পুর্ব রাগ
এ টি এম এর কাছে দাঁড়িয়ে অঙ্কিতা ভাবছিল কি করবে। অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই সে পিন জেনারেট করতে পারে নি। কারুর যে হেল্প নেবে সে ভরসাও করা যায় না। পিন নম্বর বলে কথা। কেউ জেনে গেলে সমস্যা আছে। এই রকম সাত পাঁচ ভাবছে অঙ্কিতা এমন সময় ব্যাংকের ম্যানেজার ও অন্য একজন এ টি এমে এলো টাকা ইনস্টল করতে। আর দেরী করলো না অঙ্কিতা। সে তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে ম্যানেজারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় এবং বলে -এক্সকিউজ মি স্যার, ক্যান আই কিপ অ্যা রিকোয়েস্ট?
-সিয়োর, ইউ ক্যান। ম্যানেজার বললেন।
-স্যার, আই ক্যান নট জেনারেট দ্যা পিন অফ মাই কার্ড। ইফ ইউ হেল্প মি টু জেনারেট দ্যা পিন, আই উইল বি অবলাইজড টু ইউ।
-ম্যানেজার মৃদু হাসলেন এবং তারপর অঙ্কিতাকে নিয়ে এ টি এমে প্রবেশ করলেন। মাত্র মিনিট পাঁচেকের মধ্যে তিনি অঙ্কিতার পিন নম্বর তৈরী করে দিলেন। এই কাজের মধ্যে দুজনের মধ্যে পরিচয় হয়ে গেল।
-আপনার নাম কি?
-অঙ্কিতা।
-বাড়ি কোথায়?
-দ্বারিকনগর।
-দ্বারিকনগর! দ্বারিকনগরের কোথায় বাড়ি?
-আজ্ঞে শিবালয় মন্দিরের কাছে।
-আপনি অনুপম মাইতিকে চেনেন? ওর পিতার নাম ধনঞ্জয় মাইতি।
-আজ্ঞে উনি আমার দাদা হন।
-তাই! তারমানে তুমি অনুপমের বোন।! তোমার বাড়িতে তো অনেকবার গেছি। কই তোমাকে তো কোন দিন দেখি নি।
-আজ্ঞে আমি মামার বাড়িতে থেকে মানুষ এবং ওখানেই থাকতাম। তাই আমাকে দেখেন নি।
-আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম। আপনি একটু দাঁড়ান। আমি এ টি এমে টাকা ইনস্টল করে দেই। তারপর আমার অফিসে একটু চা খেয়ে যাবেন। আমি টাকা ইনস্টল করছি। পালাবেন না যেন!
এই কথা বলে ম্যানেজার অর্থাৎ জয়ন্ত চৌধুরী এ টি এম এর সাটার ফেলে দিল এবং কাজে মন দিল। এদিকে অঙ্কিতা এ টি এমের বাইরে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে রইল। তার হৃদয় বীণায় জয়ন্ত যে রাগের অনুরাগ সৃষ্টি করেছে তার মোহ কাটিয়ে কিছুতেই বাড়ি যেতে পারছে না। আর পারবেই বা কি করে! প্রায় ছ'ফুট উচ্চতার জয়ন্ত একেবারে টুকটুকে ফর্সা, মাথায় কি সুন্দর কোঁকড়ানো কালো চুল! তার উপর ব্যাংকের ম্যানেজার বলে কথা! এমন ছেলের প্রেমে কে না পড়ে। কিন্তু কথা হলো এমন ছেলে কি এখনো সিঙ্গল আছে? দেখা যাক, কি বলে ম্যানেজার বাবু!
চা খেতে খেতে জয়ন্ত বললো- আমি দিন পাঁচেক হলো এই অফিসে এসেছি। একবার আপনাদের বাড়ি যেতে হবে আপনার মা, দাদার সঙ্গে দেখা করতে। আমি যে এখানে ম্যানেজার হয়ে এসেছি, তা উনারা এখনো জানেন না। তাই একটু জানিয়ে দেওয়া যাবে এবং পুরানো আড্ডাটা দেওয়াও হবে।
-যাওয়ার সময় একা একা যাবেন না কিন্তু। আপনার মিসেসকেও সঙ্গে নেবেন। তাহলে বেশ আনন্দ করা যাবে।
-আরে দূর, আমি এখনো বিয়েই করি নি।
-সে কি এখনো বিয়ে করেন নি! এমন চাকরি করেন, আর মেয়ের বাপ আপনাকে ছেড়ে রেখেছে! ভারি আশ্চর্য্য তো! তা আপনার কোন গার্লফ্রেন্ডও নেই!
- আরে দূর, ওসব আমার ঠিক আসে না। আমি খুব সাধারন ছেলে। আপনার মা ঠিক বোঝে আমাকে। বিয়ের প্রস্তাব যে আসে নি তা নয়। কিন্তু কাউকে আমার ঠিক পছন্দ হয় নি। তাছাড়া এই বেশ ভালো আছি।
অঙ্কিতা এবার উঠলো। বললো- যাবেন কিন্তু আমাদের বাড়িতে। মা কে গিয়ে আপনার কথা বলবো। আজ আসি বলে অঙ্কিতা ম্যানেজারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার সময় ওর নম্বর নিতে ভুললো না।
অঙ্কিতার হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে উঠলো। এতদিনে মনে হয় সে তার মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছে। এতদিন বোধ হয় এই মানুষটার জন্য সে চব্বিশটা বর্ষা অপেক্ষা করেছে।এতদিনে বোধ হয় তার প্রতীক্ষার অবসান হবে। এইভাবে আনন্দে ভাসতে ভাসতে সুন্দরী দীর্ঘাঙ্গী দীর্ঘকুন্তলা ডালিমদানা সদৃশ ওষ্ঠরূপা সুডৌলকুচযুগল সুশোভিতা ও সুদৃশ্য নিতম্ব ধারিনী অঙ্কিতা বাড়ির পথ ধরলো।
দেবনগর
১২/০৭/২০২৩
Leave a Comment