#ছোট_গল্প_বনাম_বড়_গল্প

,অনেকদিন কলম ধরিনি। ধরিনি কারণ কিছুটা সময়াভাবে। আর কিছুটা অভিমানে। অভিমান!!! হ্যা পাঠকবৃন্দ অভিমান। অভিমান এই জন্য যে আপনাদের হাতে সময় বড্ড কম। আবার অনেকের ধৈর্য্য কম। বড় লেখা দেখলেই স্কিপ করে যান। স্কিপ করে না গেলে উপায় নেই যে। কারণ হাতে সময় কম। আর সময় কম বলে ধৈর্য্য কম।
একটি গল্পকে সাহিত্য উপযোগী করে তোলার জন্য কিছু পারিপার্ষিক আঙ্গিকের বর্ননার প্রয়োজন হয়। আর সে আঙ্গিকের বিবরণ দিলে, তবেই গল্পটা প্রান পায়। কিন্তু আমি যদি সেই আঙ্গিকের পরিচয় দিতে না পারি, তাহলে সে গল্প হয় মৃত কাহিনী। এটাকে আমি কি করে বোঝাই বলুন তো? এটা বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ এখন আমার বেশ মাথায় আসছে। সেটি বললেই আপনাদের বোঝাতে পারবো আশা করি।
একবার আমার পঞ্চায়েতে সালিসি সভা বসেছিল। সভার বিষয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য। ব্যাপারটা খুব সামান্য। কিন্তু সেটা এমন একটি জায়গায় গিয়ে পৌচেছে যে এখন বিচ্ছেদের সীমানায় এসে ঠেকেছে। আমাদের প্রধান মহাশয় মেয়েকে প্রশ্ন করলেন- মা, তোমার অভিযোগ কি?
-আমি এ স্বামীর ঘর করব না।
- সে না হয় করবে না। কিন্তু তোমার স্বামীর অপরাধ কি সেটা বলো?
- মেয়ে চুপ করে থাকে। কোন কথা বলে না।
-প্রধান আবার বললেন-ছেলে তোমায় শারীরিক নির্যাতন অর্থাৎ মার ধর করে?
- ও মারবে কেন? ও এমন ছেলেই নয়। ওর নামে এমন দোষ যে দেয় তার মুখে আগুন।
-প্রধানের মতো আমিও অবাক। তাহলে গন্ডগোল কোথায়?
-কি গো তোমাদের মধ্যে গন্ডগোল বিবাদ কি জন্য? এবার প্রধান ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেন।
-আমি কি করে বলবো? যে অভিযোগ করেছে সে জানে। ওকেই জিজ্ঞাসা করুন।
কারুর কাছ থেকে কোন কিছু জানা গেল না। অবশেষে উপ-প্রধানকে গোয়েন্দাগিরিতে লাগিয়ে দেওয়া হলো। উপ প্রধান হলেন মহিলা। তাই উনি আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেয়েকে বুঝিয়ে তার পেট থেকে কোন গোপন কথা বের করতে পারেন কিনা তার চেষ্টা করা।
-আমাদের নির্দেশ মতো উপ প্রধান মেয়েকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চরিত্র করে দেখলেন এবং তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ার সঠিক কারণ জানতে পারলেন। এখন আমি পাঠকবৃন্দকে সেই সমস্যার কথাই জানাবো।
উপ প্রধান জানতে পারলেন যে মেয়েটি অত্যন্ত রোমান্টিক। সে দৈহিক মিলন চায় ঠিকই। কিন্তু সেই মিলনের পূর্বে সে তার স্বামীর কাছ থেকে কাঙখিত আদর সোহাগ বা রোমান্স চায়। কিন্তু ছেলেটি কিছুতেই সে স্বভাবের নয়। সে জানে না যে শুকনো জমিতে লাঙ্গল চাষ দিলে ভুমির কষ্ট হয়। কিন্তু বৃষ্টি ভেজা ধরিত্রী যেন লাঙ্গল চাষের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।
এখানে এই গল্প শেষ করছি। কিন্তু এই গল্প অবতারনার উদ্দেশ্য হলো গল্পের দৈঘ্য একটু বড় হওয়াই দরকার। লেখককে তার সৃষ্টিকে যেন কালজয়ী করার মানসিকতা নিয়ে লিখতে পারে। আগের দিনের পাঠকবৃন্দ রবীন্দ্রনাথ বা শরৎবাবুকে সেই সুযোগ দিয়েছিলেন বলেই ‘দেনা পাওনা’ বা ‘মহেশ’ এর মতো কালজয়ী ছোট গল্পের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে।
এখনকার পাঠক আগের দিনের মতো অতটা সহিষ্ণু নয়। তার কারণ হলো সমাজ অত্যন্ত গতিশীল হওয়া। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থিরিকৃত লক্ষ্যের দিকে ধাওয়া করতে গিয়ে রোমান্টিক হওয়ার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছেন। এখন মানসিকতা হলো ‘ধর তক্তা মার পিরেক’এর মতো। কোন গল্প বড় দেখলেই কাহিনীর শুরুটা পড়েন এবং তারপর গল্পের শেষটা পড়ে কাহিনী বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে গল্পের ভিতরের রসটা আর আস্বাদন করা হয়ে ওঠে না।
তাহলে সমস্যার সমাধান কি? খুব সহজ সমাধান। পৃথিবী যেমন চলে, সমাজের সকল মানুষ যেমনটা চায়, তেমন করে লিখে যাওয়া। আর মাঝে মাঝে নিজের পছন্দ মতো দু’ চারটা বড় গল্প লেখা যাতে নিজে অন্তত তৃপ্তি লাভ করতে পারি। এর সঙ্গে যদি দু’চার জন পাঠক পাওয়া যায়, তাহলে তাকে এক্সট্রা বেনিফিট হিসাবে ধরে নিয়ে উৎফুল্ল হওয়া যাবে। অর্থাৎ যখন যেমন, তখন তেমন।
আমার সঙ্গে যদি পাঠকবৃন্দ সহমত পোষণ করে থাকেন, তাহলে লাইক দেবেন। আর যদি সহমত না হন, তাহলে মন্তব্য করে জানাবেন। আপনাদের অপেক্ষায় রইলাম।
কপিরাইট@তারাপদ মাঝি
দেবনগর
১১ই অক্টোবর, ২০২০।

1 টি মন্তব্য:

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.