গাহি সাম্যের গান

গাহি সাম্যের গান


গৌরচন্দ্রিকা
সমাজের সব মানুষ সমান হয় না।প্রত্যেক মানুষের চরিত্র যেমন আলাদা,তেমনি প্রতি পরিবারের সংস্কৃতি এবং তাদের ব্যবহারও আলাদা। অথচ আমরা সবাই একই সমাজে বাস করি।যাদের আচার ব্যবহার আমাদের ভালো লাগে না তাদের সঙ্গে আমারা মিশতে চাই না।কখনো সরাসরি তাদের এড়িয়ে যাই আবার কখনো তাদের কায়দা করে এড়িয়ে যেতে হয়।কখনো একটা সীমাবদ্ধতা আমাদেরকে বাধ্য করে তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে।কি ব্যাপার মশাই, বুঝতে পারছেন না নিশ্চয়ই।ঠিক আছে আমি আপ্রান চেষ্টা করছি আপনাদের ব্যাপারটা বোঝাতে।
ধরুন,কোনো এক গ্রামের বা কোনো এক শহরের ধনী পরিবারের পাশে কোন দরিদ্র পরিবার বাসকরেন।দু'টি পরিবারের সদস্যদের চারিত্রিক গুনাবলী প্রায় একই রকমের।অথচ সুসভ্যতার বিচারে দুই পরিবারের সঙ্গে কোনোভাবেই সংশ্রব রাখা উচিত নয়।তথাপি মানুষ অসভ্য ধনী পরিবারের সঙ্গে সাহচর্য্য রাখে,আর অসভ্য গরীব পরিবারটি থাকে অচ্ছুৎ।এটা কি সমাজের একপেশে বিচার নয়!কি এখনো বুঝতে পারছেন না! তাহলে কাহিনী দিয়ে বোঝাই।আপনারা মশাই বড্ড চালাক ব্যক্তি।যত ভাবি সত্য কথা বলবো না।আপনারা আমার পেট থেকে সত্য কথা না বের করে ছাড়বেন না।ঠিক আছে বিড়ালের গলায় আমিই ঘণ্টা বাঁধি। তাতে বিড়াল যদি আমায় খায় খাক।তবে একটা অনুরোধ মশাই,বিড়াল যদি আমায় খেয়ে নেয়,তাহলে অকালে আমার প্রান যাবে।তখন এই হতভাগার জন্য দু'ফোটা চোখের জল ফেলবেন দয়া করে!কারণ আমার হয়ে চোখের জল ফেলবার কেউ নেই কিনা।
প্রথম অধ্যায়
আমার দেখা অনেক পরিবারের মধ্যে সোনার গাঁ শহরের কথা ধরা যাক। এটি বঙ্গের অতি প্রাচীন জনপদ এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাচীন শহর।বলতে গেলে এটি কলকাতার প্রায় সমসাময়িক শহর। এই শহরের একটি পরিবার হলো বিজয় মন্ডলের পরিবার। বিজয় মন্ডলরা অত্যন্ত দরিদ্র। বলতে গেলে দিন আনি দিন খাই ধরনের। এই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য হলো বিজয় মন্ডলের পত্নী কমলা মন্ডল। পরিবারের সদস্য সংখ্যা আটজন। বিজয়,কমলা,দুই ছেলে অরুন ও বরুন আর তাদের দুই বউ কৃষ্ণা ও গান্ধারী,এবং দুই মেয়ে লক্ষ্মী ও সরস্বতী। এই পরিবারে সরস্বতী নামে মেয়ে আছে ঠিকই কিন্তু সরস্বতীর আরাধনা নেই। সবাই মুখ্যু।
বিজয়বাবু সকালে ঘুম থেকে উঠেই সরোজের চায়ের দোকানে চলে যায়। ওখানে সরোজের ফাইফরমাস খাটে আর সকাল ছ'টা থেকে রাত ন'টা পর্যন্ত বার আটেক চা, গোটা তিরিশ বিস্কুট আর দুপুরে একপিস মাছের ঝোলসহ ভাত। মাঝে সরোজের আড়ালে যে চা বিস্কুট খায় সেগুলি ধর্তব্যের বাইরে। এতে তার নিজের পেটটা বেশ ভালোভাবেই চালিয়ে নেয়। অরুন আর বরুন একেবারে লোফার। দু'জনে মেয়ে পটাতে ওস্তাদ। নিজেরা রোজগার করতে পারে না। অথচ দু'জনে দু' দুটো মেয়ে বাড়িতে এনে ঢুকিয়েছে। নিজেরা যে রোজগার করতে পারে না, এ বিষয়ে তাদের কোনো ভ্রক্ষেপ নেই। তারা বলে – মা, যতদিন আছে আমাদের খাওয়ার কথা ভাবতে হবে না। তারপর পরস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। মানুষ যে কতটা অকর্মন্য হতে পারে তা অরুন আর বরুনকে দেখলে বোঝা যায়।
এবার আসা যাক তাদের দুই বউয়ের কথা। কৃষ্ণা হলো বড় বউ। সকালে ঘুম থেকে উঠে শাশুড়ির তৈরী করা চা খাওয়ার পর বাড়ির পাশের তেলেভাজা দোকানে আড্ডা মারতে যাওয়া। ওখানে না গেলে কৃষ্ণার পেটের ভাতই হজম হবে না। কারন ওই দোকানে আড্ডা দিতে এসেই তো অরুনের প্রেমে পড়া এবং বিয়ে করা। তাই ওই তেলেভাজা দোকানটি কৃষ্ণার কাছে স্বর্গ সমান। ওখানে দোকানের মালিক রঞ্জনের ফাইফরমাস খাটে,তার সঙ্গে হাসিঠাট্টা করে,একটু গল্পগুজব করে মন ভরে তেলেভাজা খায় এবং অরুনের জন্য আনে। ফলে দুপুরের খাওয়ার আগে পর্যন্ত অরুন আর কৃষ্ণার বেশ চলে যায়।।
এবার একটু অরুন আর কৃষার কথা বলা যাক। কৃষ্ণা বেশ সুন্দরী। চাপা শ্যামলা রঙ।দীর্ঘদেহী,স্বাস্থ্যবতী এবং লজ্জাহীনা। কোনো অশালীন কথা তার মুখে আটকায় না। এমনিতে কথায় কথায় শালা শুয়ারের বাচ্চা, খানকির ছেলে, মাগীখোর, মদপখোর, আরও কিসব গালাগালের ভাষা তার আবিস্কৃত তা আমার দ্বারা মনে রাখা সম্ভব নয়। মেয়েটা যা সুন্দরী তাতে যে কোন ধনী বাড়ির পুরুষমানুষ অনায়াসে এই গরীবের মেয়েটাকে বিয়ে করতে পারতো। কিন্তু করে নি কারণ আচার ব্যবহার আর চরিত্র নাকি খারাপ।
অরুন তার বাপের মতো। কোনো কাজে তার মন থাকে না। সারাদিন আড্ডা দিয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারলেই তার শান্তি। সংসার কি করে চলবে, টাকা কোথা থেকে আসবে এসবে তার কোনো মাথা ব্যথা নাই। অরুনের বাবা যেমন গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য তার বউয়ের উপর নির্ভরশীল, অরুনও তার বউয়ের উপর নির্ভরশীল।বউ দেহ বিক্রি করে যদি সেই গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করে তাতেও তার কোনো আপত্তি নাই। ফলে এক্ষেত্রে অরুনের মায়ের দশার মতো কৃষ্ণার অবস্থা হয়েছে। কিন্তু তাতে অরুনের কিচ্ছু আসে যায় না। অরুন তার বউকে স্বাধীন সত্ত্বা দিয়েছে। সে যা খুসি করতে পারে শুধু দুটি শর্ত মেনে। এক হলো তার পেটের খিদে মেটানো এবং দুই হলো যখন যৌনক্ষুধা আসবে তা মিটিয়ে দেওয়া। বাকি সময় তুমি যা খুসি করতে পারো।
বরুন আর গান্ধারীর অবস্থা আরো খারাপ। কিন্তু পরিবারের মধ্যে থেকেও তারা আলাদা। তারা বাড়ির সকলের সাথে খায়। খরচাপাতি নামমাত্র দেয়। বলতে গেলে সবাই মায়ের রোজগারে খায়। কিন্তু বরুনের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলেও চারিত্রিক এবং সামাজিক অবস্থা একেবারেই খারাপ। তারা সবসময় যে ভাষা মুখে প্রয়োগ করে তা কোন মতেই আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হবে না। অরুনের বউয়ের চুল্লু মদের দোকান আছে। সবাই তার দোকানে মদ খায়। বরুন সেখানে বউকে সাহায্য করে। কেউ কেউ মদ্য পানের পরে যৌন উত্তেজিত হলে, গান্ধারী তাদের সে যৌন উত্তেজনা প্রশমিত করেন। অবশ্য এক্ষেত্রে মদ্যপায়ীর নিকট মোটা অঙ্কের টাকা থাকতে হবে। কারন গান্ধারী কখনো খালি হাতে দেহ বিক্রি করে না।একমাত্র বরুনই খালি হাতে শরীর পাওয়ার হকদার। এই রকম জাতীয় মহিলা সমাজের কি উপকারে আসবে। দেহ ব্যবসা,মদ ব্যবসা,আর মুখে অজস্র খিস্তি করা মহিলা সমাজের কি উপকারে লাগে প্রিয় পাঠকগনের যদি জানা থাকে তাহলে জানাবেন প্লিজ।
এবার বলি লক্ষ্মী আর সরস্বতীর কথা। হ্যা ঠিক আন্দাজ করেছেন। এই রকম পরিবারের মেয়েরা নিশ্চয় ভালো হতে পারে না। হয়েছেও তাই। তারা পাড়ার বিখ্যাত দেহ ব্যবসায়ী। দিনের বেলা কোন পুরুষ মানুষ তাদের সঙ্গে কথা বলে না বা বলতে সাহস পান না। কিন্তু রাতের বেলা কত সচ্চরিত্র মানুষের মুখোস খুলে দিয়েছে দুই বোন তার ইয়ত্তা নেই। সমাজের যে কোন কাজে তারা ব্রাত্য। তাদেরকে মানুষ সব সময় দূরে সরিয়ে রাখে। কারণ সমাজে এদেরকে মিশতে দিলে সমাজ কলুষিত হবে এই ভয়ে। উঁচু অংশের জল সবসময় নিচের দিকে গড়িয়ে যায় জানি। কিন্তু নিচু অংশের জল উপরের দিকে গড়িয়ে গিয়ে উঁচু অংশের জলকে যে কলুষিত করতে পারে এটা আমার বোধের বাইরে।
এবার বলি অরুন বরুনের মা অর্থাৎ বিজয়বাবুর স্ত্রীর কথা। ইনি প্রতিদিন সকাল উঠে বাড়ির সামান্য কাজ কর্ম সারার পর চান করে ছ'টার ট্রেনে কলকাতা যান। সেখানে পাঁচ বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন এতে তার হাজার পাঁচেক টাকা আসে। ঠিক চারটের দিকে বাড়ি ফিরে এসে বাড়ির কাছে রাস্তার মোড়ে সবজী দোকান করেন। এই সময় তার দুই মেয়ে তাকে সাহায্য করে। এই কাজের ফাঁকে দুই মেয়ের জন্য রাতের সঙ্গী জুটিয়ে দেন। কোন খদ্দের তাদেরকে কোনো হোটেলে নিয়ে যায়, আবার কেউ তাদেরকে নিজেদের দ্বিতীয় বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ফুর্তি করে। কমলাদেবীর একটা উদ্দেশ্য আছে। তাদের বাড়িটা ঝুপড়ি ধরনের। ভালো বাড়ি নাই। ভালো বাড়ি করতে গেলে ভালো টাকা দরকার। তাই নিজের হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে আর দুই মেয়ের শরীর খাটিয়ে টাকা সঞ্চয় করছে। ভালো বাড়ি করতে গেলে অন্তত লাখ দশেক টাকা লাগবে। প্রায় লাখ নয়েক হয়ে গেছে। এই বর্ষা গেলে বাড়ি শুরু করবে কমলাদেবী।
উচ্চ বংশের মেয়ে কমলা। কি কুক্ষণে যে বিজয়কে ভালোবাসতে গেলো তা সে আজ ভেবে পায় না। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সে শ্বশুর বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু এসে শ্বশুরবাড়ির অবস্থা দেখে তার স্বপ্নভঙ্গ হয়। কিন্তু কমলা অত্যন্ত জেদী মেয়ে। বাপের বাড়িতে ফিরে গেলে তার অপমান হবে। পাড়ার লোকেরা দু পাঁচ কথা বলবে। সেটা সহ্য করা সম্ভব নয়। তাই নিজেকে শক্ত করে। মুষ্টিবদ্ধ করে প্রতিজ্ঞা করে তা যে করেই হোক বাঁচতে হবে।
অলস স্বামীর হাত থেকে বাঁচার জন্য সে কলকাতায় কাজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। বাবুরা তার কাজের থেকে তার শরীরের দিকে ঝোঁক বেশী। প্রথম দু- চারদিন কাজে যাওয়ার পর কমলা আর কাজে না যাওয়াতে বিজয়ের মটকা গরম হয়ে যায়। সে কাজে না যাওয়ার কারন জিজ্ঞাসা করে। তখন কমলা সব খুলে বলে। শুনে বিজয় খিল খিলিয়ে হেসে উঠে। বলে যে শরীরের পবিত্রতায় তার বিশ্বাস নেই। তার প্রয়োজনের সময় একটা শরীর হলেই চলবে। সে পবিত্রই হোক বা অপবিত্র। তার কাছে পবিত্র ও অপবিত্র সমান।
এরপর থেকে কমলা আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে নি। কারণ কখনো কখনো তার স্বামী খদ্দের ধরে আনতো। ফলে কমলার আর সতী হয়ে ওঠা হয় নি। সতী যখন হলাম না, তখন বড় অসতী হতে বাধা কোথায়। এর পর থেকে পরিবারটি পঙ্কিল সমুদ্রে হারিয়ে গেলো। সমাজের কাছে সে ঘৃনিত পরিবাররুপে পরিগনিত হলো। পশুরা বেশ ভালো। কোনো পশু যদি বিপদে পড়ে বা দলছাড়া হয়, তাকে দলে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে ব্যতিক্রম দেখা যায়। কোন মানুষ বিপদে পড়লে অপর মানুষ তাকে উদ্ধারের পরিবর্তে সে যাতে আরো বিপদে পড়ে, সেই চেষ্টা করে। এবং যতক্ষন না সে বিপদে পড়ছে মানুষের দুঃখের সীমা থাকে না।
দ্বিতীয় অধ্যায়
এবার সোনার গাঁও এর হালদার পরিবারের কথা বলি। এই পরিবারের কর্তার নাম হলো পরিতোষ হালদার। এরা উচ্চ বংশোভূত। পরিতোষবাবুর তিন ছেলে। তারা হলেন শশধর, গদাধর এবং হলধর। যেমনি বাপ তেমনি তিন ছেলে। পরিতোষবাবু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার যা দাপট তাতে সোনার গাঁও এর বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। পরিতোষবাবুর রাজনৈতিক অবস্থান যেমন ভালো , তেমনি এমন সব মানুষদের নিয়ে পারিষদ গঠন করেছেন, যাদের পেশীশক্তি, আগ্নেয়াস্ত্র শক্তি অত্যন্ত জোরদার। ফলে মানুষ ভয়ে কিছু বলতে পারেন না।
এবার তাদের ভয় দেখানোর কথাগুলো বলা যাক। সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় পরিতোষবাবুর নিয়ন্ত্রনে। তাই তিনি তিন ছেলেকে তিনটি কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। বড়ছেলে শশধর দেখেন অর্থনৈতিক দিকটি। তাকে সহযোগীতা করে সবচেয়ে বড় মস্তানের দল। তোলা আদায় করা হলো তার কাজ। তোলা আদায় করে পার্টি ফান্ডে পচিশ শতাংশ দিয়ে বাকিটা নিজেরা ভাগকরে নেওয়া। বলা বাহুল্য পার্টিকে টাকা দেওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকবে তার নব্বই শতাংশ নেওয়ার পর বাকী যা থাকে তা সহযোগীদের ভাগ করে দেন।কি জাতীয় তোলা আদায় করেন শশধরবাবু? প্রমোটারের কাছ থেকে তোলা আদায়, কাউকে কেনা জমি দখলে আনিয়ে দেওয়ার জন্য তোলা আদায়, কোনো মেয়েকে পটিয়ে দেওয়ার জন্য তোলা আদায়, সিন্ডিকেট দখলের জন্য তোলা আদায়, অনৈতিক কাজ করে যাতে জেলে যেতে না হয় তার ব্যবস্থা করে দিয়ে তোলা আদায় ইত্যাদি। পুলিশ, বি ডি ও, এস ডি ও,ডি এম, সার্কেল ইন্সপেকটার সব তার হাতের মুঠোয়। সবাই শশধরের কথায় ওঠে আর বসে।
মেজ ছেলে গদাধর দায়িত্ব নিয়েছেন পার্টির সাংগঠনিক কাজের। তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করেন। পরিতোষবাবু এখন সোনার গাঁও এর জেলা সভাপতি। পরিতোষবাবুর ইচ্ছা আসছে নির্বাচনে গদাধরকে এম এল এ হিসাবে নির্বাচিত করতে পারলে সোনার গাঁও কে পুরোপুরি নিজের দখলে নিতে পারবেন। তখন নিজে হবেন সোনার গাঁও এর মুকুটহীন রাজা। শুধু একটাই চিন্তা পরিতোষবাবুর । তা হলো গদাধরের অত্যধিক নারী লোলুপতা। রাজনৈতিক বুদ্ধি তার অত্যন্ত বেশী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি পরিতোষবাবুকে ছাপিয়ে যান। কিন্তু মাঝে মাঝে গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলেন অত্যন্ত নারী প্রীতির জন্য। কোন সুন্দরী মেয়ে বা মহিলা তার পছন্দ হলেই যেন তেন প্রকারে তাকে বিছানায় শোয়াবেন। এই কাজের জন্য তিনি একবার ফেঁসে গিয়েছিলেন। তাই পরিতোষবাবু তার সঙ্গে একজনকে রেখেছেন পাহারাদার হিসাবে। খারাপ কিছু দেখলেই তিনি তা পরিতোষবাবুকে জানাবেন।তাহলে বুঝতে পারছেন কি ধরনের মানুষ গদাধরবাবু।
এবার আসা যাক,হলধরের কথায়। হলধর একেবারে অসহিষ্ণু ছেলে। এলাকায় সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করাই তার কাজ। ভয়ে কেউ যেন হালদার পরিবারের দিকে আঙুল তুলতে না পারে। ভোটের সময় বুথে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, বুথ জ্যাম করা, ছাপ্পা ভোট দেওয়া আবার কখনো কখনো ভোট কর্মীদের হেনস্থা করা প্রভৃতি কাজে তার জুড়ি মেলা ভার। এইসব গুনাবলীর জন্য পরিতোষবাবুর পরিবারকে সবাই ভয় করে, সবাই ভয়ে সম্মান করে। তাদের সঙ্গে মেলামেশা করে সবাই প্রমান করতে চায় যে তারা হালদার পরিবারকে কতই না ভালোবাসে। পঞ্চায়েত আর বি ডি ও অফিসের কর্মচারীরা তো চুনোপুঁটি। থানার বড়বাবু পরিতোষবাবু বা তার পরিবারের কোন সদস্যকে দেখলে রাস্তায় স্যালুট পর্যন্ত করে। হালদার পরিবারের চাকরা পর্যন্ত মানুষকে দূরছাই করে কথা বলার সাহস পায়।
উপসংহার
প্রথম অধ্যায়ে বিজয়ের পরিবারের কথা বলেছি। সেই পরিবারের কোন আদর্শ নেই, নেই কোন সামাজিক সৌজন্যবোধ। তারা জীবন ধারনের পথটাকেই মুখ্য হিসাবে বেছেছে। সমাজের অন্যান্য দায়িত্ববান মানুষের মতো তারা কোন দায়িত্ব মাথায় তুলে নেয় নি। সে ক্ষেত্রে সে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ। তাকে টেনে তোলা সমাজের অন্যতম কর্তব্য। কিন্তু সমাজ ঘৃনায় তার থেকে মুখ ফিরিয়েছে বলে, সে তার নিজের মতো করে বাঁচার চেষ্টা করছে। সে শুধু যৌনতার বিষ সমাজে ছড়াচ্ছে। সমাজে যৌনতার চাহিদা আছে বলেই না সে তা ছড়াতে সাহস পাচ্ছে। এই যৌনতা আগেও ছিল, এখন আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে। সুতরাং বিজয়ের পরিবারের দোষ তো আমি দেখতে পাই না। অথচ সমাজের মানুষ কলঙ্কের ভয়ে তাদের সাথে মিশতে চায় না। এটা কি যুক্তি সঙ্গত?
এবার দ্বিতীয় অধ্যায়ের পরিতোষবাবুর কথাই ধরি। যে ব্যক্তি নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের মাথায় চড়ে বসে, সকল মানুষের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রন করে, সমাজে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তাকে মানুষ অনায়াসে সহ্য করে!তার বিরুদ্ধে কোন রকম প্রতিবাদের ঝড় ওঠে না!তাদের হাতে নারী, গরীব, শিক্ষিত মানুষ লাঞ্চিত হয়। তবু মানুষ তাদের সঙ্গে মেলেমেশা করতে লালায়িত।
এত কথা বলে বোধহয় আমি বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধতে পারলাম। এবার আপনি এবং আপনার সমাজ যদি বাঁচেন বা বাঁচাতে পারেন তো ভালো, না হলে বিড়ালকে স্যালুট করুন। যেতে যেতে রবি ঠাকুরের সেই কবিতার কিছু অংশ বলি-“যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে ফেলিবে যে নীচে,/পশ্চাতে রেখেছো যারে সে তোমারে টানিছে পশ্চাতে”।অবশ্য কে পশ্চাতে পড়ে আছে এখনকার সামাজিক বিচারে বিচার করার ভার আপনার। আর পশ্চাতে রাখবেন কি রাখবেন না সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়ও আপনার।
তারাপদ মাঝি
দেবনগর-০৯/০৭/২০১৮

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.