#ইচ্ছে_পূরণ


#গল্প

#ইচ্ছে_পূরণ

#তারাপদ_মাঝি


রাত তখন প্রায় রাত দশটা। কিছুতেই শেফালীর ঘুম আসছিল না। এদিকে শ্বশুর শাশুড়ী ঘুমিয়েছেন। তাদের গভীর নাসিকা গর্জন তারই প্রমান দিচ্ছে। শেফালী আর থাকতে পারলো না। বিছানা ছেড়ে সে বাড়ির ছাদে এসে দাঁড়ালো। পুর্নিমার রাত। বিশ্বচরাচর রূপালী আলোর বন্যায় প্লাবিত। শেফালী আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে। তখন শরতের সাদা সাদা মেঘপুঞ্জ একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভেসে চলেছে। এমনই পরিবেশে আম, নারিকেল, বাবলা, খিরিশ আর হাবলের বড় বড় গাছগুলি একটি কেমন যেন মায়াবী পরিবেশ তৈরী করেছে। হঠাৎ হাবল গাছের পাতাগুলি নড়ে ওঠায় শেফালীর মধ্যে একটু ভয়ের ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। সেদিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে সে দেখতে পায় কয়েকটা ছোট্ট কাঠবিড়ালীকে। তারপর শেফালীর ভয় কেটে যায়। সে পুকুরের দিকে তাকায়। দেখে তাদের পুকুরের ধারে ধারে বড় বড় গভীর রাতের শিকারী পাখিরা বসে আছে শিকারের আশায়।


এতকিছু দেখেও কিছুতেই, তার মন শান্ত হয় না। আর কি করেই বা শান্ত হবে! তার প্রানপাখী প্রানসখা তরুণ যে চলে গেছে বহু দূরে কেরালাতে। তাও আবার বিয়ের এক মাসের পর। তরুণের বিরহে শেফালী এখন বড়ই কাতর। কিছুতেই তাকে ভূলে থাকতে পারছে না। তরুণের অভাবে শেফালী কি এক যন্ত্রনা অনুভব করে। রাতের এই মায়াবী পরিবেশ তাকে যন্ত্রনায় আরও বেশী দগ্ধ করে। শেফালী এবার তরুণের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে করলো। সে বাড়িতে ফোন আনার জন্য যেই সিড়ির দিকে মুখ ফিরিয়েছে, এমন সময় একটি ছায়া দেখে সে ভয়ে শিউরে উঠলো। কিন্তু ছায়ার উৎসের দিকে তাকাতেই সে আনন্দে বিহ্বল হয়ে গেল। কারণ তার সম্মুখে তার প্রান প্রিয় তরুণ দাঁড়িয়ে আছে যে! একরাশ বিশ্ময়ে শেফালী জিজ্ঞাসা করলো- তুমি যে আজ ফিরছো তা জানাও নি কেন?

-আগে জানালে তুমি কি এমন আনন্দ পেতে?

-দুষ্টু কোথাকার!!! তারপর আদুরে গলায় বললে-বাড়িতে তালা দেওয়া। তুমি ভিতরে এলে কিভাবে?

-তোমায় ছাদে দেখে আম গাছ বেয়েই তো এলাম। তোমায় ভয় দেখাবো বলে। কিন্তু ভয় না পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলে!

-আমার এত ভয় টয় করে না। বলে শেফালী তরুণকে আরও বেশী করে জড়িয়ে ধরলো। রাতের মায়াবী পরিবেশ শেফালীকে এমনিতেই কামোন্মাদ করে তুলেছিল। তার উপর তরুণের পরশে সেই কামাগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগলো। সেই আগুনের লেলিহান শিখা তরুণকে গ্রাস করলো। তরুণ অবশ্য শেফালীকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে গেল।এক সময় শেফালী সুখসাগরে স্নান করে পরিশ্রান্ত হয়ে তরুণের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।


হঠাৎ সকালের কোলাহলে শেফালীর ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখে সে ছাদে শুয়ে আছে।শরীরে একখন্ড বস্ত্র নেই। ছায়া ব্লাউজ এবং শাড়ী মেঝেতে ছড়ানো! তখন মনে পড়লো যে রাতে তরুণ এসেছে। তার সঙ্গে ইয়ে করতে গিয়েই তার এই অবস্থা। কিন্তু তরুণ কোথায়! যাওয়ার আগে আমাকে একটু ডেকে দেবে না! শেফালী আর ভাবতে পারলো না। তাড়াতাড়ি সে কাপড় পরে নিল। তারপর ছুটলো কোলাহলের দিকে।


কোলাহলের কাছে যেতেই শেফালীর শরীর পাথরের মতো শক্ত আর নিশ্চল হয়ে গেল। এ কি দেখছে শেফালী! এ যে তরুণের লাস! ছ’তলা থেকে পড়ে যাওয়া দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া তরুণের লাস! তাহলে গত রাতের মিলন কি শুধুই স্বপ্ন! না কি…..। আর ভাবতে পারে না শেফালী। সেখানেই অচৈতন্য হয়ে পড়ে যায়।


কপিরাইট@তারাপদ মাঝি

২১/১১/২০২১

দেবনগর


কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.