?#ভূতুড়ে_পুকুর

বসেছি ফাঁকা মাঠের মাঝখানে থাকা একটি পুকুরের পাড়ে
প্রকান্ড একখানা অর্জুণ গাছের তলে ছিপ হাতে।
বক যেমন নিবিষ্ট নেত্রে চেয়ে থাকে পঙ্কে মাছের খোঁজে
তেমন করে চেয়ে আছি ছিপের ফাতনার দিকে।
আষঢ়ের শেষে খরতপ্ত রৌদ্রে ছায়াসুশীতল অর্জুণ ছায়ে
বসে বসে দখিনা মরুৎ এর আনন্দ স্পর্শ অনুভব করি।
হঠাৎ গাছে গাছে ধ্বনিত হয় ডালে ডালে পাতার মর্মরধ্বনি,
সে ধ্বনি অস্বাভাবিক, বড়ই গা-ছম্ ছম্ করা।
পুকুরের পাড় গাছে গাছে ভরা।
তাতে বাবলা খেঁজুর তাল নারিকেল যেমন আছে,
তেমনি আছে অনেক বেনুর ঝোপ একেবারে গায়ে গায়ে ঠাসা।
একি অনাসৃষ্টি!
হঠাৎ যেন মনে হল কোন এক অদৃশ্য শক্তি
সমস্ত বনবাদাড়কে ঝাঁকুনি দিয়ে গেল!
অথচ মরুতের কোন উৎপাত নেই পরিবেশে!
মধ্যাহে কি তেনাদের উৎপাত হওয়া সম্ভব?
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজের প্রতি বিরক্ত হলাম।
সবকিছু ভুলে আবার ফাতনার দিকে দৃষ্টি দিলাম।
এমন সময় শনির বাহন বিকট চিৎকার করে উড়ে এলো মাথার উপরে!
তার ডাকে হৃদয়ের কাঁপুনি যেন মুহুর্তে গেল বেড়ে।
তারপরে আরও একজন একলো।
কি জ্বালা! মাছ ধরার ষষ্টি পূজো হবে যে!
কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার নজর দিলুম ফাতনার দিকে।
ফাতনা ডুবতেই ছিপে দিলুম টান।
উঠে এলো আধ সেরী মৃগেল।
ঠিক তখনই বেনুবনে শুরু হলো বাঁশে বাঁশে ঠোকাঠুকির শব্দ!
ভেসে এলো একটানা ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দ।
যেন কেউ প্রবল আক্রোশে বেনুবন বিনষ্ট করতে চায়।
কিছুক্ষন পরে এক বনকাক বিকট শব্দ করে কোথায় যেন উড়ে চলে গেল।
এবার মনটা বড়ই বিষণ্ণ হল।
মনে হয় তেনারা চান না যে আমি এখানে থাকি।
পশ্চিমী শিক্ষার পোষাক দিয়েছি গায়ে।
তাই এসব অতি প্রাকৃতিকে সায় দেয় না মন।
দূরছাই, এ সব ভেবে লাভ নাই ভেবে আবার ফাতনায় মন দেই।
ঠিক তখনই পুকুরে উঠলো অস্বাভাবিক জল হিল্লোল।
যেন এক বিশাল কুমীর পুকুরের তলদেশ উত্তাল করে দিচ্ছে।
সেই উত্তালের কর্দমাক্ত জল পাক খেয়ে খেয়ে উপরে উঠে আসছে।
তখনই পাড়ের গাছগুলির মাথা আমার দিকে নুয়ে কিছু একটা ইশারা করছে।
আর কি বসে থাকা যায়?
লোটাকম্বল গুছিয়ে একহাঁটু কাদাজলের বাদা দিয়ে দিলুম দৌড়।
নিরাপদ দূরত্বে এসে পুকুরটির দিকে তাকাই।
দূর থেকে মনে হল সবই স্বাভাবিক।
©®তারাপদ মাঝি
দেবনগর
২০/০৭/২০২০

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.