বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি


#গল্প
#”বাংলার_মুখ_আমি_দেখিয়াছি”।
আজ রবিবার। সময়টা এখন জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিক। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি, রৌদ্রকরোজ্জ্বল আকাশ যেন নীল প্রশান্ত মহাসাগর। তাতে শ্বেতশুভ্র মেঘের পাহাড় উড়ে উড়ে চলেছে। এক ছুট্টে বাইরে এসে প্রকৃতির এই অপরূপ রূপকে দেখতে থাকি। আমাকে দেখেই প্রকৃতির প্রানীরা উজ্জীবিত হলো। দেখলাম খুব খুঁদে খুঁদে পাখীরা জবা ফুলের বৃন্তে বৃন্তে তার সরু ছুঁচালো চঞ্চু প্রবেশ করিয়ে মধু খেতে খেতে ফুলে ফুলে উড়ে চলেছে। কাজল কালো ফিঙে পাখীগুলি কিচিমিচির করে উড়ছে আর বৈদ্যুতিক তারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। উঠানে সাতভায়া আর শালিক পাখীর ঝগড়া রবি ঠাকুরের একটি বিশেষ কবিতাকে মনে করিয়ে দেয়।
আমি আর দেরি করলাম না। তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে পশ্চিমের মুড়িগঙ্গা নদীতে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। উদ্দেশ্য সকালের নদীর স্নিগ্ধতা, চঞ্চলতা আর প্রবাহমানতার সৌন্দর্য্য অনুভব করতে। সাইকেলে প্রায় পনের মিনিটে নদীপাড়ে পৌছে গেলাম। একটি সবুজ গালিচা বেছে তাতে বসে পড়লাম।
প্রথমেই চোখে এলো দুরে একটি সবুজ দ্বীপ বা চর। সেটি এতটাই দুরে যে দ্বীপটা বোঝা যাচ্ছে মোটা সবুজ রেখার মতো। এখান থেকে সাগরের কপিল মুনির মন্দির বেশী দূরে নয়। হয়তো নবকুমারের নাও এখানেই ভিড়েছিল। হয়তো এখানেই বড় হয়েছিল কপাল কুন্ডলা। এই দ্বীপই বলতে পারে সে সব কাহিনী।নদীতে জোয়ারের উন্মাদনা এসেছে। তার জল তাই ছলাৎ ছলাৎ করে পাড়ে এসে পড়ছে। বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন নৌকা বিকট শব্দ সৃষ্টি করে তার লক্ষ্যে ছুটে চলেছে। বেশ কয়েকটি কাদা খোঁচা পাখি নাচতে নাচতে আমার কাছে অদুরে দাঁড়িয়ে ভাবছে আমাকে বিশ্বাস করা যায় কিনা। তারপর একজন সাহস করে আমার পাশ দিয়ে চলে যেতেই,বাকিরাও আস্তে আস্তে আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। বেশ কয়েকটি সাদা পাখি হাঁসের মতো জলে ভাসছে।
আমি যখন প্রকৃতির প্রেমে আনমনা, তখন কয়েকটি নারী পুরুষ মাছ ধরতে নদীতে এসে নামলো। তারা সবাই আমার পাশ দিয়েই যাবার সময় বধুরা লজ্জা পেয়ে মাথায় ঘোমটা দিলে। তাদের দিকে আমারও তাকাতে লজ্জা হচ্ছিল। ওরা গরীব। বাড়িতে বেশী পোষাক আষাক নেই। মাছ ধরার জন্য তাদের পরিত্যক্ত পোষাক যেমন একটি হাঁটুর উপর ছায়া আর মলিন একখান বস্ত্র শরীরে জড়ানো। আমাকে দেখেই লজ্জায় সেই মলিন বস্ত্র টেনে টুনে লজ্জা নিবারনের চেষ্টা করছে। আমি এমন ভান করে বসে রইলাম, যেন আমি তাদের লক্ষ্য করিনি যাতে তারা অপ্রস্তুত না হয়। এমন সময় পাশে এসে একজন বললেন- মাষ্টার না?
-তাকিয়ে দেখি বরেন মামা।
-হ্যাঁ, মামা আমি।
-তা এখানে বসে কেন বাবা?
-এই নদী দেখতে এসেছি মামা।
-নদী দেখতে এসেছো? তা তো দেখবেই বাবা। তোমার চাকুরীর পয়সা। মাস ফুরালেই বেতন। পেটের চিন্তা নাই। কাঁচা পয়সা ফেললেই সব মিলবে। আর আমাদের দেখো। মাছ কিনে খাবার মুরোদ নেই। তাই খেপলা জাল নিয়ে রত্নাকরে বেরিয়েছি মাছ ধরতে।
আমার প্রকৃতির রূপ দেখা মাথায় উঠলো। ধীরে ধীরে উঠে সাইকেলটি নিয়ে ফেরার পথ ধরলাম।
কপিরাইট@তারাপদ মাঝি
২১শে জুলাই,২০২১
দেবনগর।

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.