. অগত্যা পরকীয়া

. অগত্যা পরকীয়া

-শোনো আমার খুব ইচ্ছে করছে! এই শ্রাবনের ধারা আর হিমেল হাওয়া আমাকে পাগল করে তুলেছে। আজ তোমাকে খুব আপন করে পেতে চাই তন্দ্রা। বিপ্লব তার স্ত্রী তন্দ্রার গালে নিজের খোঁচা খোঁচা দাড়ি ঘসতে ঘসতে খুব আবেগঘনভাবে ফিস ফিস করে কথা গুলো বলে।
-বিপ্লবের কথা শুনে তন্দ্রা একেবারে ঝাঁকিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে। তারপর লজ্জার মাথা খেয়ে বেশ খানিকটা জোরে চিৎকার করে বলে- “বলি তোমার লজ্জা করে! বয়স কত হলো জানো? এখনো শখ গেলো না! আমার কথা ভেবেছো কোন দিন।চারটে বাচ্চার জন্ম দিয়েছি। সারাদিন বাড়ির কাজ করতে প্রানের দম ফুরিয়ে যায়। তা সেসব কথা ভেবেছো কোন দিন! এই বয়সে এখনো শোয়ার শখ গেলো না! দিন রাত খালি শোয়া আর শোয়া! বলি শোয়া ছাড়া আর কি কিছু চিন্তা তোমার মাথায় আসে না?”
-তন্দ্রার কথা শুনে বেচারা বিপ্লবের রোমান্সটাই মাটি হলো। কিন্তু যৌনতা এমন একটি বিষয় কোনো কোনো সময় মানুষ তার বর্তমান পরিস্থিতি ভুলে যায়। সে পাগল হয়ে অনর্থক তর্ক বিতর্ক শুরু করে। যেমন আজ বিপ্লব আর তন্দ্রার মধ্যে শুরু হলো।তন্দ্রার কথা শুনে বিপ্লবও লজ্জাশরম বিসর্জন দিলো। সে তন্দ্রার সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিলো। সে চিৎকার করে বলতে লাগলো- “শুতে যদি না পারবে তাহলে বিয়ে করেছিলে কেন? সন্যাসিনী হয়ে থাকতে পারতে! মিছি মিছি একটি পুরুষের জীবনে নষ্ট করতে গেলে কেন?”
-তন্দ্রাও থেমে যাওয়ার পাত্রী নন। তিনিও বলতে শুরু করলেন-“বলি শুইনি মানে? দুটি ছেলে আর একটি মেয়ে কি হাওয়া কলে জন্ম হলো? আসলে তুমি হলে ফুর্তিবাজ লোক। কোন কাজ কর্ম নাই। শুধু দোকানে যাওয়া আর কিভাবে রাতে বউকে জ্বালাবে সেই ফন্দি আঁটা। কিন্তু একবার বউয়ের শরীরের দিকে খেয়াল রাখে না। কোন দিন ভেবেছো কি মেয়েদের শরীর থেকে কতটা রক্ত নষ্ট হয়! সেইমতো কোন খাবারের ব্যবস্থা করেছো কি? শরীরটা আমার সুস্থ হবে কি করে। আর তোমার শখ মেটাবো কি করে?”
-“শোয়ার কথা বললেই তো তোমার কত রকম অজুহাত বেরিয়ে আসে। আমার কি টাকার অভাব। বাড়িতে খাওয়ার অভাব রেখেছি নাকি? বাড়িতে তিনটে কাজের লোক রেখেছে। তুমি কাজ করবে কেন? শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে যাওয়া,খাবারের অভাব,কাজের চাপ আরও কত কি।কই অন্য কারুর বউতো এসব কথা বলে নি? শুধু তোমার খালি নানা অসুবিধা! তোমায় বিয়ে করে যে কি ভুল করেছি সে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি”।
-“ও অন্য লোকের বউয়ের কাছে গিয়ে তাহলে আজকাল সাধ মেটাচ্ছো! তা ভালো তো। আজও সেখানে গিয়ে সাধ মিটিয়ে এসো। আমার কাছে কেন লেজ নাড়ছো? তুমি হলে ভাদুরে কুত্তা।কিছতেই মাদী কুকুরের সাথ ছাড়বে না।কতবার বলেছি ডাক্তার দে#সখাতে। ডাক্তার দেখালে এত শখ আর থাকবে না। তাহলে তুমি সুস্থ থাকবে। তা নয়, খালি প্রতি রাতে আমায় বিরক্ত করবে”। কথাগুলো বলে তন্দ্রা একখানা বেডকভার নিয়ে বারান্দায় মাদুর পেতে শুলো।
এই হলো তন্দ্রা আর বিপ্লবের এক রাতের কথোপকথন।দুজনে হয়তো লজ্জার মাথা খেয়ে ঝগড়া করছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি প্রায় রাতেই ইদানিং শোনা যায়। আমি উনাদের পেয়িং গেষ্ট হিসাবে উনাদের বাড়িতে থাকি। ফলে প্রতি রাতে এসব কাহিনী আমাকে শুনতে হয় এবং শুনে শুনে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।
আমি স্বপ্নময় মুখার্জী। আমার বয়স আসছে ফাগুনে তিরিশ হবে।হলদিয়ার একটি ফ্যান কোম্পানীতে ম্যানেজারের কাজ করি। বিপ্লব চক্রবর্তী আমার পিসতুতো দাদা। কিছুদিন দাদার বাড়িতে থেকে অফিস করবো। তারপর কোম্পানী বাড়ি দিলে উঠে যাবো ঠিক করেছি। আজ মাস তিনেক বিপ্লবদার বাড়িতে আছি।
বিপ্লবদার বয়স আনুমানিক পয়তাল্লিশ বছর। প্রায় ছ'ফুট হাইট। গায়ের রঙ ফর্সা। মাথাভর্তি একরাশ কোঁকড়ানো চুল। একগাল দাড়ি। দেখতে একেবারে বাদশাহের মতো। এরকম সুদর্শন মানুষ খুব কম দেখা যায়।
বৌদির বয়স প্রায় আটত্রিশ।খুব সুন্দরী। একেবারে লক্ষ্মীপ্রতিমার মতো ।যে দেখবে সেই বলবে যে এরা রাজযোটক জুড়ি।আমরা বাইরে ভাবতাম এরকম। কিন্তু ভিতরে যে অন্যরকম সে বুঝলাম অনেকপরে।
বিপ্লবদার রোজগার ভালো।তার একটি কাপড়ের বড় দোকান আছে। দোকানে প্রায় জনা ছয়েক কর্মচারী ।তো সেদিক থেকে ভাত কাপড়ের অভাব তন্দ্রা বৌদির নাই। বাড়িতে দুটি ছেলে আর একটি মেয়ে। মেয়েটি সবার বড়। সে দার্জিলিং এ স্কুলে পড়ে। তাই সেখানের হোষ্টেলে থাকে। বড় ছেলেটি ব্যাঙ্গালোরে কোন একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আর ছোট ছেলেটি রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ে। ফলে বাড়িতে দুটি কাজের মেয়ে আর একটি কাজের লোক আর আমরা দুই ভাই এই ছয়জনে বাড়িতে থাকি। তিন তলা বিশাল বাড়ি। আমি থাকি তিন তলার একটি ঘরে। আর দাদা বৌদি থাকে দু'তলার একটি ঘরে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে বা নীচ তলায় থাকে কাজের লোকেরা। আর কয়েকটা ঘরে কিসব জিনিষ পত্র আছে।
স্বাভাবিক কারনে বৌদির সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ভালোই আছে। সেই হিসাবে আমার সঙ্গে তন্দ্রা বৌদির প্রায় সব রকম আলোচনা হয়। আমি বৌদিকে খুব শ্রদ্ধা করি এবং তার মতামতকে খুব গুরুত্ব দেই। কিন্তু বৌদির সঙ্গে কথা বলার খুব একটা সময় পাই না। কারন আমি তো বেসরকারী কোম্পানীতে কাজ করি। ছুটি প্রায় পাই না। শুধু রবিবার ছুটি পাই। তাই সব রবিবার পাই না। ফলে তন্দ্রা বৌদির সঙ্গে কথা বলা হয়ে ওঠে না।
তো সেদিন রাত ন'টার সময় আমি বাড়ি ফিরলাম আর তিন তলায় যাবার পথে দাদা বৌদির ঝগড়া শুনলাম। আমার ঘরে গিয়ে দাদা-বৌদির ঝগড়ার কথা ভাবতে ভাবতে আমি হাসতে লাগলাম।মনে মনে ভাবলাম মানুষ যৌনক্ষুধা মেটানোর জন্য এরকম ঝগড়াও করে! যাই হোক খাওয়া দাওয়া করে আমি ঘুমিয়ে পড়ল।এর দিন পনের পরে এক রবিবার। আমার হাফ ছুটি। অর্থাৎ সকালে কাজে যেতে হবে আর বিকালে ছুটি পাবো। তা ঠিক করেছি বিকালে একটু তমলুক ঘুরে আসবো। অনেক দিন যাবো যাবো করেও যাওয়া হয় নি। একবেলায় হলদিয়া থেকে তমলুক আরামসে ঘুরে আসা যাবে।আমি সাজু গুজু হয়ে বেরিয়েছি, এমন সময় তন্দ্রা বৌদি ঝড়ের বেগে আমার ঘরে ঢুকলেন। বললেন –“স্বপ্ন, তুমি কোথায় বেরুচ্ছো?”
-“একবার তমলুক যাবো ভাবছি।অনেক দিন থেকে যাবার ইচ্ছা। আজ বিকালটা ছুটি পেয়েছি। তাই একবার ঘুরে আসি। হাজার হোক আমার বাবার জন্মস্থান। তাই দেখার খুব ইচ্ছে। বাবা চব্বিশ পরগনায় যাবার পর আর তমলুক যান নি। ফলে আমার আর তমলুক দেখা হয় নি। তাই……….”।
আমাকে থামিয়ে দিয়ে তন্দ্রা বৌদি বললে- “ও তুমি আর একদিন যাবে এখন।এখন আমার সঙ্গে চলো। তোমার দাদা আজ দু'রাত বাড়ি আসে না। কোথায় থাকে একটু খোঁজ নিয়ে আসি।দেখি কোন্ ঢেমনীর পাল্লায় পড়েছে”।
বললাম-“তুমি না বৌদি কিরকম ছেলে মানুষ। এসব যা তা কেন ভাবছো? আরে তোমার মতো মেয়ে ছেড়ে দাদা কেন ঢেমনীর পাল্লায় পড়বে? হয়তো কোন কাজে আটকে পড়েছে বলে আসতে পারে নি। তুমি টেনশান নিও না। আমি খোঁজ নিয়ে আসছি”।
এ কথা শোনার পর বৌদি অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। তারপর বিড় বিড় করে কি যেন বলে। তারপর বলে –“আচ্ছা তাই হবে । তুমি তাহলে খোঁজ নিয়ে এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি”।
আমি দাদার দোকানে গেলাম। গিয়ে দেখি দাদা দোকানে নেই। আমি বেশ অবাক হলাম। এই দুপুরে দাদা সাধারনত দোকান ছেড়ে কোথাও যান না। কারন দাদা আমাকে বরাবরই বলেছেন-“যখন আমার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা হবে তুই দুপুরে আমার কাছে চলে আসবি। ঐ সময় দোকানে ভিড় কম থাকে। তোর সঙ্গে জমিয়ে কথা বলতে পারবো। তাই মাঝে মাজে আমার কাজ হাল্কা হলে দুপুরে দাদার কাছে যাই একটু আধটু গল্প করি। অন্য সময়ে তিনি খুব ব্যস্ত থাকেন। ফলে গেলেও উনার সঙ্গে কথা বলার যো নাই।
কিন্তু আজ দাদার দোকানে গিয়ে বেশ অবাক হলাম। উনাকে দেখতে না পেয়ে হেড কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করলাম-“দাদাকে দেখছি না। তিনি কোথায়?”
-“উনি এখানে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে আজ দু'দিন ধরে আছেন। এই দুদিন সেখানে দুপুরে খাচ্ছেন। তিনি এখন আর আমাদের সঙ্গে খাচ্ছেন না”।-হেড কর্মচারী কথাগুলো বললেন। -“বাড়িটা কোথায় বলতে পারবেন?”
-“ আজ্ঞে না, বলতে পারবো না। বলতে নিষেধ আছে”।
আমি বুঝতে পারলাম বড়সড় একটা গোল বেঁধেছে দাদা আর বৌদির মধ্যে।বৌদির কাছে গিয়ে শুনতে হবে গোলটা কি। এরা কর্মচারী। এদের না ঘাঁটানোই উচিত। আমি আর বেশী কথা না বলে দোকান থেকে বাড়ি চলে এলাম।
আমি বড়িতে ঢুকতেই বৌদি আমার কাছে ছুটে এলো। বললো-“ কথা হয়েছে শয়তানটার সঙ্গে? কি বললে গো তোমায়? আমার কথা কিছু বলেছে?”
আমি বললাম-“ আমি দাদার দেখা পাইনি।তিনি নাকি কাছাকাছি একখানা বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। সেখানেই থাকছেন। দুপুরে দোকানে খান না। ঐ বাড়িতে গিয়ে খান।বাড়িটা কোথায় জিজ্ঞাসা করলে কর্মীরা জানায় যে তারা বাড়িটা চেনে না”।
রাগে ফুঁসতে লাগলো তন্দ্রাবৌদি। রাগে তার শরীর থর থর করে কাঁপতে লাগলো। শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হতে লাগলো, নাকের পাতাগুলোর উত্থান পতন হতে লাগলো। বুকের সঙ্গে দুই কুচযুগলের উত্থান পতন হতে লাগলো। যেন রক্তবীজের অত্যাচারে দানবদলনী মা দূর্গা ক্রুদ্ধ হয়ে এখুনি উগ্রচন্ডা কালীরুপ ধারন করবেন এবং রক্তবীজরুপী আমার দাদাকে বধ করার জন্য এখুনি যুদ্ধে লিপ্ত হবেন।
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আমি বৌদিকে বললাম-“ কি এমন ঘটলো তোমাদের মধ্যে যে দাদা তোমাকে ছেড়ে আলাদা হতে চাইছে! এতো বছর সংসার করার পর কেউ সংসার ভাঙে?”
তন্দ্রা বৌদি বললে-“ জানো স্বপ্ন, তোমার দাদাকে বিয়ে করে আমার সমস্ত শখ আর আশা বিসর্জন দিয়েছি। ও শুধু ওর চাহিদাটুকু বোঝে। আমি কি চাই তা সে কোন দিন জানার চেষ্টাও করে না আর জানার প্রয়োজন বোধ করে না।আমি চাইতাম নিবিড় মোলায়েম প্রেম।একটু আবেগ। বেশ খানিকটা আলিঙ্গন।তারপর বর্ষা নামবে ঝির ঝির করে।মাটি ভিজবে! মাটি নরম হবে! তারপর চাষী লাঙ্গল করবে মনের সুখে। তাতে জমিরও আনন্দ আর চাষীরও আনন্দ লাভ হবে। তা না করে তোমার দাদা শুধু শুকনো মাটিতে লাঙ্গল চালায়। এতে কার সহ্য হবে বল”।
আমি দাদা আর বৌদির সমস্যাটি জানতাম। কিন্তু সমস্যা যে এতো গভীরে তা জানতাম না। আমি অবিবাহিত যুবক। আমার ক্ষেত্রে এই সমস্যার রহস্য ভেদ করার ক্ষমতা আমার ছিল না। তাই বৌদিকে বুঝিয়ে বললাম-“ আচ্ছা আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। দাদা একা থাকেন না কাউকে সঙ্গে নিয়ে থাকে”। আমার কথায় বিশ্বাস করে বৌদি নিরস্ত হলো। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম”।
এই ঘটনার মাস ছয়েক পর দাদা বৌদির অবস্থান পরিস্কার হয়ে যায়। দাদা বাজারে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। সেখানে এক মুসলমানের বিধবা পত্নী সর্বময়ী কতৃ। দাদা সেখানেই থাকতে বেশী পছন্দ করেন। এবাড়িতে তিনি মাঝে মধ্যে আসেন। কিন্তু সেখানে শান্তি থাকে না। বৌদি প্রায়ই বলে শুনি-“ তোমার পায়ে পড়ি। তুমি ও বাড়ি আর ঔ নারীকে ছেড়ে দাও। আমি কথা দিচ্ছি, তুমি যখন যা চাইবে, যেমনভাবে চাইবে আমি তাই দেবো।তুমি শুধু আমার। তুমি আমার কাছে ফিরে এসো।তারপর শুরু হতো কান্না”। এরপর চলতো দাদার আস্ফালন। দাদা বলতেন-“ খুব তো দেমাগ ছিল তোমার! কাছে ঘেষতেই দিতে না! আমি কি না খেয়ে মরবো! তাই আমি আমার ব্যবস্থা করে নিয়েছি। থাকো তুমি সন্যাসিনী হয়ে”।
বৌদি বলতেন- “মোটেই আমি সন্যাসিনী নই। সন্যাসিনী হলে তোমার তিন সন্তানের মা হলাম কি করে! আসলে তুমি যতটা বেশী চাও, আমি ততটা বেশী পারি না। প্লিজ, তুমি ফিরে এসো। আমি আমার জীবন দিয়েও তোমার চাহিদা পুরণ করবো”।
এইরকম কথোপকথন আড়াল থেকে শুনতাম। কিন্তু বড়দের কথা শোনা উচিত নয় বলে খানিকটা শুনে আমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়তাম। মাঝে মাঝে দাদার প্রতি খুব রাগ হতো। আবার কখনো বা বৌদির উপর রাগ হতো। পাখিকে শিকল খুলে ছেড়ে দিলে সে কি আর শেকলে বাঁধা পড়তে চায়!সে যে মুক্ত আকাশের স্বাদ পেয়েছে! যতক্ষন না তার ডানা অবশ হয়ে আসছে, ততক্ষন সে বাঁসায় ফিরবে না। হায় বিধাতা! একি তোমার বিচার?
একদিন আমি রাত ন'টার দিকে বাড়ি ফিরলাম৷ এক কলিগের বাড়ি নিমন্ত্রন ছিল। খেয়ে ফিরতে একটু দেরি হলো। তো আমি আমার ঘরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে একটু রেষ্ট নেবো ভাবছি, এমন সময় তন্দ্রা বৌদি আমার ঘরে এলেন। সেকি অবস্থা তার! মাথার চুল খোলা। দেহের বস্ত্র বেসামাল। হাতে একখানা হুইস্কির বোতল। শরীরের ব্যালেন্স নেই। আমার কাছে এসে বললো-“অ্যায়, হুইস্কি খাবে। খেলে না তোমার সব জ্বালা যন্ত্রনা জুড়িয়ে যাবে। তুমি শান্তিতে ঘুমাতে পারবে! খাবে একটুখানি”। আমি বিস্ময়াভুত হলাম। একি অবস্থা হয়েছে বৌদির। আমি উনাকে এখন সামলাবো কি করে! আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগে উনি আমায় জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললেন-“প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না। আমি যে তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না! তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো। কখনো তোমার সঙ্গে ঝগড়া করবো না। আমি সব কিছুর ভাগ দিতে পারি, কিন্তু তোমার ভাগ কাউকে দিতে পারবো না”। এই বলে তিনি আমার মুখে গালে উদ্দামভাবে চুম্বন খেতে লাগলেন। আমি ভয়ে আঁতকে উঠলাম। নিজেকে খুব শক্ত করলাম। তারপর বৌদির চুম্বনের প্রতিউত্তর দিতে থাকলাম। আমি অবিবাহিত যুবক। আমার পক্ষে কিছুতেই এই আবেদনে নিশ্চুপ থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু এক আত্মশ্লাঘা আমাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিচ্ছিল। সেই কারনেই হোক, বা আমার শিক্ষিত মনের সুশিক্ষা থেকেই হোক আমার মন একসময় সিদ্ধান্ত নিলো যে বৌদিকে সম্ভোগ করা সম্পুর্ন অনৈতিক এবং অশোভন হবে। একসময় দেখলাম বৌদি নিস্তেজ হয়ে গেছেন। হুইস্কির অ্যাল্কোহল তাকে গ্রাস করেছে। সে এখন একতাল কাদামাটি ছাড়া আর কিছু নয়। এই সুযোগ এখান থেকে রক্ষা পাওয়া।
আমি বৌদিকে পালঙ্কে শুইয়ে দিয়েছি। বৌদি এখন মদের নেশায় আর ঘুমে অচেতন। আমি আমার সামান্য পোষাক আর দরকারী জিনিষপত্র ব্যাগে গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যাবার আগে বৌদির দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম। দেখি একরাশ রুপ নিয়ে পালঙ্কে শুয়ে আছে তিনি। মস্তকের কেশরাশি অবিন্যস্ত, দেহের বস্ত্র উন্মোচিত। সামান্য গোলাপী আভাযুক্ত দেহগাত্র মেদহীন শরীর আমাকে মোহিত করে তুললো। আমি আর থাকতে পারলাম না। হাজার হোক আমি তো পুরুষ। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকলাম না। অনেককষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আর এখানে নয়! এখানে থাকলে আমি অতলে তলিয়ে যাবো। সুতরাং বিদায়।
রাত দশটার সময় আমি রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। নক্ষত্রখোচিত আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি আমার জীবনের দিক নির্নয় করতে লাগলাম। ভগবানকে নমস্কার জানিয়ে তাঁকে ধন্যবাদ জানালাম আমাকে অধঃপতন থেকে বাঁচানোর জন্য। সেই প্রায়ান্ধকার রাতে আমি আমার আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম।
Copy right@
তারাপদ মাঝি
দেবনগর ।
১৫/০৮/২০১৮

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.