#আরও_আরও_আলো_দাও_প্রভু

#প্রবন্ধ
#আরও_আরও_আলো_দাও_প্রভু

একটি ঘটনাঃ একজন শিক্ষিকা ক্লাসে পরীক্ষা চলাকালীন( আমার মনে হয়েছে যে ক্লাসে পরীক্ষা চলছে) টেবিলে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। সে ছবি তুলে আর একজন শিক্ষক ফেবুতে ঐ ছবি শেয়ার করেছেন। সেই ছবি শেয়ার নিয়ে শেয়ারকারীর ইনবক্সে শিক্ষিকার পক্ষ নিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলাম।
আমার মন্তব্যঃআমি অন্তত এরকম পোষ্ট পছন্দ করিনা। ম্যাডাম হয়তো এরকম আচরন করেছেন। কিন্তু তিনিতো মানুষ। সুবিধা-অসুবিধা বা অসহায়তা থাকতেই পারে। এটাকে এমন করে তুলে ধরে ছাত্রদের কুশিক্ষা দেওয়া উচিত নয়। মানুষকে সম্মান দিলে তিনি আপ্রান সেই সম্মান রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
শিক্ষকের প্রত্যুত্তরঃ টিচাররা পড়াবেন, এটাই স্বাভাবিক। ঘুমোচ্ছেন বলেই সেটা ব্যতিক্রম। তাই সেটা আত্মশুদ্ধির জন্য অবশ্যই প্রচারের প্রয়োজন। নাকি "দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি??" এরকম আত্মসমালোচনা নেই বলে জিরো ফ্রেম অব রেফারেন্সে আজ পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার এই হাল! কোড অব কন্টাক্ট মানতে বললেই সমস্যা! দিনে দিনে কেন ক্রমাবনতি সেটা না নিজেকে জিজ্ঞেস করে শুধু পরিকাঠামো আর রাজনীতিকে শিখণ্ডী করে হাত ধুয়ে বা না ধুয়েই তুলসীপাতা ভাবছি!
কেন, ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে মানুষ মানুষের মাংস খায়নি?? হ্যাঁ,শিক্ষাব্যবস্থায় মন্বন্তর চলছে তাই কাক হয়ে কাকের মাংস থুড়ি শকুনও মাঝেমধ্যে হতে হয় বৈকি! ভাগ্যিস আমি নিজেই একজন টিচার! নাহলে আপনিই সেই আকাশ থেকেই ছিঁড়ে খেতেন থুড়ি ভার্চুয়ালি!
এমন ভাব যেন সন্ত্রাসবাদের সমালোচনা করলে ছোটখাটো সন্ত্রাসবাদী হতে হয়!
আমার জবাবদিহিঃ আপনাকে ধন্যবাদ যে আপনি একজন সচেতন নাগরিক এবং দায়িত্ববান শিক্ষক। আপনি ঠিকই বলেছেন দাদা “ দ্বার বন্ধ করে ভ্রমটাকে রুখি” জাতীয় কাজ কখনোই বরদাস্ত করা যাবে না। সমাজের যত জঞ্জাল আছে সব কিছু পরিস্কার করার দায় আমার আপনাদের আছে(আমিও একজন দ্বায়িত্ববান নাগরিক। সমাজের প্রতি আমারও একটি দায়িত্ব আছে তাকে সুন্দর করে গড়ে তোলা)। কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়ে অত্যন্ত সতর্কভাবে করতে হবে। কারন আমার কাজ যেন অকাজ না হয়ে যায়। আপনি শিক্ষক সে কথা আরও একবার স্মরন করে বলি সমাজে চার জাতীয় মানুষের সঙ্গে একটু বিবেচনা করে কাজ করতে হয়। যেমন-
১. শিক্ষকঃ ইনি সর্বশিক্ষার গুরু। তাই এঁকে জাতীর মেরুদন্ড বলা হয়। শিক্ষক যা শেখাবেন তাই হবে জাতীয় সম্পদ। সুতরাং ইনি অসহিষ্ণু হলে.... কি হবে তা আপনার থেকে ভালো কেউ বুঝবেন না।
২.ডাক্তারঃ খারাপ ব্যবহার করলে কি হবে সে তো সকলের জানা। তাই তো ডাক্তারকে ভগবানের অ্যাসিস্ট্যান্ট বলা হয়।
৩.উকিলঃ এটা আর বলতে লাগে না।
৪. পুলিশঃ উকিলের দোসর। এই চারজনকে ভদ্রভাবে সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার পর যদি না সংশোধিত হন, তাহলে খারাপ উপায় অবলম্বন করতে হয়। ম্যাডামের ক্ষেত্রে তা করা হয়েছিল কি?
আপনার বিজ্ঞানে তো আলোর প্রতিসরণ নিয়ে তো একটি অধ্যায় আছে। সেখানে বলা হয়েছে যে একটি সোজা লাঠিকে জলে অর্ধেকটা ডোবালে তাকে বাঁকা দেখায় কেন? এ ক্ষেত্রে লাঠিটা কিন্তু বাঁকা না। ম্যাডাম এতো বড়ো হলঘরে টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমার মনে হয় তিনি অসহায় হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। একটু জেনে নিয়ে দোষী সরাসরি প্রতিবাদ করলে আমার মনে হয় সেটাই ঠিক হতো। আসলে কি করবো স্যার, আপনার মতো একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষক যে শিখিয়েছেন “ মানীর মান করিব হানি, মানীরে শোভে হেন কাজ!”
আপনার মতো আমারও মনে খুব কষ্ট হয় জানেন। কিছু বলতে পারি না। কারন আমি ভীতু মানুষ। ভয়ে তো মরে গেছি। দেহের মৃত্যু হলে আর একবার মৃত্যু হবে। কিন্তু আমারও আপনার মতো প্রতিবাদী হতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছা করে সমাজ বা পৃথিবীটাকে পালটে দেই। এই পৃথিবীকে আবার বাসযোগ্য করে তুলি। কেমন? যেমন –
১. প্রত্যেকটি মানুষ জানে পলিথিন(পলি-ইথিলিন) খুব খারাপ। এই পলিথিনই একদিন পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।অথচ সকাল সন্ধ্যে সেই পলিথিনে মাছ, সবজি, মুদিবাজার নিয়ে বাড়ি ঢুকছি। যে দোকানে পলিথিন নেই, সেখানে খদ্দের নেই। অথচ পলিথিন দেখলেই আমরা কেউ প্রতিবাদ করি না।
২.সকলেই দেখবেন, আমার আপনার বাড়িতে কিছু বখাটে ছেলের জন্ম দিয়েছি যারা অপ্রয়োজনে একটি করে বাইক বা স্কুটি করে দিয়েছি। কাজ নেই, কারণ নেই। অথচ বাইক চালিয়ে এখানে ওখানে আড্ডা দিচ্ছে। ও সারাদিনে বাইক চালিয়ে যে পরিমান পেট্রল পোড়ায়, সেই পেট্রল এক'শ জনের সারাদিনের অক্সিজেন নষ্ট করে। এ রকম চললে পৃথিবীতে আর কতদিন আমরা বাঁচবো। অথচ কেউ প্রতিবাদ করিনা।
৩.সামান্য অনুষ্ঠান বা বারোয়ারী পূজোতে ডিজে বাজিয়ে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। সবার কষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ সহ্য করতে পারে না।।তবুও কেউ কিছু বলে না।
৪.দীপাবলীতে যে পরিমান বাজী পোড়ানো হয়,তাতে দূষনের পরিমান কি হারে যে বাড়ে তা ভারতের দূষন পর্ষদের৷ পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়। তবুও আমরা কেউ এর প্রতিবাদ করিনা।
আসলে “যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো, /তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছো ভালো" জাতীয় মানসিকতা নিয়ে চললে কিছুই হবে না।
আমার এতোকিছু বলার কারন এই যে বীরপুঙ্গব হতে চাইলে সব ক্ষেত্রে সরাসরি ক্ষুদিরাম হতে হবে। তবেই কিছুটা এগোনো সম্ভব।
তারাপদ মাঝি
১৫ই ফেব্রুয়া ২০১৯

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.