#বয়স_কমানোর_কৌশল
নমস্কার বন্ধু, আমি বাসুদেব ভট্টাচার্য। সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। আজ আমি আপনাদের একটি কৌতুক জনক গল্প শোনাতে চাই। গল্পটা বস্তব কিন্তু শুনলে মনে হবে গল্পের গরু গাছে উঠেছে। তাই বলি যারা আনন্দ পাওয়ার জন্য গল্প শুনতে চান, তারা শুনুন। আর যারা গল্পের গরুকে গাছে দেখতে চান না তারা গল্পের গরু গাছে ওঠে না এমন গল্প রচনা করুণ। কিন্তু ব্যাপারটা এত সোজা নয়। কেন? এর উত্তর আপনারা খুঁজুন। আমি শুধু উত্তরের জন্য আজীবন অপেক্ষা করতে রাজি।
আমার হয়েছে গলার সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমি গেলাম এক নাক,কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ডাঃ অম্বরীশ মুখার্জীর কাছে। তিনি আমার শহর কাকদ্বীপে চেম্বার করেন। তো যেহেতু আমি সামান্য চাকরি করি, তাই সামান্য পরিচিতি পেয়েছি এবং সেই পরিচিতির সুযোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে অগ্রাধিকার সংক্রান্ত সুবিধা পেয়েছি।
আমি যখন ডাক্তার দেখাতে গেলাম তখন খুব ভীড়। অনেক রুগী। তা প্রায় সত্তর আশিজন তো হবেই। সর্বনাশ এতো পেসেন্টের পরে ডাক্তার দেখাতে গেলে আমাকে একেবারে শেষে দেখাতে হবে। কিন্তু আমি আমার পরিচিতির সুবিধা নিয়ে কোন রকমে ১০ নম্বরে ঢুকতে পারলাম। ডাক্তার তখনো আসেন নি চেম্বারে। ডাক্তারের সাহায্যকারিনী এক সুন্দরী ললনা আমায় বললেন-দাদু, আপনি ১০ নম্বরে আছেন। আপনি এখানে বসুন।ডাক্তার এলে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। ললনা বিবাহিত, না অবিবাহিত, সধবা না বিধবা,স্বামীর রক্ষিতা না স্বামীর পরিতক্তা কিছুই বোঝা যায় না এবং সে সব বিষয় জানা বা না জানা নিয়ে আমার কোন দুঃখ নেই। কিন্তু আমাকে ‘দাদু’ হিসাবে সম্বোধন করায় খুব কষ্ট পেলাম। কি আর আমার বয়েস! শুধু না হয় দাড়িটা সামান্য একটু পেকে গেছে। ওতেই আমি দাদু!
-হ্যালো ম্যাম। বলতে পারেন কি যে আমার বাইরে যাওয়া ঠিক হবে কি না? আমি একটু কাজে যাবো। এই পনের কুড়ি মিনিটের জন্য। এতে আমার লাইনের ব্রেক আপ হবে না তো!
-আপনি যান দাদু। আপনি এলে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। ললনা উত্তর দিল।
-আমার হৃদয় আবার ব্যাথা পেলো। কিন্তু কিছু বলতেও পারি না। আমি ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে চলে গেলাম সোজা সেলুন দোকানে। ওখানে গিয়ে ভালো করে দাড়ি কাটলাম। নিজেকে একেবারে ফিটফাট করে আবার ক্লিনিকে এসে বসলাম।
এবার আমায় দেখে সেই তদারককারিনী ললনা
বললে-কাকু, এসে গেছেন! ভালো হয়েছে। আর এক জনের পর আপনাকে ঢুকিয়ে দেবো। একটু বসুন প্লিজ। আমি চুপচাপ ভালো ছেলে হয়ে বসে রইলাম।
-মিনিট পনের পর আমায় তদারককারিনী বললে- দাদা আসুন আপনি। আমি ডাক্তারের ক্যাবিনে ঢুকলাম। ডাক্তার দেখিয়ে বেরিয়ে এলে তদারককারিনী আমার কাছ থেকে প্রেসক্রিপশান নিয়ে সোজা ঔষধ দোকানে
গেলেন এবং সব ঔষধ কিনে বিলটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে কিভাবে কোন ওষুধ খাবো তা বুঝিয়ে দিলেন। আমি বেশ কৃতার্থ হলাম।
আমি আর সময় নষ্ট করলাম না। পার্স থেকে একখানা করকরে এক’শ টাকার নোট বের করে তদারককারিনীকে দিয়ে বললাম- আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন। আপনার কিছু পারিশ্রমিক আমার কাছ থেকে পাওয়া দরকার। এটা
রাখুন।
আপনার পরিশ্রমের সম মূল্য এটা নয় । কিন্তু সামান্য কিছু হলেও আমি দিতে চাই।
-না, ঠিক আছে দাদা। কোন ব্যাপার না। যা দিয়েছেন তাতেই আমি খুশি। সবচেয়ে বড় কথা আপনি আমায় সম্মান দিয়েছেন। আমার পরিশ্রমকে সম্মান দিয়েছেন। এর চেয়ে বড় কিছু হয় না। আপনি আমার নম্বর রাখুন। আবার যখন আসবেন আমাকে একটু শুধু ফোন করবেন। আমি আপনার সব ব্যবস্থা করে দেব।
আমি উনার নম্বর ও নাম জানলাম। তারপর পরষ্পর একরাশ ভুবন ভুলানো হাসির বিনিময় দিয়ে বিদায় জানানো হলো।
তাহলে জিনিষটা কি দাঁড়ালো। প্রথমে আমার পাকা দাঁড়ি আমায় দাদু বানালো। দাড়ি কেটে ফেলতে হয়ে গেলাম কাকু। অর্থাৎ পাকা দাড়ি হলো বয়সের নির্নায়ক। এবার যখন অল্প বয়সী ছেলেদের মতো কথা বলতে লাগলাম, একটু মেয়ে ঢলানো চরিত্র নিলাম, তখন আমি হয়ে গেলাম দাদা। অর্থাৎ কথা বলার স্টাইল, চরিত্রের নমনীয়তা, আমার বয়সটাকে আরও কমিয়ে দিলো কি!!! এভাবেই বয়স কি কমে কমে যায়!!! বন্ধুরা, আপনাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাই।
দেবনগর
০৫/০৮/২০২৩
Leave a Comment