#সেরা_রোজগার



আজ একটি বর্ষণ মুখর দিন এই রকম দিন গুলিতে আমি মাছ ধরে দিন কাটিয়েছি  কিন্তু এখন একটি বৃহত্তর আঙিনায় আমার উত্তোরণ ঘটেছে ফলে সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত এখন বর্ষণ ক্লান্ত দিনগুলিকে ছাতায় প্রতিরোধ করে বা জানালা দিয়ে অবলোকন করতে করতে উপভোগ করতে হয় বা তার ঔদ্ধত্য সহ্য করতে হয় এখন শরীর বয়সের ভারে ক্লান্ত মানসিক শক্তিকে একটি বিশেষ পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে যদিও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, চিরশত্রু ব্যাধি এসে তাকে প্রবলভাবে দমন করে ফলে এই সুন্দর বর্ষণ মুখর দিনগুলি কিছুতেই খুশির গল্পে মুখরিত হয় না

আজ যখন বাড়ি থেকে অফিসে যাই, তখন বর্ষার একটি পূর্বাভাষ ছিল যে রকম পূর্বাভাষ ছিল, তাতে অফিস না যাওয়াটাই উচিত ছিল ক্ষেত্রে এক দিনের একটি ক্যাজুয়াল লিভ নেওয়া যেত কিন্তু যেহেতু পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ, যেহেতু নতুন নির্বাচিত সদস্যরা ক্ষমতা ভোগের আশায় উথাল পাথাল, তাই তাদের সম্মান জানাতে অফিস যেতেই হলো ঠিক সময়ে কিন্তু অফিসে গিয়ে কাজের কাজ কিছুই হলো না কিছু পুরানো বিল পেমেন্ট করলাম আর কিছুটা সময় গল্প আড্ডা দিলাম বেশ খানিকটা সময় পরচর্চাও করলাম আমি সাধারনত পরচর্চা করতে চাই না করিও না কারণ এটা আমার রুচিতে বাধে কিন্তু দশ চক্রে পড়ে আজ কিছুটা পরচর্চা হয়ে গেল কিন্তু যখনই বুঝতে পারলাম যে আমি অজান্তে পরচর্চায় ঢুকে পড়েছি, তখন নিজেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়ে চর্চা থেকে মুক্ত হয়েছি

বেলা তিনটার সময় শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি মাথায় বাজ পড়লো এখন উপায়! সকলের বাইক আছে সবাই নিশ্চিন্তে বাড়ি পালাবে কিন্তু আমি ধরা পড়ে যাবো কারণ আমাকে বাড়ি আসতে হলে মেসিন ভ্যান ধরে ফিরতে হবে এই বর্ষাতে ভ্যান পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ অগত্যা কি করা যায় ভাবছি এমন সময় দেখলাম আমাদের ডাক্তারবাবু তার স্কোরপিও নিয়ে বাড়ি ফিরছেন আমি আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি উনার গাড়িতে উঠে পড়লাম এবং নিশ্চিন্তে কাকদ্বীপে পৌছে গেলাম এবার কাকদ্বীপে বকখালী গামী বাসে উঠলেই নামখানা যাওয়া এবং সেখান থেকে এক খানা টোটো ধরে বাড়ি যাওয়া যাবে

বকখালির বাসে উঠেছি গাড়ি প্রায়ই ভর্তি কোন ক্রমে একটি সীট পেয়ে গেলাম আমি নিশ্চিন্তে বসে একটি চিড়াভাজার প্যাকেট কিনে চিবোতে লাগলাম এমন সময় একটি বউ উঠলো সে এসে দাঁড়ালো আমার পাশে এবার আমি অস্বস্তিতে পড়লাম আমার পাশে কোন নারী দাঁড়িয়ে থাকলে আমার এরকম হয় বউটিকে সম্মান জানিয়ে তাকে বসতে দেওয়া আমার কর্তব্য কিন্তু আমার শরীর সায় দিচ্ছে না কারণ এতটা সময় আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না তাই বাধ্য হয়ে চুপ করে রইলাম

এমন সময় বাসে উঠলো এক মাতাল বর্ষার আনন্দে বেশ কয়েক পেগ মেরে এসেছে বুঝলাম কিন্তু তার নেশাটা কিছুতেই হাঁটুর নীচে থাকে নি সেই নেশা বাড়তে বাড়তে একেবারে ব্রম্ভতালুতে গিয়ে ঠেকেছে যারফলে সে বাসের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেছে সে কখনো বলছে সবাইকে চুপ করে বসে থাকতে কারণ বাসটা তার নিজের কেনা তাই কাউকে আজ ভাড়া দিতে হবে না আবার বলছে ভাড়ার টাকা না দিয়ে তাকে যেন অসম্মান না করা হয় তারপর বাসে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত দুরন্ত গতিতে যাতায়াত করছে তার যাতায়াতের পথে কেউ বাধা হলে, তাকেও পিষে দিয়ে যাওয়ার উপক্রম করছে

তার এই রকম আচরণে আমার পাশে দাঁড়ানো বউটির বেশ অসুবিধা হচ্ছিল আমি বাধ্য হয়ে বললাম- মা, তুমি আমার জায়গায় বসো আমি একটু ওষুধ দোকান থেকে আসি কৌরব রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় সবাই নিশ্চুপ থাকলেও আজকের বাসের মধ্যে বউটির বস্ত্রহরণের মতো কান্ড ঘটবে মনে হতেই নিশ্চুপ বসে না থেকে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বউটিকে আমার সীটে বসাতেই মাতালটি রেগে একেবারে কাঁই আমাকে এসে বললো- মেয়ে দেখলেই দরদ একেবারে উঠলে পড়ে না আমি কোনো কথা বলিনি জানি বলে কো্নো লাভ হবে না আমি চুপ করে রইলাম মাতাল আমার কলার চেপে ধরে বললো- আমার সীট দরকার দে আমাকে একটা সীট দে বসতে তবুও আমি কিছু বলি নি কারণ বলে কিছু লাভ হবে না যা কিছু বলছে, সবই মদের ঘোরে

এমন সময় বাসে সবাই জেগে উঠলো তারা সবাই কন্ডাকটারকে বললো যে তিনি যেন মাতালটাকে বাস থেকে নামিয়ে দেয় কন্ডাকটার বেশ তাগড়াই লোক তিনি এতক্ষন বাসে ছিলেন না বাস ছাড়ার সময় হতেই বাসে উঠেছেন এবং যাত্রীদের কাছ থেকে মাতালের ব্যবহার জেনে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দিল বেচারী মাতাল কন্ডাকটারের সঙ্গে পেরে উঠে না বাধ্য হয়ে সে তার কাছে ক্ষমা চাইলো বাসে উঠে সবার কাছে ক্ষমা চাইলো তার খারাপ ব্যবহারের জন্য সব শেষে আমার কাছে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরে মাতালের কান্না জুড়লো আর ক্ষমা চাইতে লাগলো আমি ঠিক এই ভয়টা অনুমান করেছিলাম অনেক কষ্টে তার হাত থেকে রেহাই পেলাম ততক্ষনে বাস ছেড়ে দিয়েছে এবং মাতালের রঙ্গ তামাসা দেখতে দেখতে প্রায় অর্ধেকটা পথ পেরিয়ে উকিলের হাটে পৌছলাম

নামখানা পৌছাতে আমি নামখানায় নামলাম আমার সঙ্গে বউটিও নামলো তখনও বৃষ্টি পড়ছে আমি ছাতা খাটাতেই বউটি আমার ছাতার তলায় এলো এবং বললোকাকু, আমাকে একটু আপনার ছাতার তলায় আশ্রয় দিন অগত্যা নিজে ভিজে গিয়ে ছাতার তলায় আশ্রয় দিয়ে একটি নিরাপদ জায়গায় পৌছে দিলাম নিরাপদ জায়গায় পৌছে একটি প্রনাম ঠুকে দিল আমায় বললো- কাকু, আপনাদের মতো মানুষ আছে বলেই না আমরা এখনো নিরাপদে রাস্তায় বেরোতে পারি

প্রত্যেকটি মানুষ সারাদিনে কিছু না কিছু রোজগার করে আজ আমি অনেক বেশী রোজগার করেছি বউটির কাছ থেকে আজ আমি যা পেয়েছি, তা আমার জীবনের সব চেয়ে সেরা রোজগার

দেবনগর

০৭/০৮/২০২৩

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.