#দেবযানির_স্বর্গে-গমন


সুন্দর গল্প ও কবিতা


রঞ্জন খুব ভালো ছেলে। ভালো ছেলে মানে পড়াশুনায় ভালো, খেলাধূলায় ভালো, আচার ব্যবহারে ভালো। তার উপর আজকালকার ছেলের মত বিড়ি সিগারেট টানে না, মদ জুয়ার তো স্বাদ নেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। শুধু একটি মাত্র নেশা তা হলো মেয়ের নেশা। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই রঞ্জনের প্রানটা একেবারে হু হু করে কেঁদে উঠে। ভাবে শালা কলেজে পড়তে যাচ্ছি এখনো পর্যন্ত আমার কোন গার্ল ফ্রেন্ড হলো না! কলেজে বন্ধুদের কাছে মুখ দেখাবে কি করে! প্রেসটিজ যে তখন একেবারে পাংচার হয়ে যাবে!
অনেক চেষ্টা করেও কলেজে যাওয়ার আগে রঞ্জন একটিও মেয়ে পটাতে পারলো না।বাধ্য হয়ে সিঙ্গল হয়ে কলেজে ভর্তি হলো। ভর্তি হলো যাদবপুর ইউনিভারসিটিতে। গ্রাম থেকে সবে শহরের কলেজে ভর্তি হয়েছে। রঞ্জনকে গ্রামের স্কুলের সবাই বলতো খুব স্মার্ট বয়। কিন্তু যাদবপুরে গিয়ে যেন ভেজা বেড়াল হয়ে গেছে! কোন বন্ধুর সঙ্গে কোন রকমে কথা বলতে পারলেও বান্ধবীদের সঙ্গে একেবারে পারছে না! তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কেমন যেন জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে যায়। হাত পা গুলো যেন ঠক ঠক করে কাঁপতে থাকে। তার এই অবস্থা দেখে তার বান্ধবীরা রঞ্জনকে নিয়ে বেশ হাসি তামাশা করে।
একদিন একটি মেয়ে রঞ্জনের সঙ্গে আলাপ করতে এলো। উভয়ে উভয়ের পরিচয় নিলো। রঞ্জনের ম্যাথেমেটিক্সে অনার্স আর মেয়েটি ইংলিশ অনার্স। রঞ্জনের বাড়ি নামখানায় আর মেয়েটির বাড়ি জয়নগরে। মেয়েটির নাম রঞ্জনা। রঞ্জনাকে দেখতে ভারি সুন্দর এবং ব্যক্তত্বময়ী। রঞ্জনকে অন্যান্য মেয়েরা হাসি তামাশা করতো বলে তাকে সাহায্য করার জন্য রঞ্জনা এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে কখন যে তারা একে অপরকে ভালো বেসে ফেলেছে তা তারা বুঝতে পারে নি। তারা যখন বুঝলো যে তারা একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারবে না, তখন তারা পরষ্পরকে আর দূরে সরিয়ে রাখতে পারলো না। একদিন তারা ভিক্টোরিয়াতে গিয়ে হাতে হাত রেখে আগামী দিনে পরষ্পর একসাথে চলার শপথ গ্রহন করলো।
একসময় তারা পোষ্ট গ্র‍্যাজুয়েড এবং বি এড করে ইউনিভারসিটি ছাড়লো। এবার কর্ম জগতে প্রবেশের পালা। শর্ত হলো দুজনের কেউ একজন চাকুরি পেলেই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। এবার রঞ্জন চলে গেল নামখানায় এবং রঞ্জনা চলে গেল জয়নগরে। দুজনেই এস এস সি পরীক্ষার দ্বারা চাকুরীর চেষ্টা করছে। কিন্তু রঞ্জন এস এস সি র সঙ্গে ডব্লুউ বি সি এস ও দিচ্ছে। দুজনের মধ্যে ফোনালাপ চলে।প্রেমের অনেক উষ্ণতা পেরিয়ে এখন তারা পরিনত প্রেমিক প্রেমিকা।
এমন সময় রঞ্জনের বাবা দেব কুমার বাবু সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি রঞ্জনের সঙ্গে তার একান্ত ঘনিষ্ট বান্ধবী অনসূয়ার মেয়ে দেবযানীর বিয়ে দেবেন। তিনি তা রঞ্জনকে জানালেন। তিনি আরও বললেন যে অনসূয়া অনেক আগেই স্বামী হারা হয়েছেন। সেই সময় তিনি তাকে কথা দিয়েছিলেন যে তার একমাত্র মেয়ের সঙ্গে তার একমাত্র ছেলে রঞ্জনের বিয়ে দেবেন। এখন যেহেতু রঞ্জনের লেখা পড়া শেষ হয়েছে, তাই তিনি ছেলের বিয়ে দিতে চান।যেহেতু আগেই তিনি অনসূয়াদেবীকে কথা দিয়েছেন, তাই রঞ্জনের পছন্দ কিংবা অপছন্দকে, কিংবা বিয়েতে রাজি বা নিমরাজিকে তিনি মানবেন না। দেব কুমার বাবুর কথাই শেষ কথা।
দেব কুমার বাবু অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। উনার বিঘা তিরিশেক ধানি জমি, নামখানা বাজারে একটি বড় কাপড়ের দোকান এবং একটি কাঠ চেরাইয়ের দোকান আছে। সবটাই তিনি দেখাশোনা করেন। এবার তার ইচ্ছা ছেলেকে বিয়ে দিয়ে ব্যবসা পত্র ছেলের হাতে সঁপে দিয়ে বাকি দিনটা আনন্দে দিন যাপন করবেন।প্রচুর টাকার মালিক বলে যে দেব কুমার বাবু গ্রামের মানুষের কাছে শ্রদ্ধা পান তা কিন্তু নয়। তিনি এক কথার মানুষ এবং যাকে যে কথা দেন সেই কথা রক্ষা করার জন্য প্রান পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত থেকেন। আর চরিত্রে শুদ্ধতার দিক দিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় গ্রামের তার অতি বড় নিন্দুকও তার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলতে সাহস পান না।
এই রকম কড়া পাকের বাবার কাছ থেকে বিয়ের নির্দেশ পেয়ে রঞ্জন একেবারে অথৈ জলে। এখন রঞ্জনার কি হবে! সে যে বড় আশা করে বসে আছে! তাছাড়া রঞ্জনাকে ছাড়া সে বাঁচবে কেমন করে! অনেক চেষ্টা করে সে তার মনের কথাটি তার মায়ের মাধ্যমে বাবার কাছে পাঠাতে সমর্থ হলো। রাতে আহারের সময় সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছে। এমন সময় দেব কুমার বাবু রঞ্জনকে জিজ্ঞাসা করলেন- রঞ্জন?
-হ্যা বাবা?
-শুনলাম তুমি নাকি একটি মেয়েকে ভালো বাসো?
-রঞ্জন কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো।
- মেয়েটির নাম কি?
-রঞ্জনা।
-বাঃ একেবারে ম্যাচিং নাম দেখছি। তা তার পড়াশুনা কতদূর?
-আজ্ঞে ইংলিশে এম এ এবং বি এড।
- দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে?
-ছি! একি বলছেন আপনি!
-বেশ,তাহলে তো ল্যাটা চুকে গেল।
-মানে?
-মানে আর কি? ও মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে হবে না। তোমরা শুধু মন দেওয়া নেওয়া করেছো। তোমার কথার খেলাপ করা উচিত নয়। কিন্তু তুমি ভেবে দেখ আমিও কাউকে কথা দিয়েছি। আমার কথার জন্য সে তার মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দেয় নি। তাই এখন তোমার কথা শুনে যদি আমি তাকে না বলি তাহলে আমার কথার খেলাপ হবে। তুমি যদি আমাকে ছোট করতে চাও তাহলে তুমি তা করতে পারো। কিন্তু তা করতে গেলে আমার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক আর থাকবে না। আমার বিচারে ঐ মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে হওয়া উচিত নয়। কারণ তোমরা একে অপরকে বড্ড বেশী জেনে ফেলেছ। তোমারা কোয়ালিফিকেশনে একই রকম। বরং বলা ভালো তোমার থেকে মেয়েটি এগিয়ে। সেক্ষেত্রে তোমাদের বিয়ে হলে তোমাকে ঐ মেয়ে মানবেই না এবং মেয়েটি চাকুরি করতে যাওয়ার জন্য সন্তান পালনের সময়ই পাবে না। আমি চাকুরি ওয়ালা বউ চাই না। একজন দরদী মা চাই। এবার তুমি কি করবে তুমিই ভেবে দেখ। আমাকে দরকার, না তোমার ঐ রঞ্জনাকে দরকার।
সেদিন রাতে আর রঞ্জনের ঘুম এলো না। ফাগুনের খোলা জানালা দিয়ে দখিনা বাতাস বইছে। সেই জানালার হাওয়ার বন্যায় শুয়েও কিছুতেই ঘুম আসছে না রঞ্জনের। একসময় দেরী না করে ফোনে রঞ্জনাকে ধরলো। বললো- রঞ্জনা?
-এতো রাতে বাবুর আবার কি খেয়াল হলো!
-আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে!
-কেন?
-রঞ্জন সব বললো রঞ্জনাকে। সব শুনে রঞ্জনা বললো- তোমার বাবা ঠিকই বলেছেন। হয় তুমি তোমার বাবাকে বেছে নাও। নচেত আমাকে বেছে নাও। তবে আমি তোমার জায়গায় হলে কখনোই বাবার এই মধ্যযুগীয় সিদ্ধান্তকে বরদাস্ত করতে পারতাম না। এখন তোমার যা ভালো লাগে তাই করবে। তবে আমি তোমার জন্য সারা জীবন অপেক্ষা করতে রাজি।
রঞ্জনের বিয়ে হয়ে গেছে আজ তিন মাস। দেবযানী দেখতে ভারি সুন্দর। বেশ লম্বা। ফর্সা, টানা টানা চোখ আর হাসলে গালে কি সুন্দর টোল পড়ে। দেবযানীকে তার বেশ ভালো লাগে। কিন্তু কোথায় যেন একটা অপ্রাপ্তি থেকে যায় রঞ্জনের। সে যে কি তা রঞ্জন বুঝতেও পারে না।মাঝে মাঝে সে দেবযানীর সঙ্গে রঞ্জনার তুলনা করে। রঞ্জনা যেন পুষ্করিণীর নিস্তরঙ্গ জলরাশি। আর দেবযানি সমুদ্রের নৃত্যরত তরঙ্গ। রঞ্জনা যেন শরতের অলস মেঘরাশি আর দেবযানি বর্ষার জলভরা মেঘ। রঞ্জনা যেন তার ফুসফুস। আর দেবিযানি যেন দূরন্ত হৃদয়।
দেবযানিকে এখন রঞ্জন মেনে নিয়েছে। রঞ্জনা এখন তার কাছে যেন হাজার বছরের অতীত। আজ বছর খানিক হয়ে গেল। রঞ্জনার সঙ্গে আর রঞ্জনের কোন কথা হয় নি। দেবযানির ভালোবাসায় রঞ্জন পাগল হয়ে গেছে।সারাদিন ব্যবসার কাজ সেরে যখন রঞ্জন ঘরে ফেরে, তখন দেবযানি তাকে নিজের হাতে তার পা ধুইয়ে দেয়। তাকে শত বারণ করা সত্বেও সে এই কাজ থেকে বিরত হয় না। একদিন দেবযানিকে বুকে জড়িয়ে ধরে রঞ্জন বলে- আচ্ছা, আমার পা ধুইয়ে দিয়ে, আমার সেবা করে তুমি কি এমন আনন্দ পাও শুনি। এগুলো করলে আমার কত খারাপ লাগে জানো?
-সে কি মশাই! পতি দেবতার মুখে এমন কথা মানায় না। আমি সর্বদা আমার মাকে মেনে চলি। আমার মা বলেন- স্ত্রী কাছে তার স্বামীই সব। স্বামী হলো স্ত্রীর কাছে স্বর্গ সমান। স্বামীর সেবা করলে শাঁখা-সিঁদুর সহ স্বর্গে যাওয়া সম্ভব।দমন্তী, বেহুলা, সাবিত্রী আর মা সীতাদেবীরা তা প্রমান করে গেছেন। আমি স্বর্গে যেতে চাই না। কারণ সে রকম পুন্য আমি করি নি। কিন্তু স্বামী সেবা করে অন্তত শাঁখা সিঁদুর নিয়ে মরতে চাই। এই আশীর্বাদ আমায় দাও।
-তুমি একেবারে সরল মেয়ে। স্বামী সেবা করলে যদি এত সব হত তাহলে পৃথিবীটাই পালটে যেত। আরে পাপ পুন্য মানুষের কিছু ধারণা। সমাজের কিছু মাতব্বর গোছের ব্যক্তিরা সমাজের মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এই সব ধারণার সৃষ্টি করেছেন।
-তার মানে তুমি বলতে চাইছ শ্রীশ্রীগীতা মিথ্যা!
-কেন মিথ্যা নয়? সেও তো কোন মাতব্বরের লেখা?
-কিন্তু গীতা তো ভগবান কৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণী! সে মিথ্যা হবে কেন?
-তুমি নিজের কানে ভগবানের মুখ থেকে শুনেছ?
-নিজের কানে না শুনলে কি বিশ্বাস করা উচিত নয়?
-একদম ঠিক তাই। নিজের কানে যেটা শুনবে সেটাই বিশ্বাস করবে।
-আচ্ছা দুই আর দুই যোগ করলে কত হয়?
-কেন চার!
-তুমি কি করে জানলে!
-কেন! আমার মা শিখিয়েছে। বাবা শিখিয়েছে। আমার শিক্ষক শিখিয়েছে। তাছাড়া বইতেও আছে।
-উনারা কোত্থেকে জানলেন?
-উনারাও উনাদের বাবা মা শিক্ষক বা বই থেকে জেনেছেন।
-অর্থাৎ অঙ্কের বইতে যা লেখা তাকে বিশ্বাস করা চলে কিন্তু রামায়ন, মহাভারত, গীতায় যা লেখা থাকে তা বিশ্বাস করা চলে না তাই তো?
-আজ এক মাষ্টার ডিগ্রিধারী মানুষ এক সামান্য মাধ্যমিক পাশ মেয়ের কাছে হেরে গেল। দেবযানীর যুক্তির কাছে রঞ্জন হেরে গিয়ে নিজেকে বেশ খানিকটা গর্ব বোধ করলো। ভাবলো তার বাবা তাকে সত্যিকারের জীবন সঙ্গী খুঁজে দিয়েছেন। সে আজ ধন্য। তারপর দেবযানীকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর আদর করতে লাগলো।মত্ত রঞ্জনের আদর দেবযানি হৃদয়ভরে নিল। একসময় রঞ্জন শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে শান্ত শিশুর মতো তার উপর ঘুমিয়ে পড়লো।
বছর দেড়েক পর দেবযানির একটি পুত্র সন্তান হলো। ছেলের বয়স যখন এক বছর তখন দেবযানি পড়লো এক কঠিন রোগে। দেবযানিকে কলকাতার বেলভিউ নার্সিং হোমে ভর্তি করানো হলো। ডাক্তাররা অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করে বুঝতে পারলেন যে দেবযানির জরায়ু ক্যান্সার হয়েছে যা একেবারে আয়ত্বের বাইরে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। রঞ্জন চোখে সরষে ফুল দেখতে লাগল। রঞ্জনের বাবা দেব কুমার বাবু হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলেন। তিনি কিছুতেই চোখের জল সামলাতে পারলেন না। দেবযানিকে কেউ কিছু না বললেও সে বুঝতে পেরেছে যে তার সময় শেষ হয়ে এসেছে। তাই দেবযানি তার শ্বশুর মশাইকে ডেকে বললেন-বাবা আমার একটি কথা রাখবেন?
-কি কথা মা!
-আপনি একবার নিজে গিয়ে রঞ্জনা দিদিকে ডেকে আনবেন?
-কি বলছো বউমা! তাকে ডাকবো কেন?
-ডাকবেন না! তার মন নিয়ে জীবন নিয়ে যে আমরা খেলেছি! আমি তার সম্পদকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়েছি বলেই না ভগবান আমাকে এতটা শাস্তি দিলেন। আজ অল্প বয়সে আমাকে স্বামী আর সন্তান ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে।
রঞ্জনের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে দেব কুমার বাবু গেলেন রঞ্জনার বাড়ি। রঞ্জনার বাড়িতে গিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে অনেক কষ্টে রঞ্জনাকে নিয়ে বেলভিউ নার্সিং হোমে পৌছলেন। রজনাকে দেখেই দেবযানি তাকে প্রনাম করতে গেল। রঞ্জনা দেবযানির হাত ধরে ফেললো। সে অনেক রাগ অভিমান নিয়ে এসেছিল। অনেক কথা শোনানোর ইচ্ছা ছিল দেবযানিকে। কিন্তু দেবযানি যেভাবে তাকে মূহুর্তে আপন করে নিল, তাকে বড়র সম্মান দিল তাতে সে অভিভূত হয়ে গেল। জলভরা চোখে দেবযানি রঞ্জনার হাত ধরে বলল- আমার একটা কথা রাখতে হবে দিদি।
-কি কথা ভাই!
-একদিন তোমার ধন আমি তোমার কাছে থেকে কেড়ে নিয়েছিলাম। তাই বিধাতা আমাকে অসময়ে তুলে নিলেন। সে পাপের শাস্তি আমাকে পেতে হলো। তাই যাওয়ার সময় তোমার ধন আমি তোমাকেই ফিরিয়ে দিলাম। এই বলে রঞ্জনের হাত রঞ্জনার হাতে ধরিয়ে দিল। তার পর সজল চোখে দেবযানি বললে- দিদি আমার একমাত্র নয়নের নিধি আমি তোমার হাতেই দিয়ে গেলাম। এখন থেকে তুমিই ওর মা। তুমি কথা দাও দিদি এদের তুমি রাখবে।
-রঞ্জনা আর থাকতে পারলো না। তার পাশ্চাত্য শিক্ষার গর্ব সামান্য এক গ্রাম্য নারীর কাছে ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল। সে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল। রঞ্জনা বললো- তুই কোন পাপ করিস নি ভাই। এ সবই নিয়তির খেলা। তবে আমি তোকে কথা দিচ্ছে তোর সম্পদকে আমি সযত্নে লালন পালন করবো।
রঞ্জনার মুখ থেকে এ কথা শোনার পর দেবযানি আস্তে আস্তে তার চোখ মুদ্রিত করলো। আস্তে আস্তে তার শরীর নিরব নিথর হয়ে গেল। দেবযানি শাঁখা সিঁদুর নিয়ে মরে তার মায়ের কথা প্রমান করলো। রঞ্জন মনে করলো দেবযানি সত্যি সত্যি শাঁখা সিঁদুর নিয়ে স্বর্গারোহণ করল।

কপিরাইট@তারাপদ মাঝি
দেবনগর-নামখানা
১৫/০৯/১৯

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.