#কচ_দেবযানী_সংবাদ



কচঃ
সহস্র বছর হইয়াছে পুরণ গুরু শুক্রাচার্য্যে করিয়াছি উপাসনা।
গুরু দানিয়াছে হরেক শিক্ষা মৃতসঞ্জীবনী যা ছিল কামনা।
শিক্ষা সম্পুর্ন আজি ফিরে যাবো সুরলোকে পিতার আশ্রয়ে,
বিদায় জানাতে হবে ভগিনী দেবযানী গুরু শুক্র মহাশয়ে।
ছড়াইয়া রূপের রাশি দেবযানী প্রফুল্ল হৃদয়ে চলে কানন ভিতর,
বিদায় মাগিয়া লব এইক্ষনে এই অবসর।
দেবযানীঃ
হে কচ, হে মোর প্রিয়নাথ,হে অঙ্গিরা পৌত্র কি হেতু দাঁড়ায়ে হেথা,
হইয়াছে কি যজ্ঞ সমাপন, সমাপ্ত কি আশ্রমের সব কাজ যথা।
গো-পাল কি আসিয়াছে ফিরে, করিয়াছো কি সমিধ আয়োজন,
সব কাজ শেষ হয় যদি আমারে সেবার কিছু আছে প্রয়োজন।
চল মোরা যাই কাননের ভিতর যেথায় তুমি আমি রব,
হে নাথ, নৃত্যগীতে তুমি আমি নির্জন কানন ভরায়ে দেব।
কচঃ
হে দেবী, তোমারই প্রতীক্ষায় দাঁড়াইয়া আছি নির্জন বনছায়ে একাকী,
শিক্ষা মোর হইয়াছে সমাপন, যাব নিজ গৃহে বিদায় মোরে দেবে কি?
বিদায় কি জানাইবে মোরে হাসিমুখে, মন মোর অশান্ত মাতা লাগি।
যাইব স্বর্গ ধামে না করিয়া দেরি এই বেলা তব কাছে বিদায় মাগি।
হে দেবী, এত দিন তোমারে করেছি সেবা, গুরুকে মানিয়াছি পিতা,
হাসিমুখে বিদায় দেহ মোরে যাইব সেথায় যেথা আছে পিতা-মাতা।
দেবযাবীঃ
এ কি কথা শুনাইলে তুমি হে কচ, হে মোর জীবনের সাথী!
আমারে ফেলিয়া তুমি কোথা যাবে, একি তোমার ভীমরতি।
কচঃ
ভীমরতি কেন হবে দেবী!আমি বনবাসী ব্রহ্মচর্য করিয়াছি পালন।
এতদিন তোমারে ভজিয়াছি আমি হয়নি মন পাপ উচাটন।
গুরুকে মানিয়াছি পিতা,তোমারে জানিয়াছি যেন আপন ভগিনী,
এ জগতে এই জানি,জানে তরু পাখী ধেনু আর বনের হরিণী।
তাই বলি দেবি, এই শুভ দিনে এই ক্ষনে বিদায় দেহ মোরে,
আকুলি বিকুলি করে তনু মন মোর আজি সহস্র বরষ পরে।
দেবযানীঃ
মনে পড়ে প্রভু,তোমারে বধেছিল নিষ্ঠুর অসুরগন সবে বনান্তরে,
দেহ খন্ড তব খাওয়াইল সারমেয়ে ঠাঁই হলো তব কুকুর উদরে!
পিতারে অনুরোধ করি, দ্বিনেত্রে অশ্রু ভাসি বলেছিনু হায়,
আমারে আনিয়া দেহ আমার খেলার সাথী এই তরু ছায়ায়।
কচই জীবন মোর, কচের মরণই আমার মরণ জগৎ মাঝারে,
তুষ্ট হইয়া পিতা জিয়াইল তোমায় নিজ মন্ত্রবলে।
পুনরায় একদিন তোমারে বধি খন্ড করি পোড়াইয়া ফেলে,
মাংস ভস্ম সুরাসহ পাষন্ড অসুর সবে পিতারে খাওয়ালে।
আমার বিনয়ে পিতা নিজ প্রান ত্যজি বাঁচাইল তোমায়,
মৃত সঞ্জিবনী মন্ত্র সেদিন লভিলে আমারই দয়ায়।
এই সব করিয়াছি ভালোবেসে জীবনসাথী মানি,
অথচ আমারে ফেলিয়া তুমি যাবে ইন্দ্রপুরে এখুনি!
যেও না যেও না প্রভু, শোনো মোর কথা এই বেলা,
আমারে বিবাহ কর, করি কিছু সুখের রতি খেলা।
কচঃ
হে দেবী, তোমারে ভালোবাসিয়াছি সে তো ভগিনীর মতো,
তুমি মোর ভগিনী, তুমি মোর মাতা, লুপ্ত হোক তব মোহ মমতা।
সন্তান যেমতি মাগে মাতার কৃপা,তব কাছে তাই আমি মাগি,
আমারে বিদায় দেহ স্বর্গপুরে যাবো আজি জন্মদাতা লাগি।
দেবযানীঃ
এত অহংকার কচ কর কার লাগি বল তো আমারে!
সঁপিয়াছো মন প্রান কোন জনে কোন সে নারীরে?
কি আছে সেই নারী মাঝে যা আমার দেহে নাই!
আমি কি এমন অভাগা নারী তব উপযুক্ত নই?
কচঃ
হে দেবী, হে মোর ভগিনী সুন্দরী রূপসী তুমি এই ধরাধামে,
তোমার যোগ্য নারী কেহ নাই রূপে কিংবা কামে।
সহোদরা মানিয়াছি তোমা সেই প্রথম সাক্ষাৎ হইতে,
ভ্রাতা বলি লহ কাছে দূর হোক কাম ক্রোধ তোমাতে আমাতে।
দেবযানীঃ
না মানিব না তব কথা,আমি শুক্র দুহিতা দেবযানী
আমার বাসনা পুর্ন নাহি হলে পাইবে অভিশাপ বাণী।
পিতারে ছলনা করি যে বিদ্যা শিখিলে নিজ গুনে,
সে বিদ্যা ব্যর্থ হবে প্রয়োগ করিলে প্রয়োজনে।
আমি যেমন জ্বলি ব্যর্থ প্রেমে লজ্জা পাই প্রত্যাখানে,
তেমনই লজ্জা যন্ত্রনা পাইবে লব্ধ বিদ্যার নির্গুনে।
কচঃ
ও গো শুক্র দুহিতা,ও মোর ভগিনী ওগো দেবযানী,
না বুঝিয়া অকারণে আমারে দিলে অভিশাপ বাণী!
আমিও দিলাম শাপ তোমাতে অবশ্যই ফলিবে,
কোন ব্রাম্ভন পুরুষের সঙ্গে কভু বিবাহ না হবে।
এ জগতে সকল ব্রাম্ভন বধূ তোমারে দুষিবে,
ব্রম্ভন হইয়া তুমি নীচু জাতি ক্ষত্রিয় পুষিবে।
চলিলাম স্বর্গধামে বিদায় দেহ মোরে আজি,
ভ্রাতা বলিয়া মোরে দাও গো প্রেমের সাজি।
কপিরাইট @তারাপদ মাঝি
২২শা মে ২০১৯
দেবনগর।

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.