আহা মরি মরি কি রুপ তোমারি, যত দেখি, তা ভুলিতে না পারি।

আহা মরি মরি কি রুপ তোমারি,
যত দেখি, তা ভুলিতে না পারি।

সত্যি তোমার মনোমুগ্ধকর রুপ কখনো ভুলিবার নয়।তুমি যখন বঙ্গে পদার্পন করো তখন বঙ্গ আনন্দে পুলকিত হয়।তার অঙ্গে অঙ্গে জেগে ওঠে নবযৌবনের হিল্লোল।বঙ্গের আকাশ বাতাস মাটিতে আসে উৎসবের আবাহন।তোমার শ্যামলা তনুর বায়স কৃষ্ণ চিকুর দোলা,গলে বিজলীর মুক্তোহার পায়ে বৃষ্টি নূপূর দেখে মোহিত হয়ে যাই।
না, আর পারছি না। বঙ্গে বর্ষার রুপের বিবরন দেওয়ার একটা বৃথা চেষ্টা করেছিলাম। খানিকটা দিয়েছি, বাকিটা আর দিতে পারলাম না।কারন আমার শব্দভান্ডার ফুরিয়ে গেছে।বাংলার জীবনে বর্ষার অবদান কি তা কিছুতেই সহজে বোঝাবার নয়।কারন বঙ্গে বর্ষা হলো প্রানবায়ু।যদি কোনদিন, বঙ্গে বর্ষা না আসে তার ফল কি মারাত্বক হয়, তা ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বোঝা গেছে। তবে যেহেতু এখন প্রযুক্তি ও কৃৎকৌশল অনেক বেশী উন্নত, তাই এখন অনাবৃষ্টি এক আধবছর মানুষের উপর খুব বেশী প্রভাব ফেলতে পারবে না।
বঙ্গে বৃটিশ শাসন শুরুর পুর্বে বাংলাকে কেউই বর্ষার সময় আক্রমন করার সুযোগ নেন নি। প্রত্যেকেই বাংলা জয়ের জন্য গুপ্তচর মারফত খবর নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করেছেন। আবার কেউ কেউ বাংলার বিভিন্ন নদীর মানচিত্র বানিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে এগিয়েছেন। সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মান সিংহ বাংলার বারভূঁইয়াদের শায়েস্তা করার জন্য বাংলায় এসেছিলেন।কিন্তু বর্ষাকালকে এড়িয়ে গেছেন।বাংলার রাজা লক্ষন সেনের রাজ্য আক্রমন করেছিলেন ইকতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী। কিন্তু বর্ষাকাল বাদ দিয়ে শীতকালে করেছিলেন।গৌড়ের রাজা শশাংঙ্ককে রাজা হর্ষবর্ধন বর্ষাকালে আক্রমন করেছিলেন।সেবার হর্ষবর্ধনের যুদ্ধের স্বাদ শশাঙ্ক বেশ ভালোভাবেই মিটিয়ে দিয়েছিলেন।যারফলে শশাঙ্কের জীবদ্দশায় হর্ষবর্ধন আর বাংলামুখো হন নি।বাংলা মা তার ভৌগোলিক বৈচিত্র দিয়ে তার সন্তানকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু তার কিছু মীরজাফরের মতো অকৃতজ্ঞ সন্তান মায়ের সম্মানকে ভুলুন্ঠিত করেছেন।আর আমি তার এক অধম সন্তান তার বর্ষার মদমত্তরুপ বর্ননা করার ষ্পর্ধা দেখাচ্ছি।
বাংলা মায়ের বর্ষার রুপ তার অনেক সন্তান করে গেছেন। দেখি উনাদের দিকে একটু উঁকি দিয়ে।কে কেমনভাবে বাংলার বর্ষাকে দেখেছেন তার একখানা বিবরন দেওয়া যাক।প্রথমে কবিগুরুর দিকে তাকাই।ওরে ব্বাবা, উনি যা বর্ননা করেছেন তা অপুর্ব।উনি বলছেন-নীলনবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে,/ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।/বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর/ আউশের ক্ষেত জলে ভর ভর,/কালিমাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহিরে,/ওগো আজ তোরা যাসনে গো তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।বর্ষার এই রুপের বর্ননা এত সুন্দর আর সাবলীল আর কে কবে করেছেন, আমার অন্তত মনে পড়ে না। আবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলছেন-"গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজি গগনে গগনে।"শব্দদ্বৈত্য" ব্যবহার করে এমন রুপের বর্ননা অতুলনীয়। আবার তিনি বলছেন-" ঐ আসে ওই অতি ভৈরব হরষে, /জলসিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রভষে।/ঘনগৌরবে নবযৌবন বরষা,/শ্যামগম্ভীর সরষা।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আরও অনেকে বর্ষার রুপ তুলে ধরেছেন।তাঁদের সেই অক্ষয় কীর্তি আমার থ্যালামাসে আর জমে নেই।অনেক দিন আগে সেগুলিকে আমার ব্রেনের হার্ডডিস্কে সঞ্চয় করা ছিল, কিন্তু পুরানে মডেলের হার্ডডিস্ক। জায়গা কম।মাত্র দশ কে বি 'র হার্ডডিস্ক। ফলে নতুন ডাটার জায়গা করে দিতে পুরানো ডাটা ডিলিট করেছি। ফলে কবি আর তাদের কবিতাগুলো হারিয়ে গেছে।
বেশ কিছু গীতিকার বর্ষাকে নিয়ে গান লিখেছেন। যেমন-"টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে, কোন সে আকাশ থেকে, ও আমার কমলীনি শিহরিয়া যায়"।শ্রদ্ধেয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এই গান শুনতে ভালো লাগে না এমন বাঙালী পাওয়া মুশকিল।যৌবনে এই গান শুনে এক কাল্পনিক নারীকে কল্পনা করে কত স্বপ্ন যে দেখতাম, তা আজ ভাবলে অবাক লাগে।হয়তো কোন যুবকের কাছে তার প্রেমিকার অভিসারে আসার কথা আছে। কিন্তু এত বর্ষা হচ্ছে যে তার প্রেমিকা আসতে পারবে কিনা সন্দেহ হচ্ছে। তাই বর্ষার কাছে তার কাতর অনুরোধ-"ওগো বর্ষা তুমি ঝোরো না গো অঝোর ঝরে। কাছে সে আসবে তবে কেমন করে।এলে না হয় ঝরো তখন অঝোর ঝোরে"।শ্রদ্ধেয় মান্না দে'র গান শুনে যে কোন যুবকের হৃদয় উদ্বেলিত হবেই হবে।
বিভিন্ন লোকগানে বর্ষার রুপ ধরা পড়েছে।কিন্তু হার্ডডিস্কে তার কোন কপি নেই বলে সেগুলির উদ্ধৃতি দিতে অপারগ হলাম।যাইহোক যে ছেলে বর্ষায় কাদায় মাখামাখি হননি, কিংবা বর্ষার জলে একেবারে ভেজেন নি, বর্ষার মধ্যে ফুটবল খেলেন নি সে কোনো মতেই বাংলার সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন নি।প্রবন্ধ শেষ করার সময় আবারও বলতে চাই-"আহা মরি মরি কি রুপ তোমারি,/ যত দেখি তা ভুলিতে না পারি"।
তারাপদ মাঝি
সরবেড়িয়া
জয়নগর।
১১/০৬/২০১৮

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.