প্রাতঃভ্রমণ



প্রাতঃভ্রমন

ভোরের আলো তখনও ফোটেনি।
ধানীজমির বুকচিরে যাওয়া শিশিরে ভেজা
মেঠো রাস্তায় শীতের চাদর মুড়ি দিয়ে
হেঁটে চলেছি অশতিপর বৃদ্ধের মতো।
দুইপাশে কাঁচা শোনা শায়িত।
আনকো আলোয় তার গা চুয়ে পড়ছে মুক্তোবিন্দু।

পূব গগন এখন রক্তাভ,
ধরিত্রী বিদারিত হয়ে গলিত লাভার উদ্গীরণ হবে মনে হয়।
বাড়ি বাড়ি বঙ্গবধূ আলুথালু বেশে উঠানে আবির্ভূত।
এখনও নিজেরে দর্পনে দেখে নাই সে।
কারও সিঁদুর তাই চ্চিবুকে চর্চিত,
আমারে হেরিয়া তাদের সলাজে গৃহপ্রবেশ।
নারীর ভূষণ এখনও হয়নি ঙ্খলিত।

এমন সময় সীতাবৌদি গুটি গুটি পায়ে,
কাস্তে হাতে চলিছে স্বর্ন কাটিবার তরে।
এত ভোরে তারে দেখি অবাক হয়ে যাই।
গায়ে তার ছিন্নবস্ত্রখানি, আর কিছু নাই।
কম্পিত কিশলয়ের মতো চলিছে কাঁপিতে কাঁপিতে।
শুধালেম তারে, ‘বৌদি কোথা যাও?’
আমার কথা শুনি বিষ্ফারিত নয়নে আমারে দেখে।
বলে, ‘স্বপন না কি? এতো ভোরে কোথা যাও?’
‘কোথা আর যাব ভাই, শরীরে বসেছে রোগ,
তারে বাগে আনিবার তরে ভোরে হাঁটা প্রয়োজন
বৈদ্যের বিধানে তাই বাহির হয়েছি প্রাতে’।
‘তা তুমি কোথা যাও, ধান কাটিবার তরে বুঝি?’
‘হাঁ ভাই, সংসারে তো আমার কেহ নাই।
ছেলে দেখে নাই বলে জামাতায় রাখি দ্বারে,
সেও ছেলের মতো, সংসারে মন নাই।
এই বয়সেও কাজ করে যাই’।
কথায় কথায় খানিক পথ চলি।
কত সুখ দুঃখের কথা শুনি তার কাছে।
তারপর আবার একা একা চলি।
ভাবি তার কথা।
নাট্যকারের কথাই আমার ঠিক মনে হয়-
‘সুখ স্বপনে, শান্তি শ্মশানে’।

তারাপদ মাঝি
০৪/১২/২০১৬

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.