খোকনদার চায়ের দোকান

খোকনদার চায়ের দোকান সবার মিলন স্থল,
চায়ের ফাঁকে সবাই মিলে আড্ডা মারেন কেবল।
হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর পাড়ে তার চায়ের দোকানখানি,
যাতায়াতের ফাঁকে মোরা সবাই তাকে চিনি।
নদীর ঘাটে মুটেমজদূর মাঝিমাল্লা মহাজন,
যাওয়া আসার পথে তাদের চা-পান বড্ড প্রয়োজন।

অনিশটা অনেকদিন আড্ডা মারে ওখানে,
একদিন উনার দোকানে ঢুকি বড় বিরক্ত মনে।
সকাল থেকে অফিসে গেছি গরমে পোষাক ভিজে,
এমন গরমে চা খাওয়া !ভাবতে পারি না নিজে।
দুজনে মিলে দোকানের ভিতর তক্তাপোসে বসলাম,
আয়েশকরে দুজনে দুটো সিগারেট ধরালাম।
এরকম প্রতিদিনই দোকানে আড্ডা হতো,
অনেকেই বন্ধু হলো বীরেন, দেবু আরও কতো।

জ্যোতিষ নিয়ে চর্চা হতো বীরেন দাদার সাথে,
ব্যবসা বাকচাতুরী শেখা হতো দেবুদার হাতে।
খোকনদা ঈশ্বরভক্ত চুপচাপ থাকেন সদাই,
ভবিষ্যৎ বানী করলে তিনি অবশ্য মিলবেই।
সবচেয়ে ভালো বন্ধু হলো দোকানের ঐ তক্তাপোষ,
তক্তাপোষ নাই পেলে হতো সেদিন চায়ের উপোষ।
এমনি করে কত সন্ধ্যা কিংবা সোনালী বিকাল,
গল্পে আড্ডায় দিন কাটতো যদিও মাঙ্গা দিনকাল।

হঠাৎ একদিন শমন এলো ভাঙতে হবে দোকান,
সব দোকান ভাঙতে হবে তবে হবে ব্রিজখান।
সব দোকানী জোট বাঁধলো করলো অনেক প্রতিবাদ,
কোন কিছু কাজ হলো না দোকান ভেঙে বরবাদ।
সব দোকানের মতো চা দোকানও ভাঙলো,
আমাদেরও আড্ডা দেওয়ার জায়গাখানা ঘুচলো।

আজও মোরা অফিস যাই, দেখি বাজার শ্মশানভুমি,
কোকনদার দোকানের কাছে অভ্যাসমতো থামি।
আজ দোকান নেই, চায়ের কাপ হাতে আড্ডাও নেই,
ব্যাকুল হৃদয় খুঁজিছে আশ্রয়, আর কোথাও যদি পাই।

তারাপদ মাঝি
দেবনগর
০৩/০৯/২০১৪

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.