#মাঝ_ রাতের_স্বপ্ন


#গল্প
#মাঝ_ রাতের_স্বপ্ন
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। এখন রাত বারোটা। এত রাতে কে ফোন করতে পারে। নম্বরটা অজানা এবং একটা বিদ্-ঘুটে নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করবে কিনা চিন্তা করছিল কৌশিক। অনেক ভেবে শেষটা ফোন রিসিভ করলো।
-হ্যালো…
ওরে বাবা, হ্যালো বলার সঙ্গে সঙ্গে অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো সুরেলা কন্ঠের তীব্র ঝাঁকুনি। কৌশিককে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অপর প্রান্তের সুরেলা কন্ঠ বলেই চলেছে- তুমি কি ভাবসো আমাকে? তুমি যেমন খুশি আমায় নিয়া খেলবা? আমি কি খোলাম কুসি? আমার কোন দাম নেই ভাবসো? তুমিও বড়লোকের পোলা আর আমিও বড় লোকের মাইয়া। তোমার সাইতে আমার আব্বার অনেক টাকা। আমার আব্বা সাইলে তোমার আব্বারে কিনে নিতে পারে। এবার মনে হয় উনি থামলেন।
-এবার কৌশিক বললো- হ্যালো, আপনি কাকে ফোন করেছেন?
-তুমি নূর আলি নও?
-আজ্ঞে না, আমি নূর আলি নই। আমি কৌশিক বলছি।
-কৌশিক বলস্যান? কোথা থাইক্যা?
-ডায়মন্ডহারবার থেকে?
-ডায়মন্ডহারবার? এই রকম জায়গা তো বাংলাদ্যাশে শুনি নাই।
-আজ্ঞে না। আমি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বলছি।
-অ, তা হবে হয়তো। যাক কিসু মনে করব্যান না। আমি আপনাকে নূর আলি ভাইব্যা কত কিসু বইল্যা দিলুম।আমারে মাপ কইর্যা দিবেন।
-সে না হয় দেব। কিন্তু আপনি কে? কোথা থেকে বলছেন?
-জি আমি তাসমিনা খাতুন। বরিসালের মাইয়া।
- ও আচ্ছা আপনি বরিশালের মানুষ। তা বেশ ভুল করে হলেও এত রাতে একজন বিদেশীনির সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালো লাগছে। এখন ছাড়ি। অনেক রাত হয়েছে।
-ও প্রান্ত থেকে অনুরোধ আসে- কাইটব্যান না প্লিজ। আপনার যদি অসুবিধা না থাইকে, তাহলে আরও কিসুক্ষণ কথা কইতে পারি কি?
- কৌশিক মনে মনে বিরক্ত হয়। কি জ্বালা। মাঝরাতে মহা বিপদে পড়া গেল তো। অথচ সৌজন্য বশত কিছু বলাও যাচ্ছে না। ও প্রান্ত থেকে কন্ঠস্বর ভেসে আসে- কি ভাবসেন, আমাকে আপনার বিরক্ত লাইগসে কি?
- না, তা নয়। এমনিতে রাত হয়েছে। এত রাতে আপনার সঙ্গে কথা বলছি, আপনার বাড়ির লোক জানতে পারলে কিছু তো মনে করতে পারে।
-হি হি হি…….। ও প্রান্ত থেকে হাঁসির ফোয়ারা এলো। যেন একঝাঁক কোকিলের কলরব।
-হাসছেন যে?
-হাইসবো না! আমাগো শাসন করার মতো বাড়িতে কেউ নাই। বাড়িতে আমি একা।
-একা কেন? মা বাবা ভাই বোন কেউ নেই আপনার?
-থাইকবে না কেন? আমার আম্ম আব্বা আসেন। বড় ভাইয়া আসে। যে যার কামে ব্যস্ত। আমার দিকে নজর দেওয়ার তাদের সময় নাই। এবার বিদেশীনি ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। কৌশিক ফোনে সেই শব্দ ভালো মতো বুঝতে পারছে।
-কি হলো কাঁদছেন কেন? আমায় বলবেন কিছু?
-কি বলবো বলুন? আমি বড্ড একা। একজনকে ভালো বেসেসিলাম। কিন্তু সে আমায় ভালোবাসে নি। সে ভালোবেসেসে আমার আব্বার টাকাকে। রাগে ঘৃনায় আমি তার সঙ্গ সেড়ে দিয়েসি। সে আমায় জ্বালাস্যিল। তাকে গালি দিতে গিয়েই আপনার লোগে আলাপ।
-আচ্ছা আপনি একা কেন? আপনার বাবা মা ভাই কি করেন? কেন তারা আপনাকে সময় দেন না?
- আমাদের দুটো শিপ আসে। দুটো শিপই ভারতে ব্যবসা করে। আব্বা আর ভাইয়া ব্যবসার লোগে কখনো ভারতে, কখনো ঢাকা আবার কখনো চাটগাঁয়ে কখনো বা কক্সবাজারে থাকেন। সব শহরেই আমাগো বাড়ী আসে। আর মা বাংলাদ্যাশের মন্ত্রী পরিষদের সেক্রেটারী। ফলে উনি সবসময় ঢাকায় থাকেন। আমিও মায়ের কাসে সিলাম। কিন্তু মায়ের কাসে সময় পাই না। বাধ্য হয়ে বরিসালে ঠাকুরদার কাসে চলে এসেসি।
-বাব্বা, আপনি তো রাজকন্যা!! আপনার যখন এই অবস্থা তাহলে বিয়ে করুন। আপনার নিঃসঙ্গতা কেটে যাবে। কোন সমস্যা থাকবে না।
-এই খানেই তো সমস্যা। আমাকে বিয়ে করতে চায় বাংলাদেশের এক মন্ত্রীর পোলা। সারাদিন দ্যাশে মস্তানী কইর্যা ঘুরিয়া বেড়ায়। শিক্ষা দীক্ষা নাই। ঐ পোলারে কে বিয়ে করবা শুনি। মন্ত্রী বলে আব্বা আম্মি কিসু কইতে পারে না। আমাগো জীবন বড় বিপদের মধ্যে জানেন।
-হুম্, আপনার খুব সমস্যা দেখছি। ভেবে দেখুন যদি কিছু সমাধান বের করতে পারেন।
- দূর, ওই সব চিন্তা কইর্যা সময় নষ্ট কইর্যা কি লাভ? আসুন অন্য কিসু আলোসনা করি।
- আর কি আলোচনা আছে? বলুন আমি শুনবো।
- বাঃ, আপনি আমাগো কথা শুনলেন। এবার আপনার কথা বলুন।
- আমার আর কি কথা। আমি ছা পোষা মানুষ। আমার বাবা মা, এক ভাই আর দুই বোন আছে। বোনেদের বিয়ে হয়েছে। ভাই এখন কলেজে পড়ছে। আর আমি সরকারী বিভাগে পূর্ত দপ্তরে চাকরী করি। বাবা আগে সরকারী চাকরী করতেন। উনি অনেক টাকা পয়সা আমাদের জন্য করেছেন।এইভাবে আমাদের মোটামুটি চলে যায়।
-আপনি বিয়ে করেন নি?
- না।
-কেন?
- কৌশিক কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। তারপর বলে - যোগ্য সাথি পাই নি।
-কি রকম সাথি আপনার পছন্দ?
-সে সব কি ফোনে বলা যায়?
-ও যায় না বুঝি? আচ্ছা থাক। বলতে হবে না। আমার একডা অনুরোধ রাখবা?
-বলুন?
-আপনার বয়স কত?
- কৌশিক হাসতে হাসতে বলে - এবার একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না কি?
-আসসা ঠিক আসে, তাহলে এই অনুরোধডা রাখেন?
-আবার কি অনুরোধ? ক’টা বেজেছে দেখেছেন? রাত দুটো বেজেছে। এবার ঘুমিয়ে পড়ুন। কাল যা বলার বলবেন।
- না না ফোন কাইটব্যান না। বলে আবার ওপ্রান্তে তাসমিনা কাঁদতে শুরু করলো।
-কৌশিক মনে মনে বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে বললো- আচ্ছা কি বলবেন বলুন। তাড়াতাড়ি বলুন। আমি আর রাত জাগতে পারছি না।
-তাসমিনা বলতে শুরু করলো। জানেন আমার না খুব ইসসা করে এই পৃথিবীর গাছ পালা নদী নালা খাল বিল যা কিসু প্রাকৃতিক শোভা আসে তা প্রান ভরে দেখি। কিন্তু আমার এমন দুর্ভাগ্য যে সে সুযোগ আমার আসে নি। চিরদিন শাসনে থাইকতে হইসে। বাল্যকালে হোষ্টেলে থাইক্যা পড়াশুনা। সেখানে নিয়ম শৃঙখলা রাইখ্যা থাইকতে হইসে। কলকাতায় প্রেসিদেন্সিতে পইড়্যা দ্যাশে ফরসি। কিন্তু কোথাও মনের মতো মানুষ পাই নি।নূর আলিরে আমার পসন্দ হয়েসিল। কিন্তু এখন বুইজলাম আমার থাইক্যা আমার আব্বার সম্পত্তির দিকে লক্ষ্য। তখন আমার ওর প্রতি ঘৃণা হইতে লাগে।
-সে বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাকে এসব বলে লাভ কি?
-আপনারে একডা কথা কমু?
-বলেন।
-আই লাভ ইউ।
-মানে?
-মানে হলো - আমি আপনারে ভালোবাসি।
-আমাকে আপনার পছন্দ হলো কেন? তাছাড়া আমি আপনার ডাকে সাড়া দেব এটা আপনি বুঝলেন কি করে?
- মেয়েরা পুরুষ মানুষ স্যানে মশাই। কথা কইলে বুজতে পারা যায়।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি এখন ঘুমান। আমিও ঘুমাতে যাই। কাল সকালে তো আমি অফিস যেতে ব্যস্ত থাকবো। সন্ধ্যার সময় না হয় কথা হবে।
-এখনও আমাকে “আপনি” বলবা! “তুমি” বলবা না!
- আচ্ছা তুমি, হ্যা তুমি এখন ঘুমাও। কাল কথা হবে কেমন।
- আর একটু অপেক্ষা কর প্লিজ।
-কি জ্বালা, আবার কি হলো?
-রাগ করবা না প্লিজ। তোমায় একডা কিস করবা?
-কৌশিক থমকে যায়। মনে মনে ভাবে মেয়েটা পাগল নয় তো। আবার না বললে কান্না জুড়ে দেবে। তার চেয়ে ওর কথা মেনে ওর থেকে রেহাই পাওয়া ভালো। তাই কৌশিক বললো - আচ্ছা কর।
দুজনে পরষ্পরকে কিস করে রাত তিনটে তে দুজনের যোগাযোগ ছিন্ন হল।
★★★★
পরের দিন সকাল আটটার সময় ফোনের শব্দে কৌশিকের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপ্রান্ত থেকে অজানা কন্ঠ ভেসে এলো। আপনি কে বলছেন জানাবেন প্লিজ?
-আমি কৌশিক দাস বলছি?
-আপনার বাড়ি কোথায়?
-ডায়মন্ডহারবার। কিন্তু আপনি কে বলছেন জানাবেন কি?
-আমি আবুল হোসেন ভট্টাচার্য্য বলছি বাংলাদেশের বরিশাল থেকে? আপনার বাড়ি বোধ হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, তাই না?
-আজ্ঞে হ্যা। কেন বলুন তো?
-আমার মেয়ে তাসমিনা কাল বোধ হয় আপনাকে রাতে ফোন করে বিরক্ত করেছে তাই না?
- কেন বলুন তো?
- বলছি এই জন্য যে প্রেম ঘটিত ব্যাপারে তাসমিনা মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে। ও দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। অনেকটা রিকভারি করেছে। কিন্তু এখনও ও রাতে যাকে তাকে ফোন করে বিরক্ত করে। একজন অসুস্থ রোগীর কথা ভেবে ওর ঐ অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। আচ্ছা রাখি।প্রত্যুত্তরের প্রতীক্ষা না করে ফোন কেটে দিলেন।
(এই গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবে এই ঘটনার কোন অস্তিত্ব নেই। এই ঘটনার সঙ্গে কারুর মিলে যায় তা নিহাতই কাকতালীয়)
©® তারাপদ মাঝি
দেবনগর
২২/০৭/২০২০

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.