স্বপ্ন দেখা বারণ

রুগ্ন শরীরে বাতায়ন পাশে বসে আছি।
এখন সকাল পাঁচটা।
রবির কিরণ ধরাধামে পতনের চিহ্নমাত্র নেই।
এখন সে বর্ষাসুন্দরীর সঙ্গে প্রেমালাপে মত্ত।
বর্ষাসুন্দরী রবিকে আলিঙ্গন করে অধর চুম্বনে মত্ত।
তাই তার কাজল কালো চিকুরে রবিরশ্মি আবদ্ধ হয়ে
ধরণীকে করে তুলেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন।
বাতায়ন দিয়ে দেখি
ডাহুক কাক সাতভায়া পানকৌড়ি বক বনকাক
আর শালিকের চিৎকার চেচামেচি লুকোচুরী খেলা।
দোয়েল আর ফিঙের দাপাদাপি বড় ভালো লাগে।
দুই তিন ইঞ্চির খুব ছোট ছোট নাম না জানা পাখি
ফুলের মধু খেয়ে ফুরুৎ ফুরুৎ উড়ে বেড়ায়।
খানিক পরে বর্ষাসুন্দরী তার নৃত্য শুরু করে।
তার নৃত্যে আপ্লুত হয়ে যাই চোখে লাগে মদিরার নেশা।
এমন সময় মন চলে যায় বহু অতীতে।
তখন বুঝতে পারি আমি অনেক স্বপ্ন হারিয়েছি।
বর্ষার নৃত্যে আমার সখ ছিল-নিপাট জেলে সেজে
খালে বিলে খেপলা জালে মাছ ধরে বেড়ানো।
মা বলতো- খোকা যাস নি অসুখ করবে,
বাবা বলতো-পুরুষ মানুষের এতসব মানলে চলে না।
কিছুদিন পর যখন জীবন সাথী এলো
সে বলতো-তোমার কিছু হলে আমার কি হবে বলতো!
তারও পরে যখন বড় মেয়েটির মুখে ভাষা ফুটলো
বলতো- বাবা,মাছ চাই না।
আমাদের জন্য তুমি আর শাকপাতা ডাল হলে চলবে।
মন একটু খারাপ হয়েছিল ঠিকই,
কিন্তু স্বপ্নকে ছাড়তে পারিনি।
আজ যখন ডাক্তার বললো-আপনার কিছু স্বপ্ন ভুলতে হবে।
তখন হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।
চুয়ান্নতম বর্ষায় জেলে সাজার স্বপ্ন শেষ হলো।
সাইকেল ছিল আমার প্রান।
ওর পিঠে চড়ে কোথায় না গিয়েছি।
যখনই শুনেছি অমুক বাজারে আনাজ সস্তা মাছ সস্তা
তখুনি সাইকেলের পিঠে চড়ে রওয়ানা দিয়েছি বিদ্যৎ বেগে।
তারপর যখন চাকুরী পেলাম,
ও আমায় নিমেষে নিয়ে যেত কখনো বাসস্ট্যান্ড
আবার কখনো নামখানার রেল স্টেশানে।
কিন্তু চুয়ান্নতম গ্রীস্মের দোলের আগের রাতে
যখন আমার হৃদয় আক্রান্ত হলো কঠিনভাবে
সে দিন ডাক্তার জবাব দিল সাইকেল চালানো স্বপ্ন শেষ।
আজ যখন সত্তোর্ধ বৃদ্ধকে সাইকেল চালাতে দেখি,
তখন মনে হয় হৃদয়টি ভেঙ্গে বুঝি চুরমার হয়ে যাবে।
চাকুরী করার পরে কাজের জন্য জান লড়িয়ে দিতাম।
সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই অফিস যেতাম।
অফিসে যারা অসুস্থতার অজুহাতে অফিসে আসতো না,
তখন তাদের নিয়ে ঠাট্টা করেছি বহুবার।
তবে ওরা কাজ করতো না বলে যে আমি কাজ করবো না
এমনটা হয়নি কখনো।
দু’হাতে অফিস সামলেছি সব্যসাচী হয়ে।
কিন্তু তখন বুঝি নি যে
আমাকে আখ নিঙড়ানো মেশিনে পেশাই করে
আমার সব রসটুকু নিয়ে আমাকে ছিবড়ে করা হচ্ছে!
স্বপ্ন ছিল কাজের জন্য কোন সহকারীর সাহায্য নেব না কখনো।
আজ বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাসে সে স্বপ্ন আমার ভেঙে চুরমার।
আজ আমি দয়ার পাত্র, পর নির্ভরশীল একজন কর্মচারী।
আজ আমি হীন দীন হয়ে বাতায়ন পাশে বসে।
প্রকৃতির রূপ যখন সন্ধ্যান করি,
কিংবা অতীতের স্বপ্নগুলো রোমন্থন করি,
কেউ যেন কানে কানে ফিস ফিসিয়ে বলে-
তোর সহকর্মী আব্দুল হাই আর দেবাশিষ নাই।
তোর আর কত দিন চাই?
প্রস্তুত থাক।
যম আসবে তোর দুয়ারে।
কপিরাইট@তারাপদ মাঝি
২৮ শে জুন,২০২১
দেবনগর।

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.