বাজারের সেরা শেয়ার


অপূর্ব ইউটিউবে ভিডিও দেখছে। ভিডিওর শব্দ বেশ জোরেই চলছে। এতটা জোরে চলছে যে কুড়ি পঁচিশ ফুট দূর থেকে বা পাশের ঘর থেকে অনায়াসে শোনা যায়। ফলে অপূর্ব'র বাবা অতুলবাবু বেশ স্পষ্টই পাশের ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছেন। প্রথমে তিনি ভিডিওটিকে এতটা গুরুত্ব দেন নি। কিন্তু পরে তার কানে শেয়ারের কথাটি যেতেই তিনি ভিডিওর সাবজেক্টে মন দিলেন। কিন্তু একি! তার অপূর্ব এইটুকুন বয়সে অর্থাৎ এই ইলেভেনে পড়তেই শেয়ার বাজারের ভূত ওর মাথায় চেপেছে! আর তখনই তার বিশ বছর আগের স্মৃতি মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থে এক ভয়ের অনুরণন ঘটে। তিনি তৎক্ষনাৎ ছেলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- তুই কিসের ভিডিও দেখছিস অপূর্ব?
-শেয়ার বাজারের ভিডিও দেখছি বাবা। কিভাবে অল্প পুঁজি নিয়ে শেয়ার বাজারে নেমে ধনী হওয়া যায়, তারই একটি ভিডিও দেখিছি। অপূর্ব হেঁসে উত্তর দেয়।
-শেয়ার বাজারে কেউ ধনী হয় না। যদিও হয়, তাও শতকরা পাঁচজন। বাকি পঁচানব্বই জন ভিখারী হয়। শেয়ার বাজার একটি ফাটকা বাজার। এক রকম জুয়া খেলা। আমি তোকে নির্দেশ দিচ্ছি, তুই আর ঐ জাতীয় ভিডিও দেখবি না। আর শেয়ার বাজার নিয়ে কোন দিন মাথা ঘামাবি না। এটা আমার নির্দেশ।। এই নির্দেশের যদি অবমাননা হয়, তাহলে আমার থেকে আর কেউ এতটা খারাপ হবে না।
অপূর্ব বিস্ময়ে অবাক হয়ে যায়। সামান্য শেয়ার বাজারের ভিডিও দেখছি বলে বাবা এত রেগে গেল কেন? এর পেছনে কি কোন কারণ আছে? মা'কে জিজ্ঞাসা করে জানতে হবে। যাই হোক না কেন, অপূর্ব স্থির সিদ্ধান্ত নেয় যে, যে করেই হোক শেয়ার বাজারে সে বিনিয়োগ করবেই। সুতরাং এর জন্য তাকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেল। অপূর্ব'র এখন বি. কম থার্ড ইয়ার চলছে। হঠাৎ ফাগুনের শেষে অপূর্ব'র বোনের বিয়ে ঠিক হয় যায়। খুব ধনী পরিবারে বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। হবু বোনাই হাইস্কুলের শিক্ষক। অপূর্ব'র বাবা জমি বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বিয়ের দিন পাঁচেক আগে অতুলবাবু বিপদে পড়লেন। যিনি জমি কিনবেন বলেছিলেন, তিনি মারা গেলেন। ফলে টাকার অভাবে অতুলবাবুর বিপদের সীমা রইল না। তিনি পাগলের মতো যার তার কাছে যাচ্ছেন টাকার জন্য। জমি কেনার জন্য অনেককে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সবাই অতুলবাবুর বিপদ বুঝে খুবই কম দামে জমি কিনতে চাইছেন। কিন্তু কম টাকায় জমি বেচলে কিছুতেই বিয়ের জন্য টাকা কুলাবে না। তাই কি করবেন ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না, তখন অপূর্ব বাবাকে বলে যে বোনের বিয়ের জন্য খরচের টাকা সেই দেবে।
-বোনের বিয়ের জন্য কত টাকা লাগবে জানিস? অতুলবাবু অপূর্বকে জানায়।
-কত টাকা বাবা? অপূর্ব জিজ্ঞাসা করে।
-প্রায় পাঁচ লাখ টাকা তো লাগবেই।
-ঠিক আছে পাঁচ লাখ টাকা আমি দেব।
-অতুলবাবু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে - পাঁচ লাখ টাকা তুই দিবি! তুই এত টাকা পাবি কোত্থেকে!
-জুয়া খেলে রোজগার করেছি বাবা।
- জুয়া খেলে?
-শেয়ার বাজারকে তুমি তো জুয়া বলো। সেই শেয়ার বাজারে টাকা খাটিয়ে আমি প্রায় দশ লাখ মতো রোজগার করেছি। তার থেকে না হয় বোনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা খরচ করবো।
-কিন্তু শেয়ার বাজারে টাকা খাটানোর মতো এত টাকা তুই পেলি কোথেকে?
-তুমি কলেজে পড়ার জন্য যে খরচ দিতে তার থেকে অনেক চেষ্টা করে টাকা বাঁচাতাম। প্রাইভেট টিউশান করে টাকা জমিয়ে সব শেয়ার বাজারে লাগিয়েছি। সব সময় যে লাভ হয়েছে, এমনটা নয়। কখনো কখনো লোকশান নিতে হয়েছে। লাভের সংখ্যা বেশী বলে, এত টাকা জমাতে পেরেছি।
-তবে লোকে যে বলে "শেয়ার বাজার মানে জুয়া" এটা কি তাহলে ভুল?
-অবশ্যই ভুল। লোকে পড়াশুনা না করে, শেয়ার বাজার না বুঝে, যে কোম্পানীর শেয়ার কিনছে তাকে না বুঝে শেয়ার কিনে ঠকে। সব কিছু বুঝে শেয়ার কিনলে যে ঠকবে না, এমনটা নয়। কিন্তু বুঝে কিনলে ঠকবার সম্ভাবনা কম হয়। লাভের হার বেশী হয়। দেশের জনগন শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগ না করলে দেশের উন্নতি হয় না। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন। যারা কোটিপতি হয়েছেন, তাদের মধ্যে রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা অগ্রগন্য। তিনি মাত্র পাঁচ হাজার টাকাকে শেয়ার বাজারে খাটিয়ে আজ পাঁচ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সুতরাং শেয়ার বাজার যে জুয়া নয়, তা এখন বুঝতে পারছো তো?
অতুলবাবু মাথা নোয়ালেন ছেলের বুৎপত্তি আর মেধার কাছে। তিনি বুঝতে পারলেন যে তার বয়স হয়েছে। এবার তার রিটায়ার্ড হওয়ার সময় এসে গেছে। তার উত্তরাধিকারী সাবালক এবং স্বাবলম্বী হয়ে গেছে। তাই তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন- তাহলে বোনের বিয়েটা তুই দেখ। আমি তোকে সাহায্য করবো।
কপিরাইট @তারাপদ_মাঝি
দেবনগর
১৪/০৮/২০২২

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.