#বিধাতার_খেলা

হৃদয় বড়ই ব্যাকুল।
বিধাতার কৃপণ কল্যানে উপহার পেল দু’টি সন্তান,
কিন্তু দু’টিই কন্যা সন্তান!
নিষ্ঠুর নির্দয় বিধাতা তুমি,
অবিবেচক কঠিন কঠোর হৃদয় তোমার,
পুত্র সন্তানের সকরুণ আকুতি কি
প্রবেশ করে নি তোমার কর্ণকুহরে?
কেঁদে কেঁদে কাজলের রক্তবর্ণসম আঁখি!
ওদিকে কমলের অবস্থাও নয় ভালো।
দুই কন্যা দ্বারা বংশ রক্ষা হবে কিভাবে?
মৃত্যুর পরে পিন্ডদান দিয়ে উদ্ধার করবে কে?
কে দেবে স্বর্গের বাতি?
অসুস্থ হলে কে হবে ‘অন্ধের যষ্টি’?
বৃদ্ধ বয়সে কে দেবে জীবনদায়ী সুধা?
কে দেবে অন্তিম যাত্রার মুখাগ্নি?
আপন শিরে হাত রেখে কমল ভাবে আর ফেলে দীর্ঘশ্বাস।
জমিজমা নেই কমলের।
গতরে খেটে ছ’টি পেট চালায় সে।
তারপরে পোষাক পরিচ্ছদ চিকিৎসা তো আছেই।
কাঁধে কাঁধ দেবার মতো উত্তরসুরি না পেলে
সংসারে বাঁচার আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়।
যত কষ্ট হোক আবার চালাবে সংগ্রাম।
জীবন বাঁচাতে জীবন উৎপন্নের কঠিন সংগ্রাম।
তবে এবার আর এলোপাথাড়ী চাষ নয়।।
এবার কমল চাষ করলো কার্তিক আর ষষ্টীকে মানত করে,
ঋতুস্নান সমাপ্ত করে কাজল মানত করে মা মনসা আর শীতলার কাছে।
সকালে স্নান করে উপোসী শাশুড়ী গেল পাঁচুগোপালের থানে,
সকলের একমাত্র আকুল প্রর্থণা -পুত্র সন্তান চাই।
কাজল জ্যোতিষের কাছে গিয়ে হাত গনালো,
মনসার মন্দিরে গিয়ে মুদো দিয়ে জানলো,
আষাঢ়ের রথে কাঁচা কলা দিয়ে পরখ করলো,
দাসেদের গৌরাঙ্গ উৎসবে গৌরাঙ্গ কোলে নিলো,
সর্বত্র একই উত্তর এলো -”এবার পুত্র সন্তান হবেই”।
এলো সেই দিন।
চৈত্রের বজ্রপাতে পরিপূর্ণ মধ্যরাতে
রান্না ঘরের কর্দমাক্ত মাটির মেঝেতে শায়িত নিশ্চল কাজল।
আর তার পাশে অবাক বিস্ময়ের এক সদ্যোজাত শিশু।
পরিবারে আনন্দ নেই, উল্লাস নেই।
শঙখধ্বনি নেই, কারুর কোন ব্যস্ততা নেই।
শিশুটি মিটি মিটি আঁখিতে এদিক ওদিক দেখে,
কিন্তু তাকে কোলে নেবার কেউ নেই,
কারণ নবজাতক যে একটি কন্যা সন্তান।
যতই পুত্র কন্যাকে সমান ভাবি না কেন-
পুত্রের জন্য হৃদয়ের কোথাও একটু বেশী জায়গা কি নেই?
কিংবা একটু বেশী নির্ভরতা?
হৃদয়ে হাত রেখে বলুন তো হৃদয়ের সত্যি কথা।
কপিরাইট@তারাপদ মাঝি
৩০শে অক্টোবর,২০২০
দেবনগর।

কোন মন্তব্য নেই

গল্প বা কবিতা কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না

Blogger দ্বারা পরিচালিত.