kobita




স্বার্থ



পৃথিবীর কোন ঘটনা স্বার্থ ছাড়া হয় না।

একমাত্র স্বাভাবিক মৃত্যু এর ব্যতিক্রম।



মানুষ প্রথম দল বেঁধেছিল অস্তিস্ত রক্ষার স্বার্থে,

সমাজ গঠন হলো সুশাসাশনের স্বার্থে,

রাজ্য, রাজা হলো ধনসম্পদ আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে,

স্বার্থ ছাড়া সৃষ্টি অসম্ভব।



পিতামাতা সন্তানের জন্ম দেয় প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে,

ভাই ভাইয়ের বুকে ছুরি বসিয়ে দেয় সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার স্বার্থে,

রাষ্ট্রে বিদ্রোহ হয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে,

সাহিত্যিক লেখে সম্মান আর লক্ষ্মীলাভের স্বার্থে,

অভিনেতা অভিনয় করে নাম, ধাম আর লক্ষ্মীলাভের স্বার্থে।



স্বার্থ ছাড়া যে মানুষ থাকে সে ঠিক মানুষ নয়।

সাধু-সন্যাসীরা ঈশ্বর লাভের স্বার্থে জীবনটা কাটিয়ে দেয়।

পৃথিবীতে রাজনীতিকদের স্বার্থটি সবচেয়ে বেশী ভয়ঙ্কর,

কারন তাদের স্বার্থের দড়িটা যে বড্ড বেশী মোটা।

ক্ষমতা লাভের স্বার্থ, ধনসম্পদ লিন্ঠনের স্বার্থ,

জীবনের যাবতীয় লোভ লালসা পূরণের স্বার্থ

একসঙ্গে মিলেমিশে স্বার্থের দড়িটা তাই মোটা হয়ে গেছে।



সমাজে স্বার্থ থাকাটাও জরুরী, স্বার্থ ছাড়া জীবন অচল।

সভ্যতার রেলগাড়ি থেমে যেতে বাধ্য।

শ্রমিক মজুরী না পেলে কাজ করবে কোন স্বার্থে?

শিক্ষক বেতন না পেলে শিক্ষাদান করবে কোণ স্বার্থে ?

কৃষক অর্থ না পেলে ফসল ফলাবে কোন স্বার্থে ?

স্বার্থের অভাবে সভ্যতা ধ্বংস হতে বাধ্য।



মজার কথা হলো-

স্বার্থের অভাবে যেমন সভ্যতা ধ্বংস হয়, তার প্রাচুর্যেও হয় তাই।

যে স্বার্থে ক্ষুদ্রের উপকার এবং তার বৃদ্ধি না হলে,

যে স্বার্থে বৃহতের উপকার এবং তার বৃদ্ধি হলে,

সভ্যতা সমাজ চলে উন্নত শিরে।



মীরজাফর যদি নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিত,

বোধহয় ভারতের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।

রাবন যদি রামের সঙ্গে আপোস করতো,

রামায়নের কাহিনীগুলো পালটে যেত।

দুর্যোধন যদি স্বার্থত্যাগ করতো,

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হতো কিনা সন্দেহ ছিল।

ট্রয়ের রাজকুমার যদি হেলেনকে ফিরিয়ে দিত,

হোমারের আর ইলিইয়াড লেখা হতো না।

যখনই ক্ষুদ্র স্বার্থ নিয়েছে বৃহৎ আকার,

বৃহৎ স্বার্থের সঙ্ঘাতে সৃষ্টি হয়েছে বিপ্লব।

বিপ্লবের জয় হলেও অন্তরে থেকে যায় ক্ষুদ্র স্বার্থের সুপ্ত বীজখানি।

কখন জাগিবে সে কে বলিতে পারে।





তারাপদ মাঝি।

গোচরন স্টেশন

২৬/১১/২০১৬

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.