#জীবনানন্দের_ভ্রমন_কাহিনী


সুন্দর গল্প ও কবিতা


জীবনের একটা সময় থেকে প্রত্যেকের জীবন সংগ্রামে নামতে হয়।জীবনে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং অবশ্যই অস্তীত্ব রক্ষার লড়াইতে নামতেই হয়। সেই নিরিখে আমাকেও একসময় নামতে হয়েছে। প্রত্যেকের জীবন সংগ্রাম শুরু করার আগে তাদের পিতৃ পুরুষ থেকে প্রাপ্ত কিছু উপাদান থাকে, যা তাকে তার জীবন সংগ্রামে সাহায্য করে। সেদিক থেকে আমি আমার পিতৃ পুরুষ থেকে একমাত্র ভালোবাসা আর আশীর্বাদ ছাড়া কিছুই পাই নি। কিন্তু এই রুঢ় পৃথিবীতে আর্থিক পরম্পরা না থাকলে নিজের অস্তীত্ব বজায় রাখা বা বজায় রাখার চেষ্টা করা খুবই কষ্ট সাধ্য। ফলে আমার জীবন সংগ্রামের পথ ছিল খুবই কণ্টকাকীর্ণ। সেই কণ্টকময় পথ অতিক্রম করে অনেক কষ্টে পৃথিবীতে নিজের অস্তীত্ব ধরে রাখার মতো একখানা চাকুরি পেলাম এবং ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে চাকরীতে যোগদান করলাম। চাকরী পাওয়ার পর থেকে আমি এলেবেলে জীবনানন্দ মুখার্জী থেকে হয়ে গেলাম একেবারে জীবনানন্দবাবু। হায়! অর্থের কি অপার মহিমা।
আমি বরাবরই কুপমুন্ডুক। বাইরে কোথাও যেতে বললেই আমার টেনশানের শেষ থাকে না। রাস্তাঘাট ঠিকমতো চিনতে পারবো তো? গন্তব্যস্থলে নিজেকে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারবো তো? রাস্তায় যেতে যেতে অসুস্থ হয়ে পড়বো না তো? আমার কাছ থেকে টাকা পয়সা কেউ ছিনতাই করে নেবে না তো? পনের বছর চাকরী করার পর আমার শরীরে বিভিন্ন রোগ নিশ্চিন্ত বাসা বেঁধেছে। তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ রোগ অন্যতম। এছাড়া আরও অনেক রোগ পোষা আছে।সেগুলি এখন না আলোচনা করাই ভালো। যাইহোক পনের বছর চাকুরীর পর আমাদের প্রমোশনের সুযোগ এলো। কিন্তু তার জন্য ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া প্রমোশন হবে না।
এইবার আমি পড়ে গেলাম ফাঁপরে। কারন এই পরীক্ষাগুলো হয় কলকাতায়। আর কলকাতায় যেতে আমার বড়ই অস্বস্তী লাগে। তাছাড়া কলকাতার রাস্তাঘাট চিনে আমি ঠিকমতো যেতেও পারি না।ট্রেনে আর বাসের ভীড় আমি একেবারে সহ্য করতে পারি না। এত লোকের কোলাহল আর জনসমাগম আমাকে যেন অস্থীর করে তোলে। সেই জন্য গ্রামের শান্ত সৌমভাব আমার কাছে স্বর্গ সমান মনে হয়।
আমি আমার কয়েকজন কলিগ কাম বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে কিছু পরামর্শ চাইলাম। প্রথমে ধরলাম আমার সেক্রেটারী অরুপ সরকারকে। বললাম-অরুপদা আমার কি প্রমোশান পরীক্ষা দেওয়া উচিত?
-হ্যা, দেবে না কেন? উনি বললেন।
-না, মানে আপনি তো জানেন যে আমি বিভিন্ন রোগে কাবু। শরীরের অবস্থা ভালো নয়। এতে যদি প্রমোশান নেই তাহলে আমাকে কোথায় যে পোষ্টিং দেবে তা তো বলা যায় না? তা ছাড়া প্রমোশান পেয়ে গেলে কাজের চাপ অনেক বেড়ে যাবে। সেই ধকল কি আমি নিতে পারবো?
-দেখ, তোমার যুক্তি ঠিক নয়। তুমি প্রমোশান না নিলে তোমাকে এখানে চিরদিন রাখবে না। এখান থেকে তোমাকে ট্রান্সফার করবেই। তখন যদি তোমাকে খারাপ জায়গায় ট্রান্সফার করে,তখন তুমি কি করবে? তার চাইতে প্রমোশান নিয়ে খারাপ জায়গায় যাওয়া ভালো। তাছাড়া তোমার বয়সী কলিগরা যখন প্রমোশান নিয়ে ট্রান্সফার হয়ে অন্যত্র চলে যাবে এবং তারাই যখন তোমার উপর ছড়ি ঘুরাবে তখন কি তোমার ভালো লাগবে? তোমার কোথায় পোষ্টিং হবে? ভালো জায়গায় না খারাপ জায়গায়? এসব ভেবে তোমার লাভ নেই। কারণ এসব কোনোটাই তোমার হাতে নেই। তোমার হাতে আছে একমাত্র পরীক্ষা দেওয়া। তুমি সেটাই করো।
এবার আমি আমার ভাতৃপ্রতিম অমৃত মাইতিকে ধরলাম। অমৃত আর আমি একই সঙ্গে অফিসে যাই।তাকে আমি আমার প্রমোশান সম্পর্কে তার অভিমত চাইলাম। সেও বললো যে আমার প্রমোশন নেওয়া উচিত এবং এরজন্য আমার পরীক্ষাতে বসা উচিত। সে আরও এক পরামর্শ দিল যে পরে প্রমোটেড পোষ্টে নাও যোগদান করা যেতে পারে। এছাড়া সে আরও অনেক যুক্তি দেখাল যা একেবারে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এছাড়া আরও অনেক বন্ধু, সহকর্মী আর গুরুজনের পরামর্শ নিলাম। তারা কেউই আমকে প্রমোশন না নেওয়ার কথা বললো না। অগত্যা প্রমোশান নেব এবং পমোশনের পরীক্ষা দেব সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমি আর অমৃত একই পদে চাকুরী করি। কিন্তু আমি আগে জয়েন্ট করেছি। ও পরে চাকরীতে জয়েন্ট করেছে। একই ডিপার্টমেন্ট কিন্তু অফিস আলাদা। সেও পরীক্ষা দেবে। আমাদের দুজনের বাড়ী নামখানা ব্লকে। আমার বাড়ি নামখানায় আর ওর বাড়ি নারায়নপুরে। আমাদের পরীক্ষার স্থান ঠিক হয়েছে যাদবপুরে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় পলিটেকনিক কলেজে। আমার বাড়ি থেকে সকাল সাতটায় বের হলে এগারোটায় কলেজে পৌছে যাওয়া যাবে। কিন্তু তাতে কষ্ট যেমন হবে আবার পৌছানোর অনিশ্চয়তাও রয়েছে। কারণ পরীক্ষা হচ্ছে ভরা বর্ষাকালে। আমাদের বাড়ি একেবারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। যে কোন সময় আবহাওয়া অফিসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঝাঁপিয়ে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি শুরু হলে কিছুতেই ট্রেন ধরা সম্ভব হবে না। এই সমস্যা থেকে বাঁচা যায় যদি যাদবপুরের কাছাকাছি কোথাও থাকা যায়। কিন্তু আমার গত সাত পুরুষের কোন বংশধরের কেউই কলকাতায় থাকে না। তাই ও চিন্তা করে লাভ নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যদি অফিসে থাকা যায় তো কেমন হয়? আমার অফিসটা গোচরণ স্টেশনের কাছাকাছি আর ওখান থেকে যাদবপুরে যেতে লাগবে সাকুল্যে মিনিট চল্লিশ। সুতরাং অফিসে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই অমৃতকে বললাম-ভাই, বাড়ি থেকে যাওয়া রিস্কি হয়ে যাবে।আমার অফিসে থাকলে কেমন হয়? আমি তো অনায়াসে থাকতে পারি। কারণ আমাকে মাঝে মাঝে অফিসে থেকে যেতে হয়। তবে তুই যদি আমার সঙ্গে যাস তাহলে আমার বেশ উপকার হয়। তোর উপস্থিতি আমাকে অনেক স্বস্তি দেবে। অমৃত বললো- আমার আর পরীক্ষা দিয়ে লাভ কি? আমার গ্রেডেশান লিষ্টে সবার শেষে নাম আছে। আমি পরীক্ষা না দিলেও চলবে। বললাম- ভাই, ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা! না দিলে অফিস থেকে শোকজ করতে পারে। তার চেয়ে পরীক্ষা দেওয়া ভালো। আমার কথার উত্তরে সে এমন সব কথা ঠাট্টা করে বললো যা আমার এখানে না বলাই ভালো। কিন্তু সে যাই হোক, অমৃত আমার সাথে গিয়ে পরীক্ষার আগের দিন অফিসে থাকবে কথা দিলো।
১১ই আগষ্ট রবিবার পরীক্ষা। ১০ই আগষ্ট শনিবার বিকাল সাড়ে চারটার সময় নামখানার ট্রেন ধরে অফিস যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলাম। আকাশে একফোঁটাও মেঘ নেই। সুর্যের তেজে গা একেবারে পুড়ে যাওয়ার উপক্রম। তার মধ্যে বিকাল তিনটার সময় দূর্গা দূর্গা বলে বাড়ি থেকে বের হলাম। সাইকেল চালিয়ে চারটার সময় মদনগঞ্জে পৌছলাম। ওখানে সাইকেল রেখে যখন রাস্তায় বাস ধরার জন্য দাঁড়ালাম, তখন দেখি আমার বন্ধু গৌতম এসে দাঁড়িয়েছে। বুঝলাম সেও পরীক্ষার জন্য আগে ভাগে কলকাতায় গিয়ে থাকবে বলে বেরিয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম যে সে শনিবার গড়িয়াতে ছেলের কাছে থাকবে এবং ছেলের ভালো মন্দ খোঁজ নেবে। পরের দিন পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসবে। তার ছেলে পড়াশুনার জন্য গড়িয়ার কোন এক মেসে থাকে। তার হাতে দেখলাম এক ব্যাগ কিছু ভালো মন্দ দ্রব্য। ছেলের জন্য মা আদরে পাঠিয়েছে। গৌতমের কোন চিন্তা নেই। গড়িয়াতে এক সঙ্গে রথ দেখা এবং কলা বেচা দুই হবে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে কথোপকথনের সময় বাস এসে গেল। আমরা বাসে উঠে স্টেশনে এলাম। স্টেশনে এসে দেখি আমার আরও কয়েকজন বন্ধু উপস্থিত হয়েছে। যেমন অনুকুল, দেবীকান্ত, সতীশ, গুরুপদ এবং আরও অনেকে। তখন বুঝলাম আমার সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক।
হঠাৎ অত্যধিক গরমে আমার অস্বস্তি হতে লাগলো। আমি অসুস্থ বোধ করতে লাগলাম। আমার মন খারাপ হয়ে গেল।গরম সকলের হচ্ছে। তারা আনন্দে কথা বার্তা বলছে। অথচ আমার কষ্ট হচ্ছে কেন? তার মানে আমি সুস্থ নই। আমার মতো লোকের পরীক্ষা দেওয়া উচিত নয়। দেখলাম ট্রেন ছাড়তে এখন অনেক দেরী আছে। অন্তত মিনিট পনের পর ট্রেন ছাড়বে। অমৃত এখনো আসে নি। ভাবলাম- অমৃতকে ফোন করে স্টেশনে না আসার জন্য বারণ করে দেই। ও বাড়ি থেকে না বেরোলে ওকে আসতে বারণ করে দেবো। ও এমনিতে পরীক্ষা দিতে চাইছিল না। আমার ধরাধরিতে ও পরীক্ষা দিতে যাবে। আমি আর পরীক্ষা দিতে যাবো না। কিন্তু ওকে ফোন করে বুঝলাম ও চলে এসেছে। খানিক পরে ও আসতেই আমার মনের কথা ওকে জানালাম। ও কিছুতেই বাড়ি ফিরে গেল না। বাধ্য হয়ে অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অফিসের দিকে যাত্রা করলাম।
ট্রেন কিছুক্ষন চলার পর ট্রেনের হাওয়া খানিকক্ষন লাগার পর আমি বেশ আরাম বোধ করতে লাগলাম।কাকদ্বীপ স্টেশন পার হবার পর আমি বেশ চনমনে হয়ে উঠলাম। যথারীতি বিকাল ছ'টার সময় অফিসে পৌছে গেলাম। অফিসে আমার বিছানা পাতা ছিল। দু'জনে বিছানায় শরীরটাকে ছড়িয়ে দিলাম। আমাদের কেয়ার টেকার মেজদা গেছে বারাসাত। আসতে দেরী হবে। তাই অমৃত'র আনা মুড়ি আর শশা চিবিয়ে মোবাইলের মধ্যে ঢুকে গেলাম। সন্ধ্যে সাতটার সময় অমৃত আমার কাছে পরীক্ষার জন্য কিছু বই চায়। আমি আমার সঙ্গের সব বইগুলো তাকে দিলাম এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত কিছু আলোচনা সেরে আমি আবার মোবাইলে মনোনিবেশ করলাম। কিন্তু অমৃত বইগুলো দেখতে লাগলো।
ইতিমধ্যে আমাদের কেয়ার টেকার মেজদা কালাচাঁদ সাহা পৌছে গেছেন। তিনি আমাদের জন্য ভাতে ভাত চড়িয়ে দিয়েছেন। আমি খেলাম আলু ভাতে, ঝিঙে ভাতে, করলা ভাতে,পটল ভাতে আর কুমড়ো ভাতে। আর অমৃত এবং মেজদা খেল ডাল, আমার মেনু এবং ডিম ভাতে। রাতে ভালোই খাওয়া হলো কিনা বলতে পারি না। কিন্তু আমার কোন অসুবিধা হয় নি। আমার এরকম খাবারই পছন্দ। কিন্তু অমৃতের রাতের খাবার যে অমৃত হয় নি, তা যে কেউ তাকে দেখলে বুঝতে পারবে। অতঃপর রাত গত হয়ে এলো ১১ই আগষ্ট রবিবার। সকালের দিকে একটু মুড়ি পিঁয়াজ চিবিয়ে টিফিন সারলাম। অবশ্য তার আগে দেখি অমৃত যোগাসন শুরু করে দিয়েছে। আমি আর যোগাসন করতে পারবো দেখে সিড়ি দিয়ে বেশ কয়েকবার ওঠানামা করে ব্যায়াম করে নিলাম। ওঠানামার গুঁতোয় আমার শরীর থেকে ঘাম ঝরতে লাগলো। ওদিকে মেজদা কুমড়ো পটলের তরকারী আর ভাত বসিয়ে দিয়েছে। চানকরে মেজদার রানা খেয়ে ঠিক ন'টা পঞ্চান্নর আপ ট্রেন ধরার জন্য গোচরণে পৌছে গেলাম।
১১ই আগষ্ট রবিবার। আকাশে এক ফোঁটা মেঘ নেই। রৌদ্র ঝলমলে আকাশ। প্রচন্ড গুমোট এবং গরম। স্টেশনে পৌছতেই গা দিয়ে বন্যা বইতে শুরু করলো। আমার যেন শ্বাস কষ্ট হতে শুর করলো। আমি ভাবলাম আজ বোধ হয় আমি আর বেঁচে বাড়ি ফিরবো না। প্রচন্ড গরম। তার উপর ট্রেনে প্রচন্ড ভীড় হবে। এখন যদি শ্বাস কষ্ট হয়, তখন ট্রেনের মধ্যে কি হবে! যত ভাবতে লাগলাম, তত আমার শ্বাস কষ্ট বাড়তে লাগলো। এক সময় অমৃতকে বলেই ফেললাম-অমৃত, তুই পরীক্ষা দিতে যা। আমি আর যাবো না। আমার কিছু ভালো লাগছে না। উত্তরে স্বভাব সিদ্ধভাবে ও বললো- তুমি বড্ড টেনশান করো দাদা। এই জন্য তোমার কষ্ট হচ্ছে। তুমি কিচ্ছু চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে এবং আমরা নিরাপদে পৌছে যাবো। আমি ওর কথা শুনে কিছু বললাম না। বুঝেছি আমার আপত্তি ওর কাছে টিকবে না। তাই পরীক্ষা দিতে যেতেই হবে। উৎকন্ঠায় আমার গলা শুকিয়ে আসছিল। আমি সামনে একটি দোকানে গিয়ে মৌরী দিয়ে একখানা পান খেলাম। পান চিবোতে আমার অনেক ভালো লাগলো। গলা যে শুকিয়ে যাচ্ছিল, সেটা থেকে কিছুটা মুক্তি পেলাম। ইতি মধ্যে ট্রেন এসে গেছে। আমরা ট্রেনে ঊঠে পড়লাম। যতটা ভীড় হবে ভেবেছিলাম, ততটা ভীড় হলো না। আমি একেবারে ফ্যানের তলায় দাঁড়ানোর জায়গা পেয়ে গেলাম। আস্তে আস্তে ট্রেনের পেসেঞ্জারের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেল। তারাও ঐ একই পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন। অনেক গল্প গুজব, হাঁসি ঠাট্টা হলো। এ সবের মধ্যে আমি হারিয়ে গেলাম এবং আমার অসুস্থতা ভুলে গেলাম। একসময় যাদবপুরে ট্রেন থামলো। আমরা ট্রেন থেকে নেমে রাস্তার দিকে হাঁটতে লাগলাম।
তিলোত্তমা কলকাতা। কল্লোলিনী কলকাতা। কলকাতা বাঙালীর রক্তে মিশে গেছে। আজ থেকে বছর পঁচিশ আগের যাদবপুরের সঙ্গে এই যাদবপুরকে কিছুতেই মিলাতে পারছি না। সেদিনের বালিকা যাদবপুর আজ যে যৌবন মদে মত্তা। আমি বেশ আনন্দ উপভোগ করলাম। আস্তে আস্তে রাস্তার দুদিকের দৃশ্য দেখতে দেখতে হাটতে লাগলাম। অবশেষে এলাম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে। বিদ্যালয়ের সম্মুখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দাঁড়ালাম। তারপর নতমস্তকে তার গরিমাকে স্বীকার করে নিলাম। দেয়ালে দেয়ালে এখনো দেখতে পাচ্ছি “ হোক কলরব” শ্লোগান। যাদবপুর এক অনন্য শিক্ষার, মেধার আর গবেষনার পীঠস্থান। বর্তমানে কিছুটা রাজনৈতিক গন্ডগোলে পিছিয়ে পড়েছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস আবার একদিন সে ঠিক মাথা তুলে দাঁড়াবেই। পায়ে পায়ে আরও এগোলাম। এবার আর সহ্য হচ্ছে না। আকাশে সুর্য্যিমামা চোখ রাঙাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে ব্যাগ থেকে ছাতা বের করলাম। এবার এগোতে লাগলাম। এতক্ষন পর্যন্ত আমার কোন অসুবিধা হচ্ছিল না। এখন দেখি ঘামতে শুরু করেছি। আমি তাড়াতাড়ি অমৃতকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। প্রায় মিনিট কুড়ি পরে আমাদের গন্তব্য স্থল আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় পলিটেকনিক কলেজে পৌছে গেলাম। তাড়াতাড়ি হল খুঁজে দোতলায় আমার জায়গায় গিয়ে বসলাম। কি কারনে জানি না আমার প্যালপিটিশান হতে শুরু করেছে। বুকে যেন কে হাতুড়ী মেরে চলেছে। কিছুতেই থামতে চায় না। অবশেষে আমার প্রেসার বেড়েছে অনুমান করে একটি প্রেসারের ট্যাবলেট আর একট র‍্যানটেক একসঙ্গে খেলাম। আধা ঘন্টার মধ্যে ফল পেলাম। একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। এবারে বেশ নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিলাম।
পরীক্ষা শেষ হতেই আমি আর দেরী করলাম না। আমি অমৃতকে ডেকে নিয়ে স্টেশনে উপস্থিত হলাম।কিছুক্ষন পরেই দেখি স্টেশন একেবারে লোকে থিক থিক করছে। পরীক্ষার পরদিন ছিল ইদ। ফলে স্টেশনে ভীড় তো থাকবেই। ভাবলাম এই ভীড়ে আমি বোধহয় আর বাড়ি ফিরতে পারবো না। ইতি মধ্যে নামখানার ট্রেন এসে গেল। আমি ট্রেনে ঊঠার চেষ্টা করতেই পিছনের পেসেঞ্জারের ভীড়ে আমি আপনা আপনি ট্রেনে ঊঠে পড়লাম। এবার অনেক কষ্টে একটি ফ্যানের তলাম গিয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হলাম। এবার আমি নিশ্চিন্ত হলাম। তারপর যত ট্রেন এগোতে লাগলো পাল্লা দিয়ে ভীড়ও বাড়তে লাগলো। বারুইপুর পেরোনোর পর ভীড় কমতে শুরু করলো। অবশেষে মথুরাপুরে এসে সকল ভীড় থেকে মুক্তি পেলাম। এবার আমাদের খুব খিদে পেলো। আমি আর অমৃত আয়েশ করে ঘুগনি খেলাম। অমৃত খেলো এক প্লেট আর আমি খেলাম দু'প্লেট। অবশেষে আমরা বিকাল পাঁচটার সময় নামখানা স্টেশনে নামলাম। নেমেই দেখি আকাশ মেঘে ঘনঘটা। তাড়াতাড়ি বাড়ির পথ ধরলাম।

কপিরাইট @তারাপদ মাঝি
১৭ই আগষ্ট ২০১৯
দেবনগর-নামখানা

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.