#নকল_ভিক্ষুক


#গল্প

#নকল_ভিক্ষুক

#তারাপদ_মাঝি


[সম্মানীয় পাঠকবৃন্দের কাছে অনুরোধ, এই গল্পটি পাঠ করে তাকে অনুসরণ করবেন না। কারণটি গল্প পাঠের পর বুঝতে পারবেন।]


   তার নাম সত্যব্রত ভৌমিক। লিকলিকে শ্যামলা রঙের পাঁচফুট সাত ইঞ্চির লম্বা শরীর। মাথায় ঘন কালো কোঁকড়ানো একরাশ চুল। এই পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও চুলে একটুও পাক ধরে নি। তবে চেহারাটা ভালো নয়। দেখতে কেমন যেন ভিখারি ভিখারি  লাগে। শুধু একটু ময়লা জামা কাপড় পরিয়ে দিলেই জাত ভিখারি দেখায়। গত বছর পাড়ার যাত্রা পালায় ওকে একটি ভাখারীর রোল দেওয়া হয়। অভিনয় করেছে যেমন, তার চেয়ে ভিখারির সাজে তাকে মানিয়েছে দুর্দান্ত। প্রথমে তো কেউ চিনতেই পারে নি। তারপর গলার স্বর বেরুতে সকলে চিনতে পারে। ভিখারির সাজ এত পাক্কা হয়েছিল যে গ্রামের কিপটে স্বপনখুড়ো পর্যন্ত তাকে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট পুরস্কার  দেয়।


সত্যব্রতর অবস্থা কারাপ নয়। সাত বিঘের পৈতৃক বাস্তুভিটে ছাড়া বিঘে দশেক শালি জমি আছে। নিজে ইরিগেশান ডিপার্টমেন্টে গ্রুপ ডি'র চাকুরী করে।বাড়িতে ছেলেপুলে বলতে দুটি ছেলে আর একটি মেয়ে। সকলেই ভালো শিক্ষিত। এই পর্যন্ত সব ঠিক আছে। কিন্তু চল্লিশের পর থেকেই সত্যব্রতর মাথায় একটি নতুন ভূত চড়েছে। তার কেবলই মনে হয়েছে ভিক্ষেতে কি রকম রোজগার হয়। আচ্ছা তার ভিক্ষে করলে কেমন হয়! এই ভাবতে ভাবতে একদিন সে ছেঁড়া প্যান্ট জামা ব্যাগে  ঢুকিয়ে উকিলের হাটে গিয়ে হাজির হয়। হাঁটতে হাঁটতে একটি ফাঁকা মাঠের পুকুরের কাছে যায়। তার অনুমান অনুযায়ী পুকুরটা একেবারে শুকনা। সেখানে গিয়ে সে তার পোষাক পালটে ভিখারির সাজ পরে নেয়। ভালো জামাপ্যান্ট একটি নোংরা ব্যাগে ভরে নেয়। অন্য একটি নোংরা ব্যাগ নিয়ে ভিক্ষার জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে। এখন চেনা লোকও সত্যব্রতকে দেখলে কিছুতেই চিনতে পারবে না।


প্রথম বাড়িতে গিয়ে সত্যব্রত ডাক দিয়ে বলে- দু'টো ভিক্ষে দেবে মা?

কিছুক্ষন পর এক মহিলা বাটিতে কিছুটা চাল নিয়ে বেরিয়ে এলো। সত্যব্রত ব্যাগের মুখ খুলে ধরতেই মহিলা ব্যাগে চাল ঢেলে দেয়। চাল ঢেলে দিয়ে মহিলা বলে- বাবাকে বেশ শুকনো দেখাচ্ছে? কিছু খেয়েছো কি?

সত্যব্রতর পেট ভর্তি ছিল। সারাদিন ঘুরবে বলে বেশ পেট পুরে খেয়ে গিয়েছিল। তবুও সে বলে- আজ্ঞে না মা, কিছু খাওয়া হয় নি।

-পান্তা চলবে? তবে সঙ্গে কিছু নেই কিন্তু! বড় জোর পিঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা দিতে পারি।

-আজ্ঞে ওতেই চলবে মা। আমাদের কি বাছ বিচার করলে চলে? যা পাবো তাই দিয়ে পেট ভরাতে হবে মা। কথাগুলো বলে নিজেই মনে মনে একটু হেঁসে নিল সত্যব্রত।

- বাড়ির দালানে একটি তাল পাতার চাটাই পেতে দিয়ে খানিকটা জল ছড়িয়ে দিয়ে সত্যব্রতকে বসতে বলে মহিলা। তারপর তাকে দেওয়া হলো এক থালা পান্তা, সঙ্গে একটি বড় পিঁয়াজ আর গোটাকয়েক কাঁচা লঙ্কা। সত্যব্রত খেতে পটু। এই একথালা পান্তা তার কাছে নস্যির মতো উড়ে গেল মুহূর্তে। 

প্রথম বাড়িতে আশাতীত ফল পেয়ে সত্যব্রত গ্রামের প্রায় সব বাড়িগুলো ঘুরলো।এতে তার প্রায় সন্ধে হয়ে গেল। তারপর লোকালয় থেকে বেরিয়ে সেই ফাঁকা জায়গার পুকুরে এসে সাজ বদল করে নিল। অতঃপর তাড়াতাড়ি উকিলের হাটে চলে এলো। যা চাল হয়েছিল, তা একটি দোকানে বিক্রি করে দিল।  চাল বিক্রি করতে এলো এক'শ টাকা আর ভিক্ষে করে হয়েছে তিন'শ টাকা।দু টাকার কমে কেউ ভিক্ষা দেয় না। সর্বোচ্চ দশ টাকা পর্যন্ত লোকে ভিক্ষা দিয়েছে। সারাদিন খেয়ে দেয়ে চার'শ টাকা রোজগার মন্দ কি?

ওই দিন থেকে সত্যব্রত ভিক্ষাকে পার্ট টাইম পেশা করে নিল। অফিস ছুটি থাকিলেই দূরে অচেনা জায়গায় ভিক্ষা করতে চলে যায়। ভিক্ষা করে লোকের বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়া যে কি মজার তা সত্যব্রত ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। সে আমার কাছে গল্প করে সব বলেছিল। আমি বিশ্বাস করিনি। ভেবেছিলাম ও ধাপ্পা দিচ্ছে। কিন্তু একদিন নিশ্চিন্তপুরে দিদির বাড়িতে গিয়ে দেখি ও তাদের বাড়িতে খেতে বসেছে। সেই দিন থেকে আমি ওর কথা বিশ্বাস করি। আজও ও চুটিয়ে ভিক্ষা করে যাচ্ছে।


কপিরাইট @তারাপদ মাঝি

৮ই মে,২০২২

দেবনগর।


কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.