অজানা নাম্বারে ফোন এলো

-হ্যালো।
-হ্যাঁ হ্যালো।
-আমি প্রদীপ বলছি স্যার। বুঝতে পারছেন কি?
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে। যদি না বলি তাহলে কি ভাববে ভেবে বললাম- হ্যাঁ বুঝতে পারছি। কি হয়েছে তাই বলুন।
-স্যার আপনি কি অফিসে?
- না, শরীর খারাপের জন্য বাড়িতেই আছি।
-তাহলে স্যার খুব ভালো হয়েছে। একটু একান্তে কথা বলতে পারি?
-নিশ্চয়ই।
-আপনি স্যার প্রধানকে বুঝিয়ে আমার ওই দুটি বাড়ির পার্মিশন করিয়ে দিন। আমি আপনাকে ঠিক পুষিয়ে দেব। এতটাই দেব যে আপনি ভাবতেও পারবেন না। শুধু খেয়াল রাখবেন পার্থ যেন না জানতে পারে।
এইবার আমি পড়ে গেলাম ধন্ধে। আমার কাছে কোন বাড়ি নির্মানের অনুমতির জন্য কোন আবেদন পত্র জমা পড়ে নি। তাহলে এ কোন প্রদীপ? আমি কি একে চিনি? বোধ হয় না।
এদিকে অপ্রান্ত থেকে অচেনা প্রদীপবাবু বলছেন- চুপ করে থাকবেন না স্যার। আমি কথা দিচ্ছি, আপনি হোটেল দু’টি নির্মানের অনুমোদন করিয়ে দিন। আমি আপনাকে পাঁচ লাখ দেবো।
বললাম- আমি যে প্রদীপকে চিনি, আপনি বোধ হয় সেই প্রদীপ নন।
-ঠাট্টা করছেন স্যার!
-না ভাই অপরিচিত মানুষের সঙ্গে আমি ঠাট্টা করি না।
-আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো আপনি সন্তোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেক্রেটারী নন?
-না, ভাই আমি সন্তোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেক্রেটারী নই। তবে আমি দুর্গানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেক্রেটারী।
-সত্যি বলছেন?
-মিথ্যে বলে আমার লাভ কি! আচ্ছা আমাকে কি আপনার বিশ্বাস হয়?
-কেন বলুন তো?
-আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই তাই?
-হ্যাঁ, বিশ্বাস করছি। বলুন।
-আপনার বাড়ি কোথায়?
-সেটা বলা যাবে না। তাহলে আমি ফেঁসে যেতে পারি।
-আচ্ছা ঠিক আছে বলার দরকার নেই। এমনিতেই হবে। হোটেল করুন বা যাই করুন, দু’টো বাড়ি অনুমোদন নিতে চান তাই তো?
-আজ্ঞে হ্যাঁ। ঠিক তাই।
- জমির কাগজপত্র ঠিক আছে?
- আজ্ঞে ঠিক আছে।
-যে দাগে বাড়ি বানাবেন সেটি শালী জমি না বাস্তু জমি?
- আজ্ঞে আগে শালী ছিল। এখন বি এল এন্ড এল আর ও থেকে কনভারশান করিয়ে নিয়েছি।
-বাহ্ বেশ সুন্দর কাজ করেছেন। বাড়ির প্ল্যান বানিয়েছেন?
-হ্যাঁ। প্রত্যেকটির তিন কপি করে বানিয়েছি।
-বাড়িগুলি ক’তলার প্ল্যান?
-আজ্ঞে চার তলার।
-চার তলার! তাহলে তো পঞ্চায়েত আপনাকে ঐ বাড়িগুলির পারমিশন দিতে পারবেন না।
-কেন?
-পঞ্চায়েতকে দু’তলা পর্যন্ত বাড়ি নির্মানের পারমিশন দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
-তিন তলার পারমিশান দেবে পঞ্চায়েত সমিতি। আর চার তলা বা তার বেশী তল বিশিষ্ট বাড়ির পারমিশান দেবে জেলা পরিষদ। আপনি আপনার হোটেলের পারমিশান নেওয়ার জন্য আপনার জেলা অফিসে যোগাযোগ করুন। কোন তেল মালিশ না করেই পারমিশান হয়ে যাবে।
- আপনি কি ঠিক বলছেন?
-ভুল বলে আমার লাভ কি? আপনি জেলা অফিসে যোগাযোগ করলেই সব কিছু বুঝতে পারবেন।
-জেলা অফিসে কোথায় যোগাযোগ করবো?
- পূর্ত বিভাগে যোগাযোগ করবেন। ওখান থেকেই সব কিছু জানতে পারবেন। আশাকরি যোগাযোগের দুই সপ্তাহের মধ্যেই আপনার হোটেলের পারমিশান হয়ে যাবে।
- পঞ্চায়েত ঝামেলা করবে না তো?
- ঝামেলা করতেই পারে। কিন্তু আপনার কাছে বৈধ কাগজ পত্র থাকবে। তাই নিয়ে আপনি লড়বেন। সুতরাং সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
- ও প্রান্তের অজানা অচেনা প্রদীপবাবু নমস্কার জানিয়ে ফোন কাটলেন।
এই ঘটনার মাস খানিক পর অজানা প্রদীববাবুর নিকট থেকে একটি বার্তা এলো হোয়াটস অ্যাপে। তাতে তিনি লিখেছেন-”আপনার জন্য একটি গিফট্ পাঠালাম। দয়াকরে এটি গ্রহন করবেন। কারণ আপনি সঠিক পরামর্শ দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন এবং তাতে আমি খুব উপকৃত হয়েছি। আমার নাম্বারটি আপনি গচ্ছিত রাখবেন। কারণ ভবিষ্যতে আপনার পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে। আমার নমস্কার নেবেন।”
কপিরাইট@তারাপদ মাঝি
দেবনগর
১৩ই জুন,২০২১ খ্রীষ্টাব্দ

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.