কি খারাপ হতে হবে?
ওর যদি খারাপ হওয়ার অধিকার থাকে,
আমার কি ভালো হওয়ার অধিকার নাই?
কি লাভ শিক্ষার আলো পেয়ে যদি না সেই আলোতে আলোকিত হই।
জীবনে বেঁচে থাকার জন্য মোটা ভাত আর মোটা কাপড় কি যথেষ্ট নয়!
বড়জোর পরিবারের চিকিৎস আর অনুষ্ঠানের জন্য সামান্য কিছু ব্যঙ্কব্যালেন্স!
মরলে পাবি মাত্র সাড়ে তিনহাত জমি।
এই যে তুই মাংসভাত খাচ্ছিস, পাশের বাড়িতে উনুন জ্বলেনি।
তার জন্য কি তোর কোন কর্তব্য নাই?
খাওয়া ফেলে উঠে গেল ছোটদি।
সাজগোজ আগেই ছিল তার।
বাইক নিয়ে বের হয়ে গেল সে।
হেঁকে বলে গেল সে-‘দাদকে রাঁচিতে পাঠিও মা।
ও রাঁচিতে গেলে আমায় খবর দিও।
তবেই বাড়িতে ফিরব আমি’।
আমি পাগলের মতো চেয়ে রইলাম তার দিকে।
তারাপদ মাঝি
২৬/১১/২০১৬
Leave a Comment