বাঙালীর চরিত্রের উলট পুরাণ।

বাঙালীর চরিত্রের উলট পুরাণ।
বাঙালীর গৌরবের দিন শেষ। বাঙালীর যে বিশেষ গুন্টির জন্য গর্ব করতো আজ তা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঙালী চিন্তায় ও আচার ব্যবহারে ভারতসেরার গর্ব এককালে অর্জন করতো। সুভাষ চন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চিত্তরঞ্জন দাস, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রাসবিহারী বসু, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ক্ষুদিরাম বসু প্রমুখ ব্যক্তিগন সারা ভারতে নমস্য। তাদের রক্ত আমাদের শিরায় শিরায় প্রবহমান। অথচ তাদের চলা পথ ছেড়ে আমরা বিপথে চালিত হয়েছি। আমরা কখনো আমাদের কৃত কর্মের গুন বিচার করিনা।দিনের পর দিন আমরা এক ভয়ংকর পরিনতির দিকে ধাবিত হচ্ছি।
এখনো অবধি মানুষের বিচারে গনতন্ত্রই দেশ শাসনের সর্বশ্রেষ্ঠ যন্ত্র। এই যন্ত্রে শোষন সবচেয়ে কম হয়, মানুষের বাক স্বাধীনতা থাকে, মানুষ নিজেদের শাসন করার জন্য নিজেদের মধ্য থেকে মানুষ নির্বাচন করে দেশ শাসনের মাথায় বসায়। নির্বাচিত লোকেরা নিজেদের শাসন করার জন্য সর্বজন উপকারী এক শাসন তন্ত্র বানান। সেই শাসন তন্ত্রের অন্যতম শর্ত হলো প্রতি ৫ বছর অন্তর নির্বাচন করে জনগনের রায় নেওয়া যাতে অপদার্থ, জনগনের অহিতকারী, সরকারী অর্থ তছরুপকারী শাসককে শাসন যন্র থেকে সরিয়ে দেওয়া। সেই জন্য প্রতিটি নির্বাচন গনতান্ত্রিক দেশের একটি গুরুত্বপুর্ন অংশ।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে একজন নাগরিকের কতকগুলি বিষয় তার ভেবে দেখার দরকার। (১) ভোটার যদি কোন সরকারী অনুদান পেয়ে থাকলে তার বিনিময় স্বরুপ আপনার মুল্যবান ভোটটি শাসক দলকেই দিতে হবে এমটা চিন্তা মনে না আনাই ভালো। আপনি যদি কিছু পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনার টাকা আপনিই পেয়েছেন। কেউ রোজগার করে বা বাপের জমানো টাকা আপনাকে দেননি। সামান্য কিছু অনুদান বা সামান্য এককালীন কিছু টাকার বিনিময়ে মুল্যবান ভোটটি অপাত্রে প্রদান করে নষ্ট করা উচিত নয়। এখানেই বাঙালীর চরিত্র বদল হয়েছে। একসময় বাঙালী নিজের সর্বস্ব দান করে নিজে নিস্ব হয়েছে। কিন্তু আজ বাঙালী অপরের কাছ থেকে ভিক্ষে নিয়ে ধনী হতে চাইছে। তার ধনী হওয়ার এতটাই আকাঙখা যে সামান্য ওল কচু নিতেও কুণ্ঠা বোধ হয় না
(২) অভিজ্ঞতায় ও ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, নিজের পরিশ্রম ছাড়া কখনো কখনো ধনী হওয়া যায় না। কেউ কেউ চুরি, ডাকাতি, বদমায়েশী,জোচ্চুরি,ঠকবাজী ইত্যাদি করে সাময়িকভাবে ধনী হয়েছেন। কিন্তু তার স্থায়ীত্ব বেশীদিন হয়নি। কিন্তু তার পাপের কৃতকর্মের ফল তার পরবর্তী প্রজন্মতে এমন প্রভাব ফেলে তা বর্ননা করা যায় না। বাংলার প্রবাদে আছে -"কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে"। বাঙালী এই প্রবাদ থেকে বেরিয়ে এসে যেভাবে কষ্ট বিমুখ হয়ে "কেষ্ট" রুপ অর্থ পাওয়ার চেষ্টা করছে, তা তার হীন কার্যেরই পরিচয় মেলে।
(৩)বাঙালীর বোঝা উচিত সমাজে কিছু টাকা ছড়িয়ে দিলে সে সমাজের কোনদিন উন্নয়ন হয় না। উন্নয়ন একটি সুষম খাদ্যের মতো। সুষম খাদ্যে যেমন সব রকম ভিটামিন, মিনারেল থাকে, তেমনি উন্নয়নে সবকিছু থাকবে।একটি সমাজের উন্নয়ন বলতে সেই সমাজের শিক্ষার উন্নয়ন, আয় ও ব্যয় ক্ষমতার উন্নয়ন,স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির উন্নয়ন,সৃষ্ট স্থায়ী সম্পদের রক্ষনের উন্নয়ন, মানসিক সুপ্রবৃত্তির উন্নয়ন প্রভৃতিকে বোঝায়।সুতরাং একটি শাসনযন্ত্রের একটি পরিচালককে যথেষ্ট শিক্ষিত হতে হবে। তিনি যদি প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত না হন, তা হলেও চলবে।
(৪) শাসক ঠিক পথে চলছেন কিনা তা দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব বুদ্ধিজীবীর। বুদ্ধিজীবীরা যুগে শাসকের ভালো মন্দ দেশের আমজনতার কাছে তুলে ধরেছেন। কখন কোন শাসকের কাছে বাহবা পেয়েছেন, আবার কখনো কোন শাসকের কাছে যন্ত্রনাও পেয়েছেন। কিন্তু 'কখনো তাদের নীতি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। বর্তমানে বাংলায় বুদ্ধিজীবীরা শাসকের আসনে বসেছেন। তারা কিভাবে শাসন করছেন, তা জনগনই বুঝতে পারছেন। আর যার এখন শাসনে যাননি, তারা হয় "বুদ্ধজীবী" নয় " মমতাজীবী"। সুতরাং তাঁদের নিকট থেকে নিরপেক্ষতা আশা করা অন্যায়।আর কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা সাহসী পদক্ষেপ নিতে ভয় পান।তাদের কারুরই রাজাকে উলঙ্গ বলার সাহস নেই।
(৫) বাঙালী চিরকালই শান্তিপ্রিয়। কিন্তু তার শান্তি চিরদিনই বিঘ্নিত হয়েছে পেশিশক্তির দ্বারা। কিন্তু পেশীশক্তির দ্বারা কখনো কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। ইতিহাসে এর নজিরও নেই। সেই সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের আমল থেকে আজ অবধি নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনের প্রাক্কালে পেশীশক্তির উত্তোরোত্তর বিকাশ হয়েছে। সবাই ভেবেছে পেশীশক্তির সাহায্যে শাসনদন্ড ধরে রাখবে। কিন্তু কালের ইতিহাসে তাদের প্রত্যেকের ঠাঁই হয়েছে। কিন্তু শাসন যন্ত্রের মাথায় বসে থাকার সময়, এসব তাদের হুঁস থাকে না।সুতরাং মানুষের উচিত সমস্ত পরিস্থিতি বিচার করে, সংকীর্ন স্বার্থের কথা ভুলে, সমাজের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে নিজের ভোট সঠিক জায়গায় দেওয়া। প্রয়োজনে সঠিক ব্যক্তিকে সমাজ থেকে জোর করে তুলে নিয়ে নির্বাচনে নমিনেশন করিয়ে দেওয়া। আসুন সবাই মিলে শাসন করি, পেশিশক্তি মুক্ত শাসন যন্ত্র গড়ি।
তারাপদ মাঝি,
দেবনগর
৮/০৪/১৮

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.