#নারায়নীতলা_গ্রাম_পঞ্চায়েতের_আত্মজীবনী


আমি নারায়নীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত। আমার অবস্থান দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগর থানার অন্তর্গত জয়নগর -১ ব্লক। আমার উত্তরে বারুইপুর ব্লক, পশ্চিমে মগরাহাট ব্লক, দক্ষিনে ও পুর্বে যথাক্রমে জয়নগর-১ ব্লকের দক্ষিন বারাসাত পঞ্চায়েত এবং খাকুড়দা পঞ্চায়েত। আমার আয়তন বেশ ছোট কিন্তু আমার দেহে বসবাস করা লোকের সংখ্যা অনেক বেশী। আমার বুকের উপর দিয়ে দক্ষিন পূর্ব দিক দিয়ে অবস্থান করছে নামখানা শিয়ালদহ ট্রেন লাইন এবং প্রায় আমার শরীরের মাঝ বরাবর অজগর সাপের মতো আঁকাবাঁকা গতিতে বয়ে গেছে কুল্পী-বারুইপুর-কলকাতা রাজ্য সড়ক।
আমার নাম কিন্তু নারায়নীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত নয়। আমার নাম মানুষের ভাষায় পৃথিবী, বিশ্ব, ধরিত্রী, ধরা, ভূ, নিখিল, ধরণী, অখিল, বসুন্ধরা বা ওয়ার্ল্ড।মানুষের আগে যারা আমার বুকে বাস করতে এলো তারা আমার অস্তীত্বকে বুঝতেই পারলো না। আমি যে তাদের ধারণ করে লালন পালন করছি তা তারা বুঝবে কেমন করে! কারণ তারা ছিল মস্তিস্কহীন। পরে এলো মানুষ। তারা আমাকে বুঝলো। আস্তে আস্তে আমার উপর তাদের অধিকার নিয়ে শুরু হলো নিজেদের মধ্যে লড়াই। আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করতে গিয়ে তারা মাপ জোক করে একটি করে নামকরণ করতে শুরু করল। আমাকে ভাগ করে নামকরণ করল বিভিন্ন মহাদেশ আর মহাসাগরে। তাতেও মানুষ সন্তুষ্ট হলো না। আমাকে ভাগ করতে করতে ক্রমশ ছোট করে আনতে লাগলো। আমি মহাদেশ থেকে দেশ, দেশ থেকে রাজ্য, রাজ্য থেকে জেলা, জেলা থেকে ব্লক,ব্লক থেকে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত থেকে গ্রাম, এবং সব শেষে গাম থেকে পাড়ায় পরিনত হলাম।বর্তমানে আমার সর্ব নিম্ন ভৌগোলিক সীমারেখা হলো গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রাম সংসদ।
এবার পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ইতিহাস একটু বলা যাক।প্রথমে আমার বুকে বসবাস করা মানুষেরা নিজেদের স্থানীয় অস্তিত্বকে পরিচালনা করতো স্থানীয় অঞ্চলের জনা পাঁচেক কেউকেটা মানুষ। পরে মানব সভ্যতা যত এগিয়েছে, ততই তার স্থানীয় অস্তিত্ব পরিচালনার পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়েছে। তবে আমি যেহেতু ভারত দেশের অন্তর্গত তাই ভারতের ইতিহাস পড়লে আমার কথাগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হবে।এখন যারা আমার বুকে বসবাস করছে তারা প্রথম থেকে এখানের স্থায়ী বাসিন্দা নয়। এখনকার সমাজ ব্যবস্থায় যারা কোল, ভিল, সাঁওতাল, মুন্ডা,গারো প্রভৃতি হিসাবে যারা পরিচিত তারাই আমার সত্যিকারের বাসিন্দা। তারপর এলো আর্য নামে এক জাতি। তারা আমার আদি বাসীদের থেকে সম্পুর্ন আলাদা। আদি বাসীরা বেঁটে খাটো এবং অসম্ভব কালো। কিন্তু আর্যরা দীর্ঘ দেহী এবং ফর্সা। তারা যেমন আদি বাসীদের এড়িয়ে চলতো, আদি বাসীরা তেমনি আর্যদের এড়িয়ে চলতো। তখন আদি বাসীরা তাদের মতো করে নিজেদের শাসন করতো আর আর্যরা তেমনি নিজেদের মতো করে শাসন করতো। যত মানুষের জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, ততই তাদের শাসন ব্যবস্থার ধরন পাল্টাতে থাকে।
এক সময় ভারতে সম্পদের লোভে শক,হূন,মোগল,পাঠান,মুসলমান এবং সব শেষে এলো ইংরাজ জাতি। এই জাতিগুলি নিজেদের মতো করে এখানকার মানুষকে শাসন করেছে এবং এদেশের মানুষকে লুটেছে। শুধু তাই নয় ভিন্ন ভিন্ন জাতির মানুষের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন করে বা জোর পূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে সব জাতি একাকার হয়ে গেছে। অবশেষে ইংরাজ রাজত্বে একটি সুচিন্তিত শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। সেই লিখিত শাসন ব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরলে তোমরা সবাই বুঝতে পারবে আমার সৃষ্টির রহস্য।
পঞ্চায়েত ব্যবস্থা হলো একটি স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন ব্যবস্থা। ১৮৭০ সালে প্রথম ইংরেজরা “বঙ্গীয় চৌকিদারী আইন”এর মাধ্যমে বাংলায় স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসনের ব্যবস্থা করা হয়।১৮৮৫ সালে “বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন” এর মাধ্যমে বঙ্গে ত্রি-স্তরীয় জনপ্রতিনিধিত্ব মূলক স্বায়ত্ত শাসন ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর ১৯১৯ সালে ১৮৮৫ সালের আইনকে সংশোধন করে স্বায়ত্ত শাসন কাজের পরিধীকে বাড়ানো হয়।
এরপর ভারত তথা বাংলায় ইংরেজ তাড়ানোর স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয় এবং বাংলায় স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। অবশেষে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয়। কিন্তু তাৎপর্যপুর্ন ভাবে সংবিধানে স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন বিষয়ে কোন কিছু নির্দিষ্ট করে বলা হলো না। কেবল মাত্র সংবিধানের নির্দেশমূলক নীতির ৪০ নং অনুচ্ছেদে বলা হলো যে – কোন রাজ্য মনে করলে নিজেরা পঞ্চায়েত গঠন করে স্বায়ত্ত শাসনের ব্যবস্থা করতে পারে। নির্দেশমূলক নীতি এমনই এক ধারা তা কোন রাজ্যকে মানতেই হবে এমন নয়।সংবিধান রচনা হওয়ার পর ১৯৫০ সালে ভারতের গনপরিষদে এই সংবিধান গৃহিত হওয়ার পর ভারত সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য পরিকল্পনা গ্রহন করেন।এই পরিকল্পনাগুলি ছিল সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। পাঁচ বছর পর পরিকল্পনা শেষ হয় এবং ১৯৫৭ সালে এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকরী হয়েছে তা মূল্যায়নের জন্য বলবন্ত রাও মেহতার নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি সমস্ত দিক বিবেচনা করে ভারতের প্রতিটি রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সুপারিশ করে। এই সুপারিশকে মান্যতা দিয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও “পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন, ১৯৫৭” এবং “পশ্চিমবঙ্গ জেলা পরিষদ আইন,১৯৬৩”র পশ্চিমবঙ্গে চার স্তর বিশিষ্ট পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে উঠে। এটাই হলো পশ্চিম বঙ্গের প্রথম প্রজন্মের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এবং এই সময়ই আমি নারায়নীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত হিসাবে পরি পূর্নতা লাভ করি।
কিন্তু পরে ১৯৭৩ সালে পঞ্চায়েত আইন এবং পঞ্চায়েত সমিতির আইন দুটিকে একত্রিত করে এবং কিছুটা সংশোধন ও সংযোজন করে “পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন ১৯৭৩” প্রনয়ন করা হয়। তখন আমাকে শাসন করতো আমার বুকে বসবাস করা মান্য গন্য মানুষেরা বিভিন্ন ভাবে নির্বাচনের মাধমে যাদের মধ্যে কোন রাজনৈতিক ব্যানার ছিল না।
১৯৭৭ সালে অশোক মেহতার নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি গঠন করা হয় যাকে নব গঠিত পঞ্চায়েতগুলির কাজ কর্মের পর্যালোচনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এই কমিটি পঞ্চায়েতগুলির নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলিকে অংশ গ্রহন করার সুপারিশ করে। ১৯৭৮ সালে “ পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন ১৯৭৩” কে সংশোধন করে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলে শুরু হয়ে যায় তৃতীয় প্রজন্মের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা।
এরপর ১৯৯২ সালে এলো সে সন্ধিক্ষণ। এই সালে সংবিধানের ৭৩ নং এবং ৭৪ নং সংশোধন করা হয়। ৭৩ নং সংশোধনের মাধ্যমে (১)পঞ্চায়েতকে স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।(২) পঞ্চায়েতের নির্বাচনের জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে পঞ্চায়েতের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে।(৩) গ্রাম সভার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।(৪) আসন সংরক্ষণ, তপশিলি জাতি-উপজাতি এবং মহিলাদের অংশ গ্রহনকে নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই সময় থেকে আমি হয়ে গেলাম একেবারে পূর্ণ যুবতী।
আমাকে এখন পর্যন্ত যারা প্রধান হিসাবে শাসন করে গেছেন তাদের অনেকের নাম আমার মনে নেই। কারণ আমার কর্মকান্ড এতো বেড়ে গেছে যে আমি আর সব কিছু মনে রাখতে পারছি না। আমার যতদূর মনে পড়ে আমাকে এ পর্যন্ত যারা শাসন করে গেছেন তারা হলেন মৃত্যুঞ্জয় মোদক,প্রদ্যুৎ ঘোষ, বিজলী নস্কর, শেফালী নস্কর, রুবী ঘোষ এবং অশোক কুমার সাহা। অশোকবাবুই এখন বর্তমানে প্রধান হিসাবে আমাকে শাসন করছেন এবং আগামী চার বছর আমাকে শাসন করবেন। ইতি মধ্যে তিনি আমার অধিবাসীদের উন্নয়নের কাজে হস্তক্ষেপ করেছেন।
আমার আগের বোর্ডের সদস্যরা হলেন(১)নারায়নীতলার-গোপাল মন্ডল,মৌসুমী সর্দার, অর্চনা বৈদ্য,(২) বেলিয়াচন্ডীর-রুবী ঘোষ, তুহীন ভদ্র (৩) কাঁটাপুকুরিয়ার-নিমাই মন্ডল, শেফালী নস্কর (৪)সরবেড়িয়ার-জয় চক্রবর্তী, সুস্মিতা সাহা,(৫) ব্যাজড়া ও মোলিঘাটির- মৌসুমী নস্কর(৬) হোগলার-জাকির হোসেন মোল্লা এবং অশোক সাহা। এঁদের থেকে রুবী ঘোষ প্রধান হয়ে সাফল্যের সঙ্গে পাঁচ বছর শাসন করেছেন।
বর্তমানে যে বোর্ড আমাকে শাসন করছেন তারা হলেন(১) নারায়নীতলার- গোপাল মন্ডল, মামনী মন্ডল এবং অমিত মৈত্র (২) বেলিয়াচন্ডীর- মাতু হাজরা এবং দূর্গা মন্ডল(৩) কাঁটাপুকুরিয়ার- বাবলু সরকার এবং সুন্দরী নস্কর(৪) সরবেড়িয়ার- অশোক সাহা এবং চন্দ্রিমা ঘোষ(৫) ব্যাজড়া ও মোলিঘাটির- সুশোমন ঘরামী(৬) হোগলার- আম্বিয়া বিবি মোল্লা এবং সুলতানা বিবি মোল্লা। এই বোর্ডে প্রধান হিসাবে শাসন করছেন মাননীয় অশোক সাহা মহাশয়।
আমাতে বসবাস কারী লোকেরদের অনেকটাই তপশিলি জাতিভুক্ত। উচ্চ বর্নের সংখ্যা মোটামুটি কম। বেশীরভাগ মানুষ কৃষিজীবি। এছাড়া কিছু মানুষ চাকুরী ও ব্যবসা করে থাকেন। খুব দরিদ্র ব্যক্তিরা আমার হোগলা আর গোচরণ স্টেশন থেকে রোজ সকালে কলকাতায় কাজ করতে বা কাজের সন্ধ্যানে যায়। কৃষিজ ফসলের মধ্যে ধানের পরিমান বেশ কম। তবে পেয়ারা, লিচু, সবেদা, কাঁঠাল, আম, করমচা, সুপারী এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল। ব্যাজড়া, হোগলা বেগুন,লঙ্কা,লাউ, পেঁপে, বিভিন্ন ধরনের শাক, ঢেড়শ ইত্যাদি চাষের জন্য বেশ সুনাম আছে। হোগলার বিশাল জলা জমিতে বর্ষাকালে পানিফল চাষ বঙ্গ বিখ্যাত করে তুলেছে।
আমার বুকের উপর দিয়ে রাজ্য সড়ক যাওয়ায় গোচরণ মোড়ে, বেলিয়াচন্ডীর মোড়ে, সরবেড়িয়ার মোড়ে এবং হোগলার বাংলার মোড়ে বেশ ভালো দোকান সহ বাজার গড়ে উঠেছে। এখানে অনেক মানুষ বিভিন্ন ব্যবসা করে আর্থিক দিক থেকে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। হোগলাতে প্রায় শ'খানিক প্রতিষ্ঠানে সমবায় ভিত্তিক এমব্রয়ডারী শিল্প এবং দর্জিশিল্প গড়ে উঠেছে যা এলাকাকে ঐতিহ্যমন্ডিত করে তুলেছে।
আমার রাধাবল্লভ তলায় কালী মন্দির, কাঁটাপুকুরিয়ায় কালী মন্দির এবং হনুমান মন্দির, বেলিয়াচন্ডীতে রাস্তার উপর শ্মশান কালী মন্দির এবং বজরংবলী মন্দির, নারায়নীতলাতে নারায়নীর মন্দির এবং সরবেড়িয়ায় পঞ্চানন ঠাকুরের মন্দির রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দিরটি হলো ব্যাজড়ার উপর প্রাচীন কালী মন্দির পশ্চিমবঙ্গ বিখ্যাত। এ ছাড়া হোগলার বাংলার মোড়ে দুটি জামে মসজিদ এবং হোগলার গ্রামের ভিতরে আরও দুটি জামে মসজিদ আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই।
আমার প্রত্যেকটি গ্রাম সংসদে প্রায় চারটি করে নলকূপ, একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া প্রাথিমক শিক্ষার জন্য কয়েকটি প্রাইভেট নার্সারী স্কুল রয়েছে যাদের মধ্যে নর্থ পয়েন্ট স্কুলটি সবচেয়ে বিখ্যাত এবং উচ্চ মানের। পূর্ব প্রাথমিক স্তরের জন্য প্রায় ৩২ টি আই সি ডি এস স্কুল আছে। একটি বয়েজ হাইস্কুল(উচ্চ মাধ্যমিক) এবং দুটি গার্লস হাইস্কুল রয়েছে। এছাড়া একটি ল'কলেজ নির্মিত হয়েছে যা এখনো উদ্বোধন হয় নি। শিক্ষা ব্যবস্থার দিক থেকে আমার জনসাধারণের কোন অভাব রাখিনি।
তবে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে আমি খানিকটা পিছিয়ে। ভাগ্যিস আমার অবস্থান বারুইপুর মহকুমা এবং তিলোত্তমা কলকাতার কাছাকাছি হওয়ায় আমার সন্তানরা চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হননি। তবুও আমার কাছাকাছি পদ্মের হাটের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সুবিধা ভোগ করে। এছাড়া নিয়মিতভাবে আমার প্রসূতি মায়েরা তিনটি হেলথ-সাব-সেন্টারের সুবিধা,একজন এন এম, তিনজন এ এন এম এবং বেশ কয়েকজন আশা কর্মীর সাহায্য পেয়ে থাকেন।
বাঙালীর বারো মাসে তের পার্বন। তাদের মধ্যে দূর্গাপূজা অন্যতম।এখানে দূর্গাপূজা মোটামুটি ধূমধামের সঙ্গে হয়। বিভিন্ন জায়গায় মানুষেরা সাধ্যমত মায়ের আরাধনা করেন। কিন্তু সরবেড়িয়া, বেলিয়াচন্ডী এবং গোচরণের মা জগধাত্রীর পূজা দূর্গা পূজার চেয়েও জাকজমক সহকারের হয়।তখন কয়েকদিন আলোর বন্যায় আমি ভাসতে থাকি। এখানেও শেষ নয়। শ্রাবন মাসে সরবেড়িয়ার একমাত্র পঞ্চানন মন্দিরের পূজা আমার অত্যন্ত আদরের। ঐ সময় যে মেলা বসে তাতে এলাকাবাসীরা বেশ আনন্দ উপভোগ করে।
এবার আমার কিছু সন্তানদের কথা বলবো। এরা আমাকে শাসন করার জন্য নারায়নীতলার রাজনীতিতে এদের অবদান অনস্বীকার্য। আমার সন্তানদের মধ্যে প্রথমেই নাম করতে হবে মৃত্যুঞ্জয় মোদক যিনি আমার উপর আমাকে প্রশাসিত করার জন্য একটি সুদৃঢ় আলয় নির্মান করেছেন এবং বলতে গেলে নারায়নীতলার বর্তমান রাজনীতিবিদদের অধিকাংশ ওঁর হাতেই গড়া। এর পরে আসবেন মাননীয় সজল কুমার ঘোষ, অশোক সাহা, রঞ্জিত চক্রবর্তী, মাতু হাজরা,
গোপাল মন্ডল, অমিত মৈত্র, বাবলু সরকার এবং আরও অনেকে। তবে রাজনীতিতে কে কখন কিভাবে বাজিমাত করবে সে কথা বলা মুসকিল।
আমাকে যারা শাসন করছেন, তারা আমাকে আস্তে আস্তে সুসজ্জিত করে তুলছেন। আগামী দিনে আমি হয়তো তিলোত্তমা কলকাতার মতো হয়ে যাবো। তখন আমার গ্রাম উঠে যাবে শহরে। এই যে সব এতো কর্ম কান্ড হচ্ছে তার মধ্যে কিছু লোক আছে যারা রাত দিন ঠিক আয়ার মতো তাদের সেবা দিয়ে আমাকে নিরেট নিটোল করে তুলছেন। অথচ তারা থেকে যাচ্ছেন একেবারে লোক চক্ষুর আড়ালে। তারা হলেন আমার অতি একান্ত আপন জন। আমার আয়া- পঞ্চায়েতের কর্মচারীবৃন্দ।এরা সরকার দ্বারা নিয়োজিত এবং সরকার দ্বারা সময়ে সময়ে স্থানান্তরিত। তাই সকলের নাম আমার মনে নেই। বর্তমানে এখন যারা আছেন তারা হলেন(১)রবীন্দ্রনাথ হালদার- নির্বাহী সহায়ক(২) কৌশিক সরকার-সচিব(৩) সোহম কর- নির্মান সহায়ক(৪)তারাপদ মাঝি-সহায়ক(৫) শিবদাস মন্ডল-সহায়ক(৬) সঞ্জিত বর্মন-পঞ্চায়েত কর্মী(৭) রঞ্জন হালদার-ভি এল ই(৮) নয়ন ভদ্র-গ্রাম রোজগার সহায়ক।
এই হলো মোটামুটি আমার আত্মজীবনী। এই জীবন অনাদি অনন্ত। আমি আমার বাকি সময়ের গল্প পরে জানাব। আজ তাহলে বিদায় জানাই।

কপিরাইট @তারাপদ মাঝি
দেবনগর-নামখানা
১৪/০৯/১৯.

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.