#স্বপ্নফল_বিচার(দ্বিতীয়_পর্ব)

#স্বপ্নফল_বিচার(দ্বিতীয়_পর্ব)
সঞ্চিতার ঠাম্মার নাম হলো মোক্ষদা। তিনি বকুলপোতা গ্রামের বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত মহিলা। বয়স আনুমানিক সত্তর বছর । কিন্তু এখনো তিনি একেবারে ঋজু হয়ে হাঁটতে পারেন এবং নিজের কাজগুলো নিজেই অবলীলায় করতে পারেন। তখনকার দিনে উনি পঞ্চমশ্রেনী পর্যন্ত পড়েছিলেন। তারপর গ্রামের মোড়লের আপত্তিতে আর পড়া হয়ে ওঠেনি ।
মোক্ষদার নিজস্ব একটি পৃথিবী আছে। সেই পৃথিবীতে তিনি একমাত্র রানী। তিনি রানী হয়ে তাঁর রাজ্য শাসন করেন। গ্রামের মানুষের স্বপ্নের অর্থ বলে দেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবে ফলবে কিনা তাও বলে দেন। আবার তিনি কারও হস্তরেখা পড়ে তার আপদ বিপদের ভবিষদবানী করেন। তবে তিনি গাছ গাছাড়ার দ্বারা টোটকা চিকিৎসার জন্য বেশী জনপ্রিয়। সারাদিন গ্রামের কোন না কোন মানুষের সঙ্গে আর তাঁর সখের পানের বাটার সঙ্গে দিব্যি দিন রাতের সময়গুলো কাটিয়ে দেন।
সকালে মোক্ষদা সবেমাত্র পানের বাটাটি নিয়ে বসেছেন, এমন সময় তাদের উঠানে উপস্থিত হলেন পাশের পাড়ার স্বরোজ পাল। তিনি এসে মোক্ষদাকে বললেন- মাসি, কাল রাতে একটি ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নটির অর্থ কি হতে পারে এবং তাতে আমার ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাই।
-তাহলে তোমার স্বপ্নটি বল? শুনে দেখি সেই স্বপ্নটি তোমার নিকট শুভফলদায়ক কিনা!
- আমি প্রায় ভোরের দিকে স্বপ্ন দেখলাম-আমার মাথাটি অত্যন্ত বড় হয়ে গেছে এবং সেই বড় মাথার বৃহৎ কপাল দেখে নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছি!
-আর কিছু স্বপ্ন দেখলে কি?
-আজ্ঞে না। শুধু এইটুকুন। কিন্তু এর অর্থ কি মাসি?
মোক্ষদা স্বপ্নের বিবরন শুনতে শুনতে পান সাজিয়ে ফেলেছেন। সেই পান গালে পুরে হঠাৎ স্বরোজের হাতখানি টেনে নিয়ে তার হস্তরেখা বিচার করলেন। তারপর বললেন- তোর কপাল ভালো স্বরোজ।তুই আগে মিষ্টি আন।
-কেন মাসি?
-তুই যে স্বপ্ন দেখেছিস তার অর্থ হলো- তোমার সুখের দিন আগত। তোমাকে আর কষ্ট সহ্য করতে হবে না। কারন এবার তোমার বউয়ের কোল আলো করে এক সুপুত্র জন্মলাভ করবে তারই সৌভাগ্যে তোমার কপাল খুলে যাবে। তোমার হস্ত্অরেখা বিচার করে আমি এই ফলের নিশ্চয়তা লাভ করেছি।
-স্বরোজ আনন্দিত হয়ে মোক্ষদার পায়ের কাছে দশটাকার নোট রেখে প্রনাম করে বললেন- তাই যেন হয় ঠাকুর। আমি আর একা সংসার টানতে পারছি না।
-তুই আগে বল, তোর বউ পোয়াতি কি না?
-আজ্ঞে হ্যাঁ মাসি। আমার বউ এখন সাত মাসের পোয়াতি।
- তোর বেটা হলে কিন্তু মিষ্টি খাওয়াতে হবে।
স্বরোজ মিষ্টি খাওয়াবে বলে স্বীকৃত হয়ে মোক্ষদার উঠান হতে বের হয়ে গেল।
এই ঘটনার আড়াই মাসের মধ্যে স্বরোজের বউ এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। মোক্ষদার স্বপ্নফল মিললো বলে গ্রামের সবাই ধন্য ধন্য করলো।
কপিরাইট@তারাপদ মাঝি।
২৮শে ফেব্রুয়ারী ২০১৯

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.