#আট_ভূতের_পাল্লায়

সন্ধ্যেবেলা পঞ্চানন খুড়ো পাটের দড়ি কাটছিলেন। পাটের একপ্রান্ত খড়ের চালের বাঁশে বাঁধা আর অন্য প্রান্ত ঝুলে আছে ভুমি থেকে মাত্র ফুট খানিক উপরে। তারপর কুশলী হাতে ঢ্যারা দিয়ে খুড়ো পাট কেটে চলেছেন। এই পাট থেকে জালের কাছি বা গরু বাঁধার দড়ি বা অন্য কিছু কাজেও লাগতে পারে।
আমার কথা শুনে বুঝতে পারছেন যে এই ঘটনাটি অনেক বছর আগে। সে প্রায় আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে। তখন প্লাস্টিক দড়ি বা প্লাসটিক সুতো ভারতে প্রচলন হয় নি। ফলে ভরসা সেই জৈব তন্তু পাটের দড়ি এবং তুলোর সুতো। তা সে যাই হোক আজকের আমি এসেছি ভূতের গল্প শুনতে। একেবারে সত্যি ভূতের গল্প।
আমার গল্প শোনার ইচ্ছে’ শুনে পঞ্চানন খুড়ো মুচকি হেসে বললে- গল্প শুনতে হলে একটু কষ্ট করতে হবে যে।
বললাম- কিশের কষ্ট শুনি?
-কষ্ট তেমন কিছু না। ঐ একটু হুঁকোর কল্কেতে তামাক সাজিয়ে আনতে হবে।হুঁকো খেতে খেতে জমিয়ে গল্প করতে বেশ ভালো লাগে।
- আমি কথা না বাড়িয়ে হুঁকো নিয়ে তামাক সাজাতে গেলাম। খুড়োর তামাকের হাঁড়ি থেকে এক ছিলিমের মতো তামাক নিয়ে বাড়ির উঠানে রাখা বেনিয়া থেকে কল্কেতে খড়ের আগুন দিলাম। এবার কল্কের তামাকে আগুন ধরানোর জন্য হুঁকোর নলে কল্কে লাগিয়ে বেশ কয়েকটা টান দিতেই হুঁকোর তামাকে আগুন ধরে ধোঁয়া বের হতে লাগলো। এবার হুঁকোটি পঞ্চানন খুড়োকে দিলাম। খুড়ো পাট কাটা বন্ধ করে হুঁকো নিয়ে চোখ বন্ধ করে হুঁকোয় টান দিতে লাগলেন।
বেশ কয়েকটা টান দিয়ে খুড়ো বললে- একবার বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষে অনিলবাবুর মেলায় যাত্রা শুনতে যাচ্ছিলাম। মেলায় যাত্রা হলেও যাত্রা করাবে কিন্তু ফড়েদের দল। ফলে যাত্রা কখনও সাঁঝবেলায় হয় না। যাত্রা হতে সেই রাত বারটার পর। ফলে তাড়াতাড়ি যাত্রায় যাওয়ার তাড়া নেই। বাড়িতে কবজি ডুবিয়ে দুধভাত খেয়ে রাত এগারটার সময় বেরিয়ে পড়লাম যাত্রা দেখার উদ্দেশ্যে।
আমি একা। পাড়ায় আর কাউকে পেলাম না। সবাই কি জানি আগেই যাত্রায় পালিয়েছে। মনে হয় কলকাতার পার্টি বলে আগে বসার জন্য আগেই পালিয়েছে। তাহলে কি আমার যাওয়া হবে না! আমি হার মানলাম না। যে করেই হোক যাত্রায় যেতেই হবে। কলকাতার যাত্রাপালা বলে কথা! ভাবলাম কিছুটা এগিয়ে গেলে কাউকে না কাউকে সাথে পেয়ে যাবো। এই ভেবে খুব তাড়াতাড়ি পা বাড়ালাম।
আমার বাড়ি থেকে মেলার দূরত্ব প্রায় মাইল দু’য়েক হবে। আমি দ্রুত হেটে কিছুটা আসার পর একজনকে দেখতে পেলাম। অন্ধকারে ঠিক ঠাওর(বুঝতে) করতে পারি না। আমার হাতেও লাইট নেই আবার উনার হাতেও লাইট নেই।ফলে আমাকে জিজ্ঞাসা করতেই হলো। বললুম- কে যায় গো? কিন্তু কোন জবাব পেলাম না। এবার জিজ্ঞাসা করলাম- তুমি কি মেলায় যাবে গা? এবার শুধু জবাব এলো-হুঁম। আমার উৎকন্ঠা গেল। এবার আমি মূর্তিটাকে ধরার জন্য দ্রুত হেঁটে চললাম। কিন্তু যত দ্রুত হাঁটি না কেন আমার আর ওর মধ্যে দুরত্ব সেই একই থাকে। এবার আমি ভয় পেলাম। এটা অশরীরি আত্মা নয় তো! আমি তো প্রায় দৌড়াতে শুরু করেছি। তা সত্বেও দু’জনের মধ্যেকার দূরত্ব কমাতে পারছি না!!!
এবার আমি বুঝতে পারলাম যে আমি ভূতের পাল্লায় পড়েছি। আমার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। মাথা যেন ঝিম ঝিম করতে লাগলো। কিন্তু পাশাপাশি কোন বাড়িও নেই যে আশ্রয় নেব। আমি কিন্তু হাঁটা বন্ধ করিনি। কারণ হাঁটা বন্ধ করলে আমার বিপদ হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম যতক্ষন পর্যন্ত কোন বাড়ি পাচ্ছি বা মেলায় পৌচোচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটা বন্ধ করা যাবে না।চারিদিকে কেমন যেন একটা থমথমে পরিবেশ। এমন সময় তালগাছ থেকে কয়েকটা পেঁচা কর্কশস্বরে ডেকে উঠলো। একটি গাছ থেকে নাম না জানা পাখি বিকট একখানি শব্দ করে উড়ে গেল। এমন সময় কয়েকটা দৈত্যাকৃতি শকুন মাথার উপর দিয়ে উড়ে এসে পাশের জমিতে বসে চিৎকার চেঁচামেঁচি জুড়ে দিল। এবার আমি ঘামের জলে চান করে ফেললাম।
খানিকক্ষন পরে কতকগুলি কুকুর তার স্বরে চিৎকার করে উঠতেই মূর্তিটা দাঁড়িয়ে গেল। তারপর দেখলাম মূর্তিটা যেন আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। আমি অবাক বিস্ময়ে ও ভয়ে সেই মূর্তির দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর মূর্তিটি এক বিশাল আকার ধারণ করলো। তার একটি পা মাটিতে এবং আর একটি পা বেশ কিছুটা দূরে থাকা অশ্বত্থ গাছের উপরে। এই দৃশ্য দেখে আমি তৎক্ষনাৎ জ্ঞান হারালাম এবং মাটির উপর পড়ে গেলাম।
জ্ঞান যখন ফিরলো, তখন দেখি আমি মনি বেরার বাড়িতে শুয়ে আছি। মনি বেরার বাবা কন্দর্প বেরা একজন পাকা গুনিন। তিনি আমাকে ঝাড়ফুক দিয়ে কি করলে জানি না, তবে খানিক্ষন পরে আমি স্বাভাবিক হতে পারলাম এবং কি ঘটেছিল সমুহ ঘটনাও বলেছিলাম। সব শুনে গুনিন কন্দর্প বেরা বলেছিল- খুব জোর বেঁচে গেছে। ছেলের রাশি জব্বর ছিল বলে ওই আটভূত কিছু
ক্ষতি করতে পারে নি। তা নইলে ওর জীবন রক্ষা করা কঠিন হতো। যাক একখানা মাধূলী দিলাম।আর ভূত প্রেতের ভয় থাকবে না।
পরে শুনেছিলাম যে ওইদিন আমি শ্মশানের উপর শুয়েছিলাম। কলকাতার পার্টি আসে নি বলে সবাই ফিরার পথে আমাকে দেখতে পায় এবং বাড়িতে তুলে আনে।
মনে মনে ভাবলাম সত্যি খুড়ো এ রকম বিপদে পড়েছিল, না খুঁড়ো মিছি মিছি বানিয়ে বললে। কিন্তু কোন প্রতিবাদ করলাম না। প্রতিবাদ করলে সত্যি হোক বা মিথ্যা হোক, গল্প শোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। অগত্যা চুপ করেই রইলাম।
( এই গল্পটি একেবারে কাল্পনিক। গল্পের কোন চরিত্র বাস্তবে নেই। যদি এই গল্পের কোন চরিত্র বাস্তবে থাকে তবে সম্পুর্ন রুপে অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়)
কপিরাইট@ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন
৭ই এপ্রিল,২০২০
নামখানা

1 টি মন্তব্য:

  1. Slots casino site
    Live Blackjack table: Blackjack table: Poker table at the casinos with luckyclub.live live dealers. Blackjack tables are available for a wide range of casino games. Our  Rating: 5 · ‎1 vote

    উত্তরমুছুন

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.