পঞ্চানন মামারাই সুখী

সুন্দর গল্প ও কবিতা

রবির কিরণ পড়েছে ধানের ক্ষেতে।
সবুজ সাগরে কিরণ পড়েছে বলে
ক্ষেতের সে কি আনন্দ হাসি আন্দোলিত।
দখিনা সমীরণ ক্ষেতের উপর দোলা দিয়ে যায়।
ক্ষেতের মাঝ বরাবর এদিক ওদিক আল দিয়ে ঘেরা।
যেন তারা এক একটি লাউ ডোকা সাপ!
আমি সবে মাত্র প্রাতক্রিয়া সেরে বাড়ি থেকে নেমেছি পথে।
ডাক্তারের নির্দেশ রোজ হাঁটা চাই,
তা নইলে শোনিতের মিষ্টতা যাবে বেড়ে।
পায়ে চটি,পরনে লুঙ্গি আর গায়ে একখানা গেঞ্জি
হাতে মোবাইল নিয়ে হন্ হনিয়ে চলেছি হেঁটে।
মেঠো পথে শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে চলেছি,
ইউটিউবে বাজিয়ে চলেছি ভোরাইয়ের গান।
এমন সময় দেখি ক্ষেতের মাঝে পঞ্চানন মামা দাঁড়িয়ে।
বুঝতে পারি ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কারে নেমেছে ক্ষেতে।
তা বলে এত সকাল সকাল!
বললাম মামা এত সকালে আগাছা পরিষ্কারে ক্ষেতে না নামলে কি নয়?
ক্ষেতের আগাছাদের ভিতর যদি থাকে মা মনসার বাহন?
কিংবা কোন বিষাক্ত পোকা মাকড়!
জীবনের কি এতই মূল্য কম!
মুচকি হাসি দিয়ে বলে মামা-
ভাগ্নে পৃথিবীতে সবার কপাল কি সমান?
পৃথিবীতে কেউ আকাশ ছোঁয়া বাড়ি করে, কারুর কুড়ে ঘর!
জগতে সকল সুখ সবার জন্য নয়।
যে যেমন ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে ধরায় তেমনই সে সুখ পায়।
আমার কপালে এই টুকু সুখ ক্ষেতের মাঝে কর্ম,
সেই ভাগ্যে কাজ করি কাজ আমার ধর্ম।
আবার আপন খেয়ালে হেঁটে চলি।
মামা কত সুখী!
অফিসে বড় বাবুর চোখ রাঙানি নেই, নেই ফাইলের বোঝা!
পাবলিকের ভিড় নেই, নেই হিসাব মেলানোর টেনশান!
ট্রেনে বাসে ভিড় নেই অফিস যাওয়ার তাড়া নেই।
বেতনের টাকায় হিসেব কষে সংসার চালানোর টেনশানও নেই।
পে কমিশনের আশা নেই, ডি.এ'র হিসাব নেই।
পরনে ছেঁড়া গামছা, গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি পরে মামা
দুশ্চিন্তাহীন নিরুপদ্রব জীবন কাটান অনায়াসে।
জীবনে কোন লক্ষ্য নেই, উচ্চাশা নেই, বিলাসিতা নেই।
শুধু দু'বেলা দু'মুঠো শাক ভাত হলে আর কোন চিন্তা নেই।
রাতের আহার শেষে নাসারন্ধ্রে সর্ষে তেল লাগিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুম।
পৃথিবীতে পঞ্চানন মামারাই সব চেয়ে সুখী।
কপিরাইট@তারাপদ মাঝি
দেবনগর-নামখানা
১৬ই সেপ্টেম্বর,২০১৯।

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.