#করোনার_প্রতিষেধক_আবিস্কার।


দেশ এখন এক নিরবিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করে চলছে। কিন্তু এই আন্দোলন কোন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়, বা কোন বৈদেশিক আক্রমনের বিরুদ্ধেও নয়। এই আন্দোলন একটি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জীবানুর বিরুদ্ধে যাকে কিনা খালি চোখে দেখা যায় না।একে দেখতে হলে ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোবের সাহায্য নিতে হবে। অথচ এই সামান্য জীবানু পৃথিবীর মানব জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। পৃথিবীর মহা প্রতাপশালী মানবজাতি আজ অসহায়ের মতো এই জীবানু থেকে আত্মরক্ষার জন্য মাথা কুটে মরছে।আধুনিক সভ্যতার দিশারী মানবজাতি পৃথিবীর অন্যান্য প্রানী প্রজাতির উপর তার অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য করিয়েছে। হিংস্র বন্য জন্তু বা হিংস্র কাকোদর পর্যন্ত মানবজাতির ভয়ে সর্বদা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। শুধু তাই নয়,মানব প্রজাতি আজ অসীম অন্তরীক্ষে পাড়ি জমিয়েছে। চন্দ্র মঙ্গল তার পদানত। আজ বিশ্বের কোন কোন অঞ্চলের মানব প্রজাতি শিক্ষায় এতো উন্নত যে নিজ আবিস্কৃত মারনাস্ত্র দ্বারা অন্য অঞ্চলের মানব প্রজাতিকে নিমেষে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।অথচ এই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জীবানুর কাছে সে নিতান্ত অসহায় বোধ করছে। তাই তো সে আজ নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছে এবং ভাইরাসের আক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা করছে।
এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আমরা ভারতীয়রা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এবং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছি। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে আমরা বিভিন্ন গুজবের স্বীকার হচ্ছি। গুজবগুলোও বেশ মজার মজার। আসুন সেই গুজবগুলো এখন আলোচনা করি।
গো-মুত্র গোময় ভক্ষণঃ প্রথমেই গুজব ওঠে যে যদি কেউ খালি পেটে গো-মুত্রে গোময় দ্রবীভূত করে ভক্ষণ করে তাহলে সে ভয়ংকর করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবে। দেখলাম মানুষেরা প্রানের দায়ে তা ভক্ষণও করছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে স্বমুত্র এবং গোমুত্রকে ঔষধি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে বটে, কিন্তু গোময়কে ব্যবহার করা হয় নি। চরক এবইং শুশ্রুতের ভাষ্যেও গোমুত্র ও স্বমুত্রের ব্যবহারের উল্লেখ থাকলেও সব রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার যোগ্য কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহ যুক্ত।হোমিওপ্যাথি শাস্ত্রে স্বমুত্র পানের ব্যবহারের উল্লেখ দেখা যায় সেই সব রোগের ক্ষেত্রে যখন রোগী অসাড়ে বিছানায় প্রস্রাব ত্যাগ করে। অবশ্য ভারতের তন্ত্র শাস্ত্রে স্বমুত্র পান বা গোমুত্র পানের কথা বলা হয়েছে।ডামর তন্ত্রের ১০৮ টি শ্লোকে স্বমুত্র বা শিবাম্বু পানের নিয়ম কানুন এবং তার ফলাফল সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিন্তু সেই স্বমুত্র পানে কোরোনা ভাইরাস পরাভূত হবে কিনা আমার জানা নেই।
কাঁসর-ঘন্টা,হাততালি,শঙখধ্বনিঃ একদিন সকাল সাতটায় উঠে শুনলাম গ্রামজুড়ে কাঁসর, ঘন্টা, হাততালি আর সুমধুর শঙখধ্বনি। আমি নিদ্রালু কন্ঠে আমার অর্ধাঙ্গীনীকে জিজ্ঞাসা করলাম যে গ্রামবাসিরা এমন ধ্বনি দিচ্ছে কেন। তখন অর্ধাঙ্গীনী হাত মুখ নেড়ে উত্তর দিল যে কোন এক দেবী স্বপ্নাদেশে বলেছেন যে সকালে উঠে সবাই মিলে কাঁসর, ঘন্টা, হাততালি আর শঙখধ্বনি দিলে করোনা ভাইরাস শব্দের প্রচুর্য্যে ধ্বংস হবে। তাই সবাই এরকম ধ্বনি দিচ্ছে। আমি প্রমাদ গুনলাম। এ কিরকম দেবী মা! শব্দের অসীম ক্ষমতা ঠিকই। কিন্তু তার কম্পাঙ্ক এবং তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। কত কম্পাঙ্ক এবং কতটা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য পর্যন্ত ভাইরাস সহ্য করতে পারে,তা ঠিক করার পর কম্পাঙ্ক ও দৈর্ঘ্যের হেরফের হওয়া উচিত। এভাবে আনাড়ি ভাবে কি তা সম্ভব? আবার যে ভাইরাস মানব শরীরে বাসা বেঁধেছে, তার বিনাশ কি এভাবে সম্ভব? এইসব কথা যখন ভাবছি, তখন আগের দিনের প্রধান মন্ত্রীর ভাষণের কথা স্মরণে এলো। প্রধান মন্ত্রী বলেছিলেন যে সমস্ত ডাক্তার,নার্স,আশা কর্মী ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা যেভানে প্রানের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছেন তাদেরকে সারা দেশবাসী আগামীকাল সকাল সাতটায় করতালি, কাঁসর, ঘন্টা বা শঙখধ্বনি দিয়ে অভিবাদন জানান। এই শঙখধ্বনি তারই প্রকাশ।
বাবা চন্দনেশ্বরের আদেশঃ সুর্য তখন অস্তগামী।হঠাৎ আমার সহধর্মিনী হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো-শুনছো, বাবা চন্দনেশ্বর স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে প্রত্যকের বাড়ির তুলসী মঞ্চের ডানপাশে একটুখানি মাটি খঁড়লে একড়ি চারকোল পাওয়া যাবেই। সেই চারকোল ভক্তিভরে চন্দনের শিলে চন্দনের মতো ঘুরিয়ে তার ফোঁটা মাথায় লাগালে কোরোনা ভাইরাস আর আক্রমন করতে পারবে না। পরের দিন সকালে স্নান করে সেই চারকোলের ফোঁটা নিলাম।তা সে ভয়েই হোক, বা বিশ্বাসেই হোক গিন্নিকে চটাতে আমি কিছুতেই চাই না।
আলতা সিঁদুর পরাঃ গত বৃহষ্পতিবার একেবারে সকালে উঠে গিন্নিকে দেখে একেবারে অবাক হয়ে গেলাম। একটু রাত করে ঘুমিয়েছিলাম। তাই স্বাভাবিকভাবে উঠতে দেরি হয়েছে।প্রায় সাড়ে সাতটার সময় উঠে দেখলাম যে গিন্নির একেবারে ভিন্ন রুপ। সদ্য স্নান করেছে। সুন্দর একখানা শাড়ী পরেছে। পায়ে আলতা একেবারে মাখামাখি, সিথিতে সিঁদুর একটু বেশী করেই লাগানো।তার উপর কপালের সিঁদুরের টিপটি যেন উদিত রক্তাভ সুর্যের মতো। বললাম- কি গো এত সাজুগুজু কিসের! বাপের বাড়ি যাবে না কি? কিন্তু বাপের বাড়ি তো যেতে পারবে না! লকডাউওন চলছে যে! গিন্নি বললে- তোমার যেমন কথা। বাপের বাড়ি যাচ্ছে কে? আমি তো ঠাকুরের কথা শুনে এ সব পরেছি।
বললাম ঠাকুরের কথা মানে?
কাল গোপাল নগরে এক নবজাতিকা জন্ম গ্রহন করার পরই মারা যায়। কিন্তু তার আগেই সে ষ্পষ্ট ভাষায় জানায় যে সমস্ত সধবা স্ত্রীলোক কাল সকাল সাতটার মধ্যে আলতা সিঁদুর যদি পরে, তাহলে তার পরিবার করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকবে। আমি আর কিছু বললাম না।মানুষের বিশ্বাসকে অপমান করতে চাই না।আবার সে বিশ্বাস যদি দেব দেবীর প্রতি হয়, তাহলে তো নয়ই। বিশ্বাস যদি অন্ধ হয় তাহলে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি, তাতে বুঝলে ভালো। না হলে আমার কিছু করার থাকে না।কিন্তু আমার স্ত্রীকে বোঝানোর সাধ্যি আমার নেই। অগত্যা স্ত্রী দেবতায়ৈ নমঃ

চিন দেশে উঠলো ঢেউ, আমরা সবাই ঘরে ফাউ।
সেই ঢেউতে যদি পড়ে কেউ,সে কাঁদবে হাউ হাউ।।

কপিরাইট@কৃষ্ণদ্বৈপায়ন
নামখানা
২৮ শে মার্চ,২০২০

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.